দায়সারা ব্যাখ্যায় দায়িত্ব শেষ হয় না স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২০, ০৮:৫১ | প্রকাশিত : ১২ জুলাই ২০২০, ২২:৩৯

করোনা চিকিৎসায় রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতারণার বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব শেষ হতে পারে না বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, প্রেস রিলিজে দায়সারা ব্যাখা দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

করোনা মহামারীর মধ্যে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য অখ্যাত রিজেন্ট হাসপাতালকে এবং নমুনা পরীক্ষার জন্য কথিত ‘স্বেচ্ছাসেবী’ প্রতিষ্ঠান জেকেজি হেলথকেয়ারকে অনুমতি দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সম্প্রতি করোনা নিয়ে এই দুই প্রতিষ্ঠানের ভয়াবহ প্রতারণা ফাঁস হওয়ার পর সমালোচনার মুখে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশে সাহেদের মালিকানাধীন হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন তারা।

অন্যদিকে হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা জেকেজির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, এর আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ করা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ওভাল গ্রুপ লিমিটেডের মালিক আরিফুল চৌধুরীর এই প্রতিষ্ঠান এভাবে প্রতারণা করবে তা তাদের ধারণায় ছিল না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হওয়ার কোনও কারণ পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, যাছাই বাছাই না করে এমন মানহীন ও অনিয়মে জড়িত হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করার দায় অধিদপ্তরের পাশাপাশি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও।

এছাড়া চুক্তির পর মনিটরিং করতে না পারার ব্যর্থতাও তাদের। কেউ কোনো অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এদের সুযোগ দিলে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। আর তা না হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘করোনার রিপোর্ট নিয়ে রিজেন্ট হাসপাতাল বা জেকেজি যা করেছে তা ভয়ংকর। এর দায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তথা মন্ত্রণালয় এড়াতে পারে না।’

‘কারণ তারা তো হাজার হাজার নয়, মাত্র দুই চারটা প্রতিষ্ঠানকে করোনার সময় দায়িত্ব দিয়েছে চিকিৎসা এবং নমুনা পরীক্ষার। সেটা মনিটরিং করবে কে? কেন মনিটরিং হলো না সেটা অবশ্যই খতিয়ে দেখতে হবে।’

গত ২১ মার্চ মো. সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। করোনায় আক্রান্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা রোগীদের থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করত। এছাড়া টাকার বিনিমিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে মনগড়া রিপোর্ট দিত। এই অভিযোগ সিলগালা করে দেওয়া হয় হাসপাতালটির উত্তরা এবং মিরপুর শাখা।

শুধু তাই নয়, ছয়বছর ধরে হাসপাতালটির লাইসেন্সও নেই। এর মালিক সাহেদের বিরুদ্ধে নানা সময় প্রতারণার অভিযোগও আছে। এমন ব্যক্তির লাইসেন্সবিহীন হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কোন যুক্তিতে চুক্তি করেছিল সেই প্রশ্ন উঠে এসেছে।

অধিদপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, জরুরী পরিস্থিতির কারণে চিকিৎসায় আগ্রহ প্রকাশ করায় রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। তখন বৈধ লাইসেন্স, জরুরি চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সক্ষমতা বা আগের রেকর্ড পর্যালোচনা করা হয়নি।

যাচাই বাছাই না করে দ্রুত চুক্তি করা নিয়ে অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শুরুতেই সরকার ফর্মূলায় ভুল করেছে। আধুনিক সুযোগ সুবিধা আছে এমন একাধিক বেসরকারি হাসপাতালকে সরকার ব্যবহারের জন্য নিতে পারত। সরকারি বা সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের তত্ত্বাবধানে এগুলো পরিচালিত হলে আজকের এই ক্ষতি হতো না।’

‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চুক্তি করার কথা বলা হলেও দায় তো তাদের (অধিদপ্তর)। অর্থাৎ এরা শক্ত ভূমিকা রাখতে পারেনি। এখন প্রতারিত হয়েছে বললেই তো সব শেষ হয়ে যাবে না। তাহলে এদের কাজটি কি ছিল?’

অন্যদিকে করোনার নমুনা পরীক্ষায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে যে ভয়াবহ প্রতারণা জেকেজি নামের কথিত ‘স্বেচ্ছাসেবী’ সংগঠনটি করেছে সে বিষয়ে ড. হামিদ বলেন, ‘ভাবতেই পারেননি প্রতারণা করবে─এটা কোনো জবাব নয়।’

‘আপনাদেরই (স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) ভেবে কাজ করা উচিত ছিলো। মনিটরিং করা দরকার ছিলো। কারণ মন্ত্রণালয় যতই বলুক চুক্তি তো আপনারা করেছেন। দায়ও আপনাদের।’

এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দলীয় বা তদবীরের মাধ্যমে পোস্টিং বন্ধ করা জরুরি বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। অন্যথায় দিনেদিনে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।

করোনা মহামারীর মধ্যে এই দুই প্রতারণার ঘটনা অমানবিক বলে মন্তব্য করেছেন বিএসএমএমইউর সাবেক উপচার‌্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম।

করোনা মোকাবেলা জাতীয় কমিটিতে থাকা ডা. নজরুল ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘যা হয়েছে এটা দুঃখজনক, অমানবিক। এখনো যদি বিষয়গুলোতে কঠোরভাবে নজর দেওয়া না হয় আরো অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। জাতীয় কমিটির পক্ষ থেকে শুরু থেকে সরকারকে এসব নিয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :