আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ

হাসান শাহরিয়ার কল্লোল
 | প্রকাশিত : ১৩ জুলাই ২০২০, ১১:২৪

একটা দালান.. না, আসলে অনেকগুলো দালানের সমষ্টি। এর অধিকাংশ গুলোতে অনেক রোগাক্রান্ত মানুষের বাস। কিন্তু তারা এখানে বেশিদিন থাকে না। তারা আসে, ভালো হয়ে যাওয়ার জন্য, রোগ থেকে। আর তাদের সঙ্গে দিনরাত থাকে কিছু সুস্থ মানুষ। তারা চিকিৎসক, নার্স কিংবা অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মী। বছরের পর বছর ধরে এমনি চলছে। শুধু এই দালানগুলোর মানুষ বদল হয়। কিন্তু রোগ, রোগের সাথে বসবাস, রোগমুক্তি-র চক্র চলতেই থাকে। সেই "ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল" এর আজ ৭৫ বছর হল।

দালান গুলোতে আমি, আমরাও অনেকগুলো বছর কাটিয়েছি। ধীরে ধীরে "রোগ" এর সাথে পরিচিত হয়েছি, তারপর "রোগী"র সাথেও। শিখেছি ধাপে ধাপে, কিভাবে রোগ-কে মোকাবেলা করতে হয়, চিকিৎসা করতে হয়। এখন সেই চিকিৎসাই আমার, আমাদের পেশা। কিন্তু এটা শুধুই একটা পেশা নয়... নেশা কিংবা "অন্য কিছু" .. যার নাম ঠিক এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।

কিন্তু সেই "অন্য কিছু"ই সম্ভবত আমাদেরকে চালিয়ে নিয়ে বেড়ায় সতত, দিনরাত্রি। কারণ ওটা না থাকলে, এত দুঃখ, এত কষ্ট, মানুষের এত বেদনা কে ধারণ করা যায় না। এটাই আমাদের জীবনের জ্বালানি। পেশা হিসেবে আমাদের রুটি-রুজিও। এভাবে একটি দালান কিংবা অনেকগুলো দালান, আমাদের মত হাজার হাজার চিকিৎসক তৈরি করে গেছে।

এর দেয়ালে দেয়ালে লক্ষ লক্ষ মানুষের নিঃশ্বাস লেগে আছে। বহু দীর্ঘশ্বাস,ঘাম, রক্ত! রোগী, চিকিৎসক, স্বজন, চিকিৎসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ডোম - কত ধরনের মানুষ! আর সাথে ইতিহাস। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের প্রথম রাতে বানানো শহীদ মিনার থেকে একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ, নব্বই এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ডাঃ ফজলে রাব্বী, ডাঃ আলিম চৌধুরীসহ সমস্ত শহীদ, কিংবা ঢাকা মেডিকেলের চত্বরে চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে থাকা ডাক্তার শামসুল আলম খান মিলন।

কিন্তু আমার কাছে এই দালানগুলো, এই প্রতিষ্ঠান, লেকচার গ্যালারী, ডিসেকশন হল, ল্যাব, মর্গ, এর মানুষ.. সব একটা ভালোবাসা! শ্রদ্ধা জানাই আমার সব শিক্ষকদের যারা আজকের এই আমি-কে তৈরি হতে সাহায্য করেছেন। ভালোবাসা সব বন্ধুদের.. অনেক মেধাবী সিনিয়র- জুনিয়রদের .. যাদের সাহচর্যে অনেকগুলো সোনালী বছর কেটেছে। যারা দেশে এবং বিশ্বের নানা প্রান্তে চিকিৎসা পেশায় সুনাম অর্জন করে আমাদের গর্বিত করছেন প্রতিনিয়ত।

এখনো নানা বিপদে-আপদে যারা সবচেয়ে বড় সহায়। আর কৃতজ্ঞতা সেইসব রোগীদের কাছে, যাদের মাধ্যমে অর্জন করেছি আজকের এই জ্ঞান। যা দিয়ে আরো নতুন নতুন অনেক রোগীকে সেবা করছি। ডিএমসি-র ৭৫ বছরে পদার্পণের এই দিনে অনেক শুভকামনা! জয়তু ডিএমসি!

লেখক: চিকিৎসক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব

ঢাকাটাইমস/১৩জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :