মহাত্মার আত্মাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না রহস্যঘেরা নেপথ্যচারীরা!

আলম রায়হান
| আপডেট : ১২ জুলাই ২০২০, ০৯:৩১ | প্রকাশিত : ১১ জুলাই ২০২০, ২৩:০৯

একদা অশান্ত শহর বরিশাল গত বেশ কয়েক বছর ধরে দৃশ্যত শান্ত জনপদ। পাড়ায়-পাড়ায় হানাহানি-মারামারি এখন সুদূর অতীত। তখন কেবল মারামারি নয়, রামদা দিয়ে কোপাকোপি প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা ছিলো। প্রাচীনকালের যুদ্ধ ময়দানের মতো। রাজনীতি ছিলো চরম সংঘাতময়। বরিশালে সেসময়কার ঘোলাটে রাজনীতির নেপথ্যে বাংলাদেশবিরোধী ৭৫-এর থিংক ট্যাংকের কারসাজি কাজ করেছে। এ অভিমত অভিজ্ঞ মহলের।

বরিশালের আইন-শৃঙ্খলার উদ্বেগজনক অবস্থা এবং রাজনীতির সেই ঘোলাটে পরিস্থিতির সঙ্গে আজকের পরিস্থিতি মেলানো যাবে না। মেট্রেপলিটন এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নীরবে ‘টাইট’ দেবার যে কাজ বিএমপি কমিশনার থাকা এসএম রুহুল আমিন করে গেছেন তা তঁর উত্তরসূরীরা আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়েছেন। ফলে ফুলের নামের এক সময়ে শহরের বড় গুন্ডা সাত ভাই চম্পা হয়েও নিজ মহল্লার আশেপাশে কেবল উঁকি-ঝুঁকির মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছে অপকর্মের সীমানা। পুলিশ এতোই তৎপর। সঙ্গে আছে র‌্যাবও।

এদিকে বিএমপির বর্তমান কমিশনার শাহাবউদ্দিন খান র‌্যাবের সিও ছিলেন। সে সময়কার তার ‘বিশেষ দক্ষতার’ নানান কাহিনি শুরুতেই সন্ত্রাসীদের বুকে ভয়ের সঞ্চার করেছেন। শহরের সন্ত্রাসীদের অতি সাহসের বেলুন ফুটা হয়ে গেছে। করোনা মহামারির ছোবল জেঁকে বসার আগ পর্যন্ত মাসে চারবার থানাভিত্তিক ওপেন হাউজ ডে নগর পুলিশকেও অনেকখানি শৃঙ্খলার মধ্যে এনেছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে কোথায় যেনো গভীর খেলা চলছে। নেপথ্যে রয়েছে নেপথ্যচারীরা!

রাজনীতির পানি ঘোলাটে করার চিরায়াত অপশক্তি সম্ভবত আবার সক্রিয় হয়েছে। তবে ভিন্ন কৌশলে। যে কৌশল খুবই ভয়ঙ্কর ও সুদূর প্রসারী। পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, ৭৫-এর থিংক ট্যাংক আগে বাহির থেকে খেলতো। এ খেলা চিহ্নিত হয়ে গেছে। সম্ভবত এ কারণেই খেলার জন্য ভেতরে প্রবেশ করেছে। আর এ জন্য বেছে নিয়েছে সুশীল সমাজের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশকে। যদিও সুশীল বলে আসলে কিছু নেই। এ ব্যবস্থায় অনেকেই অনুুচিত ব্যঙ্গ করে সুশীলের এব্রিবিয়েশন করেন, ‘সু’ মানে ভালো এবং ‘শীল’ মানে নাপিত। ঠোঁটকাটাদের বক্তব্য অনুসারে সুশীল অর্থ দাঁড়াচ্ছে- ভালো নাপিত! আমি এ ধারনার বিপক্ষে। যেমন ৭৫-এর থিংকট্যাংক-এর বিপক্ষে।

আমি নিশ্চিত, আমার পক্ষ-বিপক্ষে মোটেই কিছু আসে-যায় না। তবু পেশাগত ও বিবেকের তাড়নায় ৭৫-এর থিংকট্যাংক প্রসঙ্গে বারবার বলি। একই রকম বিবেকের তাড়নায় শনিবার, ১১ জুলাই প্রিয় বরিশাল শহরের চিরচেনা সদর রোডের মহাত্মা অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়েছিলাম অন্যদের সঙ্গে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে এই মানববন্ধনে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকাকালে হঠাৎ মনে পড়লো, এরকম ঘটনা আমার ৬১ বছরের জীবনে এই প্রথম।

ছাত্র জীবনের রাজনীতিতে রাস্তায় ব্যানার নিয়ে দাঁড়ানো তো দূরের কথা, প্লাকার্ড হাতেও দাঁড়াবার সুযোগ পাইনি। মিছিল করেছি ক্যাম্পাসে। রাস্তায় মিছিল করেছি কখনো-কদাচিৎ। তাও ঝটিকা। আর সাংবাদিক হিসেবে যৌবনে ইউনিয়ন করলেও কখানো রাস্তায় দাঁড়াইনি। কারণ আমি মনে করি, কেবল মনে করা নয়, মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, সাংবাদিকের কাজ লেখা এবং প্রচার করা। আদমজী জুট মিলের শ্রমিকের মতো রাস্তায় নামা সাংবাদিকের কাজ নয়। সেই আমি আজ রাস্তায় নামলাম করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক ও আশঙ্কা উপেক্ষা করে।

এর কারণ অসংখ্য মানুষের মতো আমার কাছেও অমৃত শব্দ, ‘বরিশাল!’ আমাদের সময় বরিশাল শহরে ছেলেদের জন্য তিনটি কলেজ ছিলো। এই তিনটির সঙ্গে আমার স্মৃতি আছে। কিন্তু বরিশাল কলেজ আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও প্রিয় মনে হয় কখনো কখনো। এমনও হতে পারে বরিশাল কলেজ আমার কাছে একমাত্র প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কারণ এই নয়, এটি আমার দেখা সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর কারণ এই প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে ‘বরিশাল’ শব্দটি জড়িত। ফলে এই নাম যখন পরিবর্তনের ধুয়া তোলা হয় তখন স্থির থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আর আমার স্বভাবের সঙ্গে এক রকমের অস্থিরতা আছে বলে ঘনিষ্টজনরা বলে থাকেন।

বরিশালে অল্প কয়েকজনের একটি গ্রুপ আছে। এরা সুশীল হিসেবে নিজেদের নানান সময় জাহির করেন। তবে বেশিরভাগ মানুষই এদেরকে ‘আকামোর ভাণ্ড’ হিসেবেই বিবেচনা করে থাকেন। ‘সুশীল’ পরিচয়কে পুঁজি করে এরা বিভিন্ন সরকারি অফিসে ধর্ণা দেন। আর যা দেখা যায় না সেসব পেশাগত কারণে আমি জানি। অবশ্য আরো অনেকেই জানেন।

তবে আনেকের মতো আমারও জানা নেই, এরা বরিশাল কলেজের নাম পরিবর্তন করার জন্য উঠেপড়ে লাগলেন কেন? এরা কী মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের স্বর্র্গীয় আত্মাকে অশান্তির দরিয়ায় চুবাতে চান! কেবল বরিশাল নয়, ভারত উপ-মহাদেশেই অশ্বিনী কুমার দত্ত একটি প্রাতস্মরণীয় শ্রদ্ধেয় নাম। এই নামকে কেন বির্তকের সীমানায় টেনে আনা হলো?

মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্ত স্বর্গবাসী হয়েছেন ১৯২৩ সালের ৭ই নভেম্বর। বরিশাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৬৩ সালে। নাইট কলেজ হিসেবে বরিশাল কলেজ শুরু হয় স্বর্গীয় মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের বাড়িতে, তঁর দেহ ত্যাগের ৪০ বছর পর। তখন এ বাড়িতে তার উত্তরসূরীরা থাকতেন। তারা এ জমি বা বাড়ি দান করেননি। দানের প্রস্তাব তারা বারবার প্রত্যাখ্যান করেছেন। এরপর চড়াদামে কিনে নেয়া হয়েছে পুরোনো ভবনসহ জমি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারের আরো কিছু জমি।

কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রায় ৬০ বছর পর এখন একদল কথিত সুশীল বলছেন, এ কলেজের নাম অশ্বিনী কুমার দত্তের নামে করতে হবে। এদের জন্য আসলে আমার করুণা হয়। তাদের বলবো, শনিবার সদর রোডের মানববন্ধনের চিত্রটি একবার অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। এবং ভালোভাবে অনুধাবন করার চেষ্টা করুন, বক্তাদের কথাগুলো। তা না হলে আপনাদের কারণে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে তাতে মহাত্মা অশ্বিনী কুমার দত্তের আত্মার অশান্তি আরো বাড়বে। পাশাপাশি এমন অবস্থা সৃষ্টি হবার আশঙ্কা করছেন অনেকেই, যার সুবিধা নেবে অপরাজনীতির কুশীলবরা। প্লিজ, অনেক হয়েছে, পানি আর ঘোলা করবেন না!

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :