মৌসুম শেষে আম রপ্তানি শুরু

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০২০, ২৩:২২

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী

আমের মৌসুম প্রায় শেষ। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এবার রাজশাহী থেকে বিদেশে আম রপ্তানি হয়নি। তবে মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে আম রপ্তানি শুরু হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় প্রথম রাজশাহী থেকে আম যায় সুইজারল্যান্ড। ‘নর্থ বেঙ্গল এগ্রো ফার্ম লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান আম রপ্তানি শুরু করেছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এ তথ্য জানিয়েছেন। রবিবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের এই সংসদ সদস্য লিখেছেন, ‘রাজশাহীর আম রপ্তানি শুরু করল নর্থ বেঙ্গল এগ্রো ফার্ম লিমিটেড।  প্রথম চালান সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে আজ সন্ধ্যায়। সবার দোয়া প্রত্যাশা করছি।

তিনি লেখেন, প্রথম চালানে কোন সমস্যা না হলে এটা চলবে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। যাবে আরও কিছু দেশে। এই বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে সামনের ২০২১ এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে। এই বছর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিলাম ১০০ টন, কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না বিভিন্ন কারণে।

আগামী বছর রাজশাহীতেই আমের মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হবে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী লেখেন, সামনের বছরে রাজশাহীর নিজস্ব বা সরকারিভাবে স্থাপিত হবে ফলমূলের কোয়ারেন্টাইন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র যা সকলেই ব্যবহার করতে পারবেন। আশা করি, একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।

আম রপ্তানির বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, খবরটা আমিও এইমাত্র শুনলাম। কারা পাঠাচ্ছে, কীভাবে পাঠাচ্ছে তা জানার চেষ্টা করছি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে না। তারা সরাসরি কৃষকের সাথে যোগাযোগ করে আম নিয়ে যান। তাই আমরা জানি না। তবে এ বিষয়ে আমরা খোঁজ নিচ্ছি।

কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রপ্তানির উদ্দেশ্যে এ বছর রাজশাহীতে প্রায় ৭ লাখ আমে ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছিল। বাঘা, চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলার চাষিরা সবচেয়ে বেশি উন্নত এই প্রযুক্তিতে আম চাষ করেছিলেন। কিন্তু রবিবারের আগে একটি আমও বিদেশে পাঠানো যায়নি। স্থানীয় বাজারেই সেসব আম বিক্রি করছেন চাষিরা। এ অবস্থায় নর্থ বেঙ্গল এগ্রো ফার্ম লিমিটেড যদি রবিবার রপ্তানি করে তবে এটাই এ বছর রাজশাহীর আমের প্রথম বিদেশযাত্রা।

প্রতিষ্ঠানটি আম রপ্তানি শুরু করলেও মৌসুম প্রায় শেষের দিকে। উন্নতজাতের প্রায় সব আমই শেষ। উন্নতজাতের মধ্যে গাছে আছে কিছু আমরুপালি। বাজারে উঠেছে ফজলিও। সবার শেষে আসবে আশ্বিনা।

সর্বশেষ ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ঠিকমতো রাজশাহীর আম ইউরোপের বাজারে পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ঢাকায় প্ল্যান কোয়ারেন্টাইন উইং সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসে কোয়ারেন্টাইনের নামে খুব কড়াকড়ি শুরু হয়। সামান্য দাগ থাকলেই আম বাদ দেয়া শুরু হয়। ফলে রপ্তানিকারকরা আম পাঠাতে পারেননি। এবারও করোনার কারণে আগে আম পাঠানো সম্ভব হয়নি।

রাজশাহী জেলায় আম বাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। অপরিপক্ব আম নামানো ঠেকাতে গেল কয়েক বছরের মতো এবারও আম নামানোর সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন।

সে অনুযায়ী ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম নামানোর সময় শুরু হয়। এছাড়া ২০ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ বা লখনা, ২৮ মে থেকে হিমসাগর বা খিরসাপাত ২৮, ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে আমরুপালি ও ফজলি নামানো শুরু হয়। সবশেষে ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা এবং বারী আম-৪ জাতের আম নামানো শুরু হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/এলএ)