পঙ্গুতে সাংবাদিক, আসামিদের হুমকিতে গ্রামছাড়া দশ পরিবার

প্রকাশ | ১০ জুলাই ২০২০, ২১:২৪

কুমিল্লা প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

‘দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। আমার চার হাত-পা অকেজো, শরীরে যে পরিমাণ ব্যথা-যন্ত্রণা তা থেকে মরে যাওয়াই ভালো ছিল’ মুঠোফোনে শুধু এতটুকু বলতে পারলেন কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল আলম চৌধুরী। তিনি রাজধানী ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুর্নবাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হসপাতাল) ভর্তি রয়েছেন।

অন্যদিকে জামিন নিয়ে এসে এলাকায় উল্লাস করছেন হামলাকারীরা। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। সাংবাদিক শরিফুলের উপর হামলার আগে গত ৩০ জুন মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি কুদ্দুছ মিয়ার উপরও শাহজাহান চেয়ারম্যানের লোকজন হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে।

হামলার ঘটনায় থানায় কুদ্দুছ মিয়া মামলা করেন। এরপর সাংবাদিক শরিফুল ও তার পরিবারের উপর হামলায় গ্রেপ্তারের পর আদালত থেকে জামিন নিয়ে এসে অভিযোগকারী পরিবারগুলোকে হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে আতঙ্কে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কুদ্দুস মিয়া, ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিজান ও একই গ্রামের সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিনসহ কাজিয়াতলে গ্রাম ছাড়া দশ পরিবার।

গত ৪ জুলাই দিনে দুপুরে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দারোরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান ও তার বাহিনীর সদস্যরা কাজিয়াতল গ্রামে শরিফুলের ঘরে ঢুকে কুপিয়ে, পিটিয়ে তার হাত-পা ভেঙে দেয়। তার কোমরসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেয়া হয়। এ ঘটনায় শাজাহান চেয়ারম্যানসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন শরিফুলের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন চৌধুরী।

শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ শাহজাহান চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন রবিবার কুমিল্লা মুরাদনগর ভার্চুয়াল কোর্টে তিনি জামিন পান। এরপর গত মঙ্গলবার একই আদালতে মামলার আরো চারজন আসামি জামিন পায়। মামলার দুই আসামি এখন কারাগারে রয়েছেন।

শরিফুলের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন চৌধুরী বলেন, আমার ছেলেকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তারা আমার ডান হাতে কোপ দেন এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন। তার মায়ের বাম হাত হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে ফেলে। শরিফুলের মাথায় কোপ দেয়া হয় এবং হাত-পা সব ভেঙে ফেলে। এখন আমার ছেলে পঙ্গু হওয়ার দশা আর মামলার আসামিরা একে একে প্রায় সবাই জামিনে বেরিয়ে এলাকায় উল্লাস প্রকাশ করছে।

দারোরা ইউনিয়নের যুবলীগের সভাপতি কুদ্দুছ মিয়া বলেন, গত ৩০ জুন শাহজাহান চেয়ারম্যানের লোকজন আমাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেন। হাসপাতলে চিকিৎসা নিয়ে থানায় মামলা করি। পুলিশ তাদেরকে গ্রেপ্তার করেনি। সাংবাদিক শরিফুলের উপর হামলার ঘটনায় তার বাবার করা মামলায় চেয়ারম্যান শাহজাহান ও তার লোকজন গত মঙ্গলবার জামিন নিয়ে আসেন কোর্ট থেকে।

তিনি বলেন, এখন আমিও আমার ভাইসহ এই গ্রামের দশ পরিবারের লোকজন গ্রাম ছাড়া। আমাদের অপরাধ শাহজাহান চেয়ারম্যানের নানা অনিয়ম দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়া। আর শরিফুলের অপরাধ তিনি দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে লেখালেখি করেছেন। এছাড়া দারোরা ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মিজান এবং একই গ্রামের সাংবাদিক গিয়াস উদ্দিনও গ্রাম ছাড়া।

অভিযুক্ত দারোরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহজাহান বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকবেই।

মুরাদনগর থানার সার্কেল ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সাংবাদিক শরিফুলের উপর হামলার ঘটনায় চেয়ারম্যান শাহজাহানসহ মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারাগারে পাঠানোর জন্য আদালতে পাঠানো হলে আসামিরা জামিন পেয়ে আমাদের কিছু করার থাকে না। আসামিদের হুমকিতে দশ পরিবার গ্রাম ছাড়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

(ঢাকাটাইমস/১০জুলাই/কেএম)