এগিয়ে চলছে ১ হাজার শয্যার সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নির্মাণ

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০২০, ২১:৩৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধীন দেশের প্রথম এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নির্মাণ কার্যক্রম স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।

রবিবার সকালে বিশেষায়িত এই হাসপাতালের নির্মাণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন বিএসএমএমইউ’র উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া।

দক্ষিণ কোরিয়া, বাংলাদেশ সরকার ও বিএসএমএমইউর যৌথ উদ্যোগ ও অর্থায়নে নির্মাণাধীন এই হাসপাতালের অগ্রগতির বিষয়ে অবহিত করেন সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক ও বিএসএমএমইউর হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক এন্ড লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান মো. জুলফিকার রহমান খান।

বিএসএমএমইউর উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নির্মাণ কার্যক্রম যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। এ সময় সংশ্লিষ্ট কোরিয়ান প্রতিনিধি, প্রকৌশলী শ্রীকান্ত রায় উপস্থিত ছিলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর দিকে ১২ বিঘা জমির ওপর এই হাসপাতাল নির্মাণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণের উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবার চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। এই বাস্তবতায় সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ যথার্থ ও অত্যন্ত সময়পোযোগী।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসর সম্প্রসারণের জন্য ২০১২ সালে সরকার বর্তমান হাসপাতালের উত্তর পার্শ্বের ৩.৮ একর (প্রায় ১২ বিঘা) জমির বন্দোবস্ত করে দেয়। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের সহযোগিতায় এই ৩.৮ একর জমির উপর নির্মিত হচ্ছে বিএসএমএমইউর সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল। জনগণের জন্য বিশেয়ায়িত সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি এক হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বিএসএমএমইউর অধীনে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণে দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ই.ডি.সি.এফের অর্থায়নে এক হাজার ৪৭ কোটি টাকা ঋণ সহযোগিতা দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রথম ফেইজে দুইটি বেজমেন্টসহ ১১তলা হাসপাতাল ভবন  নির্মাণ করা হবে।

বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে পরবর্তী দুই তলা উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হবে। ১৩ তলা হাসপাতাল ভবনটিতে থাকবে এক হাজার শয্যা। দেশের প্রথম সেন্টার বেইজড চিকিৎসা সেবা চালু হবে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটিতে। বাংলাদেশে এ ধরনের হাসপাতাল এটাই প্রথম। বর্তমানে সিঙ্গাপুর, কোরিয়াসহ বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত দেশে সেন্টার বেইজড চিকিৎসা সেবা পদ্ধতি চালু আছে।

নব নির্মিত হাসপাতাল ভবনের প্রথম ফেইজে থাকবে স্পেশালাইজড অটিজম সেন্টারসহ ম্যাটারনাল এন্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার সেন্টার, ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল কেয়ার সেন্টার, হেপাটোবিলিয়ারি ও গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি সেন্টার, কার্ডিও ও সেরিব্রো ভাসকুলার সেন্টার এবং কিডনি সেন্টার।

দ্বিতীয় ফেইজ থাকবে রেসপিরেটরি মেডিসিন সেন্টার, জেনারেল সার্জারি সেন্টার, অফথালমোলজি, ডেন্টিস্ট্রি, ডার্মাটোলজি সেন্টার, ফিজিক্যাল মেডিসিন, রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার ইত্যাদি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল হবে একটি রোগীবান্ধব সুবজ হাসপাতাল। এতে থাকবে সানকেন গার্ডেন, রুফটপ গার্ডেন ও অন্যান্য পরিবশেবান্ধব সুযোগ-সুবিধা। সুপরিসর এই হাসপাতালে বর্হিবিভাগ ও ইনফো ডেস্ক থাকবে। হসপিটাল ইনফরমেশন সেন্টার চালু করার মাধ্যমে রোগী ও হাসপাতাল পরিচালনা হবে সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতিতে।

জনসাধারণ এখানে সাশ্রয়ীমূলেআন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা পাবেন। এর পাশাপাশি ভিভিআইপি ও ভিআইপি কেবিনও থাকবে হাসপাতালটিতে। এই হাসপাতালে কিডনি ও লিভার  ট্রান্সপ্লান্টের সুবিধা থাকবে। এই সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি স্বাস্থ্য সেবার এক নতুন দিগন্ত উম্মোচন করবে। বিশেষ করে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি উন্নত গবেষণা ও প্রশিক্ষণের দিগন্ত প্রসারিত হবে। সর্বাধুনিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ৮০ জন চিকিৎসক, ৩০ নার্স ও ১০ জন কর্মকর্তাকে কোরিয়ায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এখানে প্রতিদিন বহির্বিভাগে সেবা গ্রহণ করবে দুই হাজার থেকে চার হাজার রোগী। অন্তঃবিভাগে প্রতিবছর প্রায় ২২ হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা পাবেন।

প্রতিবছর দেশের বাইরে চলে যাওয়া তিন শ থেকে চার শ কোটি টাকা সাশ্রয় করবে বিএসএমএমইউর অধীনে প্রতিষ্ঠিত সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটি। সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালটির মাধ্যমে “বিদেশ নয়, দেশেই সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা” দেয়া সম্ভব হবে। 

ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/এএ/ইএস