সুনামগঞ্জে ১০ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা বন্যা

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০২০, ১৫:৪২

জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, সুনামগঞ্জ

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ জেলার সুরমা, যাদুকাটা, চলতি ও রক্তি নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গত ১০দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা সৃষ্টি হয়েছে বন্যা। প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করছে জেলার ঘর-বাড়িগুলোতে। ফলে গৃহপালিত পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন তারা।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, শনিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ও যাদুকাটা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সহিবুর রহমান জানান, আগামী তিন চার দিন সুনামগঞ্জে প্রচুর বৃষ্টি হবে। এতে করে জেলার প্রতিটি উপজেলার নিন্মাঞ্চলের পানি আরও বাড়বে।

টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, জেলার সুরমা নদীর দুকূল ছাপিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে ১১টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল গ্রামগুলোতে। আর সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর,সুনামগঞ্জ-সাচনা,সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর,সুনামগঞ্জ-দোয়ারাবাজার সড়কের ২৫টির অধিক জায়গা ডুবে গেছে পানিতে। কালভার্টগুলোর সংযোগ সড়ক থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।  এছাড়াও জেলার  সীমান্ত এলাকা তাহিরপুর,দোয়ারাবাজার,বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ভারতীয় মেঘালয় সীমান্তের শতাধিক ঝরনার পানি প্রবল বেগে নামছে। এতে সদর উপজেলার লালপুর, রাধানগর, কুতুবপুর, রসুলপুর, চালবন ও ভাদেরটেক, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বাগগাও ও সিরাজপুর, তাহিরপুর উপজেলার লাউরেরগর, মদেরগাও, গড়কাটি, সোহালা ও দক্ষিণকুলসহ শতাধিক গ্রামের বসতভিটা, গবাদি পশু ওপুকুরের মাছ ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের বন্যা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১১টি উপজেলা ও চারটি পৌরসভার ৪২০৫৭টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাহিরপুর উপজেলা। জেলার ৭৯ আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩৭টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। জেলার ৮১ ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ২৮০ মেট্রিক টন চাল, ১৬ লাখ ৯৪২৫০ টাকা ও ৩০৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

শিশু খাদ্য, ঢেউটিন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও প্রয়োজনীয় ওষুধ  সরবরাহ করা হয়েছে।  প্রথম দফা বন্যায় ৩২৬২৫ হেক্টর জমির ফসল, ১৫০ কিলোমিটার সড়ক, ৩০২১ কোটি টাকার মাছ, ২৫০০০ গবাদি পশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া নদী ভাঙন দেখা দেয়।

তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম জানান, প্রথম দফা বন্যার পানি এখনও ঠিকমতো নামেনি। এরই মধ্যে দ্বিতীয় দফা বন্যায় নিচু এলাকার ঘর-বাড়িতে আবারও পানি প্রবেশ করছে। গত ১০ দিনের ব্যবধানে দু’বার বন্যায় প্লাবিত এই এলাকার গরিব, অসহায় ও দিনমজুররা চরম ক্ষতি আর দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।

করোনা ও বন্যায় বিপন্ন মানুষের জন্য আরও বেশি সহযোগিতার দাবি জানিয়ে বিশ্বম্ভপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন জানান, সুনামগঞ্জ-বিশ্বম্ভরপুর-শক্তিয়ারখলা সড়কের দু কিলোমিটার জায়গা খুব নিচু করে তৈরি করায় প্রতিবছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করায় সড়কে শতশত গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ সড়কে যানবাহন চলাচল একবারেই বন্ধ রয়েছে।

 

বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের চেয়াম্যান এরশাদ মিয়া জানান, গত মাসের শেষের দিকে প্রথম দফা বন্যা শুরু হয়েছিল। করোনার প্রভাবে নিম্ন আয়ের লোকজনের আয়-রোজগার নেই। এর মধ্যে দুই দফা বন্যা অসহায় পরিবারগুলোন চরম দুর্ভোগের মাঝে আছে। তাদের জন্য সহায়তা কার্যক্রম আরও বাড়ানো প্রয়োজন। একই কথা বলেন তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুলও।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত জানান, দ্রুত বেগে পানি বাড়ায় শহরের নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। পৌর কর্তৃপক্ষ এ পরিস্থিতির ওপর সতর্ক নজর রাখছে। পানিবন্দি প্রতিটি পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি জানান।

সুনামগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, ‘বন্যায় দুর্গতদের জন্য ত্রাণের অভাব নেই। যখন যা প্রয়োজন তা সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিয়মিত বন্যা দুর্গতদের খোঁজ রাখছেন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে। তারা বন্যা দুর্গতদের পাশে রয়েছে।

জেলা প্রশাসক আব্দুল আহাদ জানান, বন্যায় দুর্গতদের জন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার ও অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার আশ্রয়কেন্দ্র খোলাসহ বন্যা পরিস্থিতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/পিএল