করোনাকালেও চলছে নারী নির্যাতন

লীনা পারভীন
| আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২০, ১৪:৫১ | প্রকাশিত : ১৩ জুলাই ২০২০, ১৪:৪৯

পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় পুরুষের বিনোদন বা আক্রোশ মেটানোর একটি সহজ মাধ্যম হচ্ছে নারী। হাতের কাছে সহজলভ্য হলেই তারা তাদের মনের খায়েশ মেটাতে চায় অবলীলায়। আমাদের এই পশ্চাদপদ সমাজব্যবস্থায় প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো ঘটনা। কোনও ধরনের সামাজিক বা বৈশ্বিক মহামারিও এর থেকে নারীকে পরিত্রাণ দিতে পারে না।

এমনিতেই গৃহবন্দি থেকে আমরা প্রতিটা মানুষ এক অজানা আশঙ্কায় দিন পার করছি। আছে আর্থিক অনিশ্চয়তা ও ভবিষ্যতের বিপদের আশঙ্কা। করোনার হানা কেবল জীবন নেওয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। এই আঘাত এসেছে আমাদের সকলের জীবন ও জীবিকার মাঝেও। এমনিতেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীর প্রতি সম্মান বা মর্যাদাসম্পন্ন দৃষ্টিভঙ্গির অভাব আছে, তার মধ্যে লকডাউনে সারাক্ষণ বাসায় থেকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় পুরুষ হয়ে উঠছে আরও ভয়ঙ্কর। হতাশা থেকে নিরসন পেতে তারা বেছে নিচ্ছে নারীকে।

করোনা শুরুর প্রথম থেকেই আমরা বিশ্বের নানাদেশ থেকে ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের খবর পাচ্ছিলাম, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল জাতিসংঘ। উন্নত দেশগুলোতে অভিযোগ জানানোর জন্য নির্ধারিত ব্যবস্থা থাকলেও আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এর চর্চা একেবারেই নেই বললেই চলে। এর মধ্যেই বেড়ে চলেছে নারীর প্রতি সহিংসতা। এই বিষয়টি এক প্রকার আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

একটি পরিবারে যখন দুর্যোগ নেমে আসে তখন সেটিকে মোকাবিলার জন্য পরিবারের সকল সদস্যকেই সমান ভূমিকা রাখতে হয়। সেখানে নারী বা পুরুষের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ থাকার কথা নয়। স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ে মিলেই বিপদকালীন সময়কে উতরে যাওয়ার পরিকল্পনা করতে হয়। কিন্তু সংসারে মত প্রকাশ করার মতো সুযোগের অভাবে আমাদের দেশের নারীরা থেকে যায় অবহেলিত। পুরুষ মনে করে সে একাই সকল সিদ্ধান্ত নিতে পারে বা বিপদ থেকেও সে একাই উদ্ধার করতে পারবে। এক্ষেত্রে নারীটিকে সে মনে করে কেবল একজন পুতুল মাত্র। একা একা লড়াই করতে গিয়ে যখন কোনও সুরাহা হয় না তখনই আসে হতাশা, আর সেই হতাশা থেকে মুক্তি একমাত্র পথ হিসেবে বেছে নেয় নারীর ওপর নির্যাতনের মতো রাস্তা।

একবারের জন্যও ভাবে না যে সংসারের উত্থান পতন যেমন পুরুষকে প্রভাবিত করে, ঠিক একই মাত্রায় নারীটিকেও প্রভাবিত করে। পরিবারের শিশুরাও এখন গৃহবন্দি। যে পরিবারে শিশু আছে, তাদের প্রতি নজর রাখাটাও কিন্তু নারীর ওপরেই বর্তায়। অথচ এই নারীটির মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটা থেকে যাচ্ছে অবহেলিত বা উপেক্ষিত।

একজন নারীকে একা একাই মোকাবিলা করতে হয় নিজের লড়াই এবং সংসারের বাকি মানুষগুলোর লড়াইকে। এই যে কঠিন বাস্তবতা, এর ভয়াবহতা জানে কেবল একজন নারী। নির্যাতনের কথা না পারে কোথাও প্রকাশ করতে, না পারে প্রতিকার চাইতে। এই করোনাকাল আমাদের শিখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে অনেক কিছু। এই নির্যাতনের হাত হতে রক্ষা পাওয়ার উপায় খুব একটা সহজ নয়। আগেই বলেছি আমাদের স্থানীয় প্রশাসন এখন ব্যস্ত আছে করোনা মোকাবিলায়। এই সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয়টিকে তারা হয়তো স্রেফ একটি পারিবারিক ঘটনা বলেই বিবেচনা করছে। একজন নারী যখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে, তখন উপেক্ষিত থাকে পরিবারে থাকা তাদের সন্তানেরাও। এই অবস্থায় সৃষ্টি হয় সন্তানের জন্য এক ধরনের মানসিক নির্যাতনের মতো পরিবেশ।

সরকার ও প্রশাসন যদিও করোনা মোকাবিলায় ব্যস্ত এবং এটিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে সকল কার্যক্রম, তারপরও বলতে চাই নারী নির্যাতন বা নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টিকেও যেন সরকার তার নজরে রাখেন। প্রশাসনকে সঠিক নির্দেশনা দিতে হবে যেন কোনও এলাকায় বা জেলায় নারী নির্যাতনের ঘটনা উপেক্ষিত না থাকে। সকল প্রকার প্রশাসনিক সহায়তাকে সহজলভ্য করতে হবে, আর আইনি পদক্ষেপের বিষয়টিকেও সামনে আনাটাও জরুরি। যতগুলো নারী নির্যাতনের মামলা আছে সেগুলোকেও ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে সুরাহা করার পদক্ষেপ নিতে হবে। মিডিয়াগুলোর রয়েছে বড় ভূমিকা। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে সমাজের সকল স্তর থেকেই নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

লেখক কলামিস্ট

ঢাকাটাইমস/১৩জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :