কুড়িগ্রামে ফের বন্যার হানা, পানিবন্দি ৬৫ হাজার মানুষ

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০২০, ২৩:৫৩

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ভারিবর্ষণ ও উজানের ঢলে কুড়িগ্রামের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধরলা ও ব্রহ্মপূত্র নদের পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় দেড় শতাধিক চর ও নিম্নাঞ্চলের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৬৫ হাজার মানুষ। ঘর বাড়িতে পানি ওঠায় অনেকেই রাস্তা ও বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিতীয়বার বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে চরাঞ্চল ও নদনদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। প্রথম দফা বন্যার পানি নেমে যেতে না যেতেই আবারো বন্যার কবলে পড়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা।

রবিবার সন্ধ্যায় ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়ায় ৩০ এবং চিলমারীতে ২০ সেন্টিমিটার ও তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে ২০ গ্রামের মানুষ। পাঙ্গারচরের অধিবাসী দারোগ আলীর পরিবার ১৭ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছেন। নিচু এলাকায় বাড়ি হওয়ায় প্রথমদফার বন্যার পানি উঠোনে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় দফা বন্যার কবলে পড়ে সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন তারা।

দারোগ আলী (৪৫) ও তার স্ত্রী হালিমা (৩৫) বলেন,  পরিবারে ছোট সাতটি সন্তান। বন্যার কারণে ১৭দিন ধরে ঘরছাড়া। প্রথম দফায় ১০ কেজি চাল পেয়েছি। তা শেষ হয়ে গেছে। এখন নাবালক শিশুদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। আপনারা একটু দেখবেন।

মহাসড়কে আশ্রয় নেয়া শহিদুল (৪৫) ও তার স্ত্রী মেরিনা (৩৪) বলেন, প্রথম দফা বন্যায় বাড়ি ছেড়ে ১০দিন এখানে ছিলাম। পরে পানি নেমে গেলে বিধ্বস্ত বাড়িঘর ঠিক করে দুটো রাত ঘুমুতে না ঘুমুতে আবার বন্যা। কামকাজ নাই। কেউ ত্রাণও দিলো না। এখন কার কাছে হাত পাতি।

এখানকার বয়োজ্যেষ্ঠ আনোয়ারা বলেন, ছবি তুলি কী হইবে। হামাকগুলাক কাঁইয়ো কিছু দেয় না। এটে কাঁইয়ো খোঁজখবর নিবারো আইসে না।

ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি  হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে বীজতলার। এই পানি বেশিদিন অবস্থান করলে বীজতলাসহ বন্যাকবলিতরা খাদ্য সমস্যায় ভুগবে। এই মুহূর্তে বন্যা কবলিতদের উদ্ধারসহ ত্রাণ সহায়তা দরকার।

এদিকে ধরলার পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়ার চর ও সদর উপজেলার সারডোব বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। একইভাবে তিস্তার ভাঙনে দলদলিয়া ইউনিয়নের সরদারপাড়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ  বাঁধ ভাঙনের কবলে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলায় ১৯টি পয়েন্টে ভাঙন তীব্ররুপ নিয়েছে। এর মধ্যে ১১টি পয়েন্টে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।

জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যায় ৪০০ মেট্রিক টন চাল, আট লাখ জিআর ক্যাশ, দুই লাখ টাকার শিশু খাদ্য, দু্ই লাখ টাকার গো-খাদ্য এবং চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা দ্রুত বন্যা কবলিত এলাকায় বিতরণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১২জুলাই/কেএম)