নদ-নদীতে বাড়ছে পানি, তিন জেলায় ফের বন্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ জুলাই ২০২০, ০৭:২৭ | প্রকাশিত : ১১ জুলাই ২০২০, ০৭:২৫
ফাইল ছবি

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে দেশের তিন জেলায় ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। জেলাগুলো হলো সিলেট, সুনামগঞ্জ ও লালমনিরহাট।

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, তিস্তা, ধরলা অববাহিকার নদীসমূহের পানি বাড়তে থাকায় বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শুক্রবার এসব জেলার নদ-নদীতে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে নতুন এলাকা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের আরও কিছু জেলা বন্যাকবলিত হতে পারে।

২৭ জুন থেকে চলা বন্যার এখনও বেশকিছু জেলার নিম্নাঞ্চলে পানি জমে আছে। নদ-নদীগুলোও পানিতে ভরপুর। এ অবস্থায় নতুন পানি দ্রুতই বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছেন বন্যা বিশেষজ্ঞরা।

বন্যার পানিতে মাঠ ও গোচারণ ভূমির ঘাস মরে যাওয়ায় গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন কৃষিজীবীরা। বানভাসিরাও অন্তহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। আমনের বীজতলা আবারও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কৃষক দিশেহারা। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক বর্গাচাষিরা চড়া সুদে আনা দাদন ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধের চিন্তায় চোখে সর্ষেফুল দেখছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

সুনামগঞ্জ: গত মাসে এক দফা বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই সুনামগঞ্জ জেলায় ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে নতুন করে বন্যায় ডুবছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। একদিকে চলমান করোনা পরিস্থিতি অন্যদিকে বন্যা বিপদ বাড়িয়ে দিয়েছে ১১ উপজেলার অসহায় হাজারো মানুষের।

জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ জানান, বন্যাকবলিতদের অনেকে ঘর পরিষ্কারও করতে পারেনি। আবার সুরমা নদীর পানি শুক্রবার দুপুর ১২টায় ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উজানেও বৃষ্টি অব্যাহত আছে।

বন্যার পানিতে ছাতক উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। সুরমা, চেলা, ইছামতি নদীর পানি উপজেলার সব হাওর ও খালবিলে পানি দ্রুত বৃদ্ধির ফলে এ অঞ্চলে আবারও বড় রকমের বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার, চেলা ও ইছামতির পানি ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

লালমনিরহাট: উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি আবারও বাড়ছে। শুক্রবার সকালে লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়ে বিকেল ৩টায় ১৫ সেন্টিমিটারে দাঁড়িয়েছে। ফলে লালমনিরহাটের আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও সদর উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করছে।

সিলেট: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণে সিলেটে সবকটি নদনদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নিম্নাঞ্চলে আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। নগরীর সুরমা নদীর তীরবর্তী বাসাবাড়ি ও নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। নতুন করে জেলায় বন্যা পরিস্থিতিতে হাওরাঞ্চলের ফসলি জমি আরেক দফা তলিয়ে গেছে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকাল ৩টায় সুরমা নদীর পানি সিলেটে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিন সকাল ৯টায় সিলেট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। মাত্র ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে পানি ৫৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পায়। গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত ৪৫ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়।

এদিকে গতকাল বিকেলে কুশিয়ারা নদী ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে এই পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া শুরু করে বলে জানায় পাউবো।

সিলেটের গোয়াইনঘাটে আবারও বন্যা দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেয়ে মানুষের বসতবাড়িসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বসতবাড়িতে পানি ওঠায় পানিবন্দি হয়ে অনেকেই তাদের গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। বসতবাড়ির পাশাপাশি অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কের উপর দিয়ে কোথাও কোথাও দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতায় পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লবিত হয়ে যায়। ফলে সারী-গোয়াইনঘাট ও রাধানগর-গোয়াইনঘাট এবং সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে উপজেলা সদরের সঙ্গে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। একই সঙ্গে ডাউকি নদীর প্রবল স্রোতে নদীর তীরবর্তী এলাকার কয়েক জায়গায় ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে উপজেলার সারী ও ডাউকি নদীর পানি।

পাহাড়ে বৃষ্টিপাত হলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় মানুষের জানমাল রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্লাবিত এলাকার ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এদিকে, আকস্মিক বন্যায় জাফলং ও বিছনাকান্দি কোয়ারি সংশ্নিষ্ট কয়েক সহস্রাধিক পাথর ও বালু শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুস সাকিব বলেন, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে গেছে। বন্যায় জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি পানিবন্দি মানুষের জন্য জরুরি ত্রাণ সহায়তা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/এমআর

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

জিম্মি নাবিকদের মুক্তির আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডিএনসিসি কার্যালয় সরানোর মধ্য দিয়ে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু 

বিএসএমএমইউ উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন দীন মোহাম্মদ, বললেন ‘কোনো অন্যায় আবদার শুনব না’

সাত বিভাগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে

বাংলাদেশে মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে সমর্থন অব্যাহত থাকবে: যুক্তরাষ্ট্র

সীমান্তে নিহত দুই বাংলাদেশির লাশ ফেরত দিলো বিএসএফ

ট্রেনে ঈদযাত্রা: পঞ্চম দিনের মতো অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু

৫০ হাজার টন ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :