জামালপুরে ১৬০ মেট্রিক টন সরকারি গম আত্মসাত!

সাইমুম সাব্বির, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১১ জুলাই ২০২০, ২৩:৫৫

২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জামালপুর সদর উপজেলার কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পে কাজ না করেই অর্ধকোটি টাকা দামের ১৬০ মেট্রিক টন গম উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। এতে দরিদ্র শ্রমিকরা তাদের মজুরি থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশপাশি ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারি প্রকল্পের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য।

অন্যদিকে প্রকল্পের আওতাভুক্ত গ্রামীণ জনপদের কাঁচা সড়কগুলো মেরামত না হওয়ায় যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা। তবে উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, অনিয়ম করলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ২য় পর্যায় নন-সোলার প্রকল্পের জন্য জামালপুর সদর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের ১২টি প্রকল্পের জন্য ১৬০ দশমিক ৫৫৫ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। ৩৩ হাজার টাকা প্রতি মেট্রিক টনে গমের মোট বাজার দাম দাড়ায় ৫২ লাখ ৯৮ হাজার ৩১৫ টাকা।

চলতি বছরের জুন মাসে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও কাজ না করেই ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত গম উত্তোলন করা হলেও প্রকল্পের কোনো কাজ করা হয়নি। আবার অনেক প্রকল্পের সভাপতি জানেন না তার প্রকল্পের নামে বরাদ্দ হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নারিকেলি বড়বাড়ি থেকে তেমাথা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য নয় মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। সরকারি দরে নয় মেট্রিক টন গমের দাম দুই লাখ ৯৭ হাজার টাকা।

জুন মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও গত ৪ জুলাই সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ওই রাস্তায় কোনো কাজ করা হয়নি এবং রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে শিকার হচ্ছে ওই এলাকার বাসিন্দারা।

প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা ফজলুল হকের ছেলে আবু বক্কর মো. সিদ্দিক বলেন, গত চার-পাঁচ বছর যাবত বড়বাড়ি থেকে তেমাথা পর্যন্ত রাস্তার কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি। এতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে তারা। রাস্তার বেহাল অবস্থার কারণে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে। বর্ষাকালে এই ভোগান্তির মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায় বলে জানান তিনি।

ওই এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ সুরুজ্জামান বলেন, এই এলাকার রাস্তাটির মাটির কাজ হয়নি অনেক দিন। তিনি রাস্তাটি সংস্কারের দাবি জানান।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির সভাপতি ও কেন্দুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ মাহবুবুর রহমান মঞ্জুর কাছে জানতে ৪ জুলাই দুপুরে তার ইউনিয়ন পরিষদে গেলে তিনি বলেন, এই প্রকল্পের বিষয়ে তার জানা নেই এবং পরের দিন যোগাযোগ করতে বলেন। ৫ জুলাই বেলা ১২টায় আবার তার ইউনিয়ন পরিষদে গেলে তিনি অপেক্ষা করতে বলেন এবং প্রায় ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করার পরও তিনি এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন সদস্য বলেন, চেয়ারম্যান শেখ মাহবুবুর রহমান মঞ্জু উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের সঙ্গে যোগসাজোশ করে প্রকল্পের কাজ না করেই গম উত্তোলন করেছেন।

এদিকে শরিফপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ডেংগার গড় হুছির বাড়ি থেকে সুরুজ বাজার হয়ে সিংগাবিল পর্যন্ত রাস্তা পুনঃসংস্কারের জন্য ২৪ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। ৩০ জুন মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও ৬ জুলাই সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ওই রাস্তার কোন কাজ করা হয়নি।

প্রকল্প এলাকার সুরুজ বাজারের বাসিন্দা মৃত ঈমান আলীর ছেলে হুসেন আলী বলেন, রাস্তা খারাপ থাকার কারণে বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতারা যাতায়াতে চরম দুর্ভোগের শিকার হন। এছাড়া ভারী মালামাল পরিবহনেও অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অতি দ্রুত রাস্তা সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির সভাপতি ও শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলম আলী বলেন, প্রকল্পের কিছু কাজ করা হয়েছে। সামনে আরো কাজ করা হবে। তবে প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই গম উত্তোলনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি।

অন্যদিকে শাহবাজপুর ইউনিয়নের বাঁশচড়া এসবিজি মডার্ন উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাটের জন্য ৯ মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। সরকারি দরে নয় মেট্রিক টন গমের মূল্য দাড়ায় দুই লাখ ৯৭ হাজার টাকা।

স্কুল মাঠে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও কোনো কাজ করা হয়নি। তবে কাজ না করেই গম উত্তোলন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

কাবিখা প্রকল্পের কাজ না করে গম উত্তোলনের বিষয়ে জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদা ইয়াসমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, এ ধরনের অভিযোগ তিনি এখনও পাননি। তবে এধরনের অভিযোগ পেলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যে প্রকল্পে কাজ কম করা হয়েছে প্রয়োজনে সেখানে আবার কাজ করানো হবে। এছাড়া নিম্নমানের কাজ ঠেকাতে এবং প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির জন্য উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত তদারকি করছে বলে জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :