যেভাবে ধরা পড়েছিল জেকেজির করোনা প্রতারণা

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০২০, ১৮:৩৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

কথিত ‘স্বেচ্ছাসেবী’ প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথকেয়ারে চাকরি করতেন নার্স তানজিনা পাটোয়ারী। তার স্বামী হুমায়ূন কবির ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির গ্রাফিক ডিজাইনার। ভুয়া করোনা পরীক্ষা করে কোটি কোটি টাকা কামানো দেখে তানজিনা তার বেতন বাড়িয়ে দেওয়ার দাবি করেছিলেন।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বেতন বৃদ্ধির দাবির পর জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফ চৌধুরী জেনে তানজিনা ও তার স্বামীকে চাকরিচ্যুত করেন। তবে চাকরি হারানোর পরে তারা স্বামী স্ত্রী বাসায় বসে নিজেরাই করোনার ভুয়া টেস্টের বাণিজ্য চালান। তানজিনা করোনার নমুনা সংগ্রহ করতেন আর ঘরে বসে হুমায়ূন রিপোর্ট তৈরি করতেন।

এক পর্যায়ে ২৩ জুন রাতে তারা পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হলে আস্তে আস্তে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসতে শুরু করে। এরপর জেকেজির গুলশান অফিসে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় প্রতারক আরিফ চৌধুরীসহ অন্যদের।

ওই দিনই প্রতিষ্ঠানটির কিছু কর্মী আরিফকে ছাড়িয়ে নিতে তেজগাঁও থানায় জড়ো হয়ে হট্টগোল করেন। এ ঘটনায় পৃথক একটি মামলাও হয়েছে। ওই মামলায় ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার হওয়া ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জন। গ্রেপ্তারের পর তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন।

তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল হাসনাত খন্দকার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি জেকেজি এমন প্রতারণা করছে। এরপর আমরা তাদেরকে একে একে ধরে ফেলি। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করব।’

কয় দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে জানতে চাইলে পরিদর্শক আবুল হাসনাত বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। এখন কোন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে আর কতো দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে সেটা আমাদের ডিসি স্যার বলতে পারবেন।’

জানা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনার নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই প্রতিষ্ঠানটি ১৫ হাজার ৪৬০টি টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ করে। এসব পরীক্ষায় জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জেকেজি। আর বিদেশিদের কাছ থেকে নেয় একশ ডলার। সেই হিসাবে ভুয়া পরীক্ষা বাণিজ্যে তারা হাতিয়েছে প্রায় আট কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেকেজি ২৭ হাজার রোগীর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনার আইইডিসিআরের মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ রিপোর্ট তারা নিজেরা তৈরি করেছে। জেকেজির ৭-৮ জন কর্মী মিলে ভুয়া এসব রিপোর্ট তৈরি করে।

প্রতিষ্ঠানটির মাঠকর্মীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়া লোকজনের নমুনা সংগ্রহ করত। রোগীদের ১০টি প্রশ্ন দেয়া হতো। এর মধ্যে পাঁচটির বেশি প্রশ্ন যদি করোনা উপসর্গের হতো তবেই তাকে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট দেয়া হতো। অন্যদের দেওয়া হতো নেগেটিভ রিপোর্ট। এভাবেই চলছিল তাদের করোনা পরীক্ষার প্রতারণা।

নমুনা সংগ্রহের জন্য জেকেজির হটলাইন নম্বর ছিল। ওই নম্বরে কেউ ফোন করলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা তার বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করত। আবার অনেকে জেকেজির বুথে এসে নমুনা দিতেন। কোনো মাঠকর্মী বাসায় যাতায়াত করলে তার জন্য নেওয়া হতো ১ হাজার টাকা।

(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/এএ/ডিএম)