তিন বছরেও গ্রেপ্তার হয়নি সাংবাদিক হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিরা

প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০২০, ১৭:৫২

রাবি প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

দ্য ডেইলি স্টারের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আরাফাত রহমানকে হত্যাচেষ্টা মামলার তিন বছর পরও গ্রেপ্তার হয়নি আসামিরা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আরাফাতসহ তার সহকর্মীরা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে আরাফাত বলেন, ‘বর্তমান দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিদ্যমান। আমার ওপর যেটা হয়েছিল আমি সুষ্ঠু বিচারের আশায় মামলা করেছিলাম। আমি তো বিচার পাইনি। এরই মধ্যে আরও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েছে। তারাও কোন বিচার পান নি। আমি চাই শুধু আমার নয়, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে বা যারা এধরনের নিপীড়নের শিকার হয়েছে তাদের সবাই যেন সুষ্ঠু বিচার পায়।

তবে পুলিশ বলছে, ঘটনা তদন্ত করে চার আসামির সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হওয়ায় তাদের নাম উল্লেখ করে এক বছর আগে আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তাকে (জিআরও) অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। এখন আদালতে বিচার কাজ শুরু হবে।

২০১৭ সালের ১০ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে দেশ ট্রাভেলসের বাস ভাঙচুরের ছবি তোলায় ডেইলি স্টারের বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক আরাফাতের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় ওই রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চারজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও দশজনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার মামলা করেন আরাফাত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেও একটি লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।

আসামি চারজন হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি আহমেদ সজীব, আইন বিষয়ক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বিজয়, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান কানন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান লাবন।

ওই রাতেই সাইফুল ইসলাম বিজয় ও মাহমুদুর রহমান কাননকে ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের‘ কারণে সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। কিন্তু পরে সেই বছরের নভেম্বরে কাননের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এর পরের বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বিজয়ের বহিষ্কারাদেশও তুলে নেওয়া হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও মতিহার থানার উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শাহাবুল ইসলাম জানান, তদন্তে হামলার ঘটনায় আসামি আহমেদ সজীব, সাইফুল ইসলাম বিজয়, মাহমুদুর রহমান কানন এবং হাসান লাবনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই তাদের নামে গত বছরের ১৮ অক্টোবর অভিযোগ দাখিল করে জিআরও'কে পাঠানো হয়েছে। এখন আদালত বিষয়টি দেখবে।

রাজশাহী আদালতের মতিহার থানার জিআরও রাজ্জাক বলেন, 'এটা অনেক পুরোনো মামলা, আমাদের কাছে এখন ওই মামলার কোন খোঁজ নেই।'

মামলাটির বিষয়ে জানতে রাজশাহীর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে খোঁজ নিতে বলেন তিনি।

রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, 'এটা অনেক দিন আগের মামলা। খুঁজে দেখতে হবে। বর্তমানে করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চাইলেই তাৎক্ষণিকভাবে কোন কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।' আগামী সপ্তাহে বিষয়টির খোঁজ-খবর নিবেন বলে জানান তিনি।

লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) ও প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি প্রক্টর হওয়ার আগের ঘটনা। আমি আসার পর ওই লিখিত অভিযোগের কোনো অ্যাভিডেন্স আমার কাছে আসেনি। যার কারণে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারিনি। এর আগেও একবার এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানানো হলেও কোনো লিখিত অভিযোগ আমি পায়নি।’

প্রক্টর আরও বলেন, ‘আবারও এ বিষয়ে আমার কাছে ডকুমেন্ট দেওয়া হলে মতিহার থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে সহজেই অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে পারব।’

এদিকে তিন বছরেও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষুব্ধ আরাফাতের সহকর্মীরাও।

বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলম বলেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আরাফাতের ওপর হামলা চালায়। প্রতিবছর এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন সাংবাদিক সংগঠন একসঙ্গে হামলার প্রতিবাদে কর্মসূচি পালন করে আমরা চাই এ ঘটনার দ্রুত বিচার কাজ শুরু হোক।’

ঢাকাটাইমস/১০জুলাই/পিএল