বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জে আবারও বন্যা

প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০২০, ১৮:১৪ | আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০, ১৮:১৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, সুনামগঞ্জ

বন্যার ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই আবারও সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলায় টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে প্লাবিত হচ্ছে জেলার নতুন নতুন এলাকা।

এদিকে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত করা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র।

শুক্রবার দুপুরে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তীর উপচে শহরের কয়েকটি এলাকায় প্রবেশ করেছে। 

জানা যায়, গত সপ্তাহে জেলার ১১টি উপজেলায় বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদী ও হাওরের পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলার সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারা বাজার ৫টি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন।

এদিকে, তাহিরপুর উপজেলার কয়েক শতাধিক গ্রামের মানুষ নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর সড়কে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নবীনগর, বড়পাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী ও কালীপুর এলাকায় সুরমা নদীর তীর উপচে ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকায় কিছু কিছু মানুষের ঘরেও পানি প্রবেশ করেছে। 

আরও জানা যায়, গত সপ্তাহের বন্যায় জেলায় খামারিদের ৩ হাজার পুকুরের ২২ কোটি টাকার মাছ ভেসে যায় বানের পানিতে। ৩০০ কোটি টাকার সড়ক অবকাঠামোর ক্ষতি হয় এবং ৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমির আউশ ধান ও বীজতলা পানিতে ডুবে নষ্ট হয়। এছাড়া হাওর এলাকার অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। 

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত দুদিন থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। একইভাবে বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে। সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা ১৮৩ মিলিমিটার।

বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি সমতলের ৭.৪৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে এবং বিপদ সীমার ৩৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ১৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। 

অন্যদিকে জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা পয়েন্টে যাদুকাটার নদীর পানি ৭.৭৮ সেন্টিমিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। যাদুকাটা নদীর পানি বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে।

আলামিন, শফিক, আলীনূর মিয়াসহ জেলার হাওরাঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, আমরা হাওরাঞ্চলে বাসিন্দারা প্রকৃতির কাছে বড় অসহায়। প্রতি বছরেই প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয় আমাদের। হাওরপাড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জায়গা নেই। গত সপ্তাহে বন্যা হয়েছে, আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। এখন কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেবে এই নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সরকারি সহায়তাও পাইনি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান জানান, সুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে নদ-নদীর পানি, হাওরে পানি আবারও বিপদ সীমা অতিক্রম করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত অব্যাহত আছে। আগামী ৩/৪ দিন জেলায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে, তাই সুনামগঞ্জে আবারও বন্যার পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/১০জুলাই/এলএ)