উপকূলের ভরসা হয়ে ওঠা একজন শাহিন আলম

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০২০, ২০:০৬

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস

ব্যক্তি সামর্থ্য না থাকলেও উপকূলবাসীর দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ান একজন শাহিন আলম। পুরো নাম এস এম শাহিন আলম। মাত্র ১৯ বছর বয়সী এই তরুণ সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালী গ্রামের বাসিন্দা। পড়াশোনা করছেন স্নাতক প্রথম বর্ষে। এই বয়সেই যেন উপকূলবাসীর ভরসা হয়ে উঠেছেন তিনি।

সুন্দরবন লাগোয়া গ্রামের এই বাসিন্দা ছেলেবেলা থেকেই নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং এর ভয়াবহতা প্রত্যক্ষভাবে দেশেই বড় হয়েছেন। আর প্রতিটি দুর্যোগ তাকে নিয়ে গেছে পীড়িত মানুষের কাছাকাছি। ছোটবেলা থেকেই জড়িয়ে পড়েছেন বিভিন্ন সামাজিক কাজে। নিজের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে উপকূলের শিশুদের জন্য কিছু করা।

শাহিন জানান, বঙ্গোপসাগর হয়ে প্রায়শই নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে। উপকূলে বসবাসকারী খেটে খাওয়া মানুষগুলো বারবারই দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছেন আইলা, সিডর, আম্পানের আঘাতে। একেকটি দুর্যোগের ভয়াবহতা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর সময় লেগে যাচ্ছে। এক দুর্যোগের রেষ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে হানা দিচ্ছে, আরেকটি দুর্যোগ। সব মিলিয়ে প্রতিবন্ধকতা যেন পিছু ছাড়ছে না উপকূলের হাজার হাজার মানুষের।

এসব দুর্যোগের ভয়াবহতায় উপকূলবাসীর ভরসা সরকার, নানা সামাজিক সংগঠন, সংস্থা এবং ব্যক্তি। সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই উপকূলে সাহায্য পৌঁছাচ্ছে, তবে তা সীমিত। ফলে উপকূলবাসীর ভরসার জায়গা দখল করে রয়েছে সামাজিক সাহায্য সংগঠন ও সংস্থাগুলো। বিপদের মুখে এসব মানুষের জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়াচ্ছেন অনেক ব্যক্তি।

ব্যক্তি সামর্থ্য নেই। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপকূলের অবস্থা তুলে ধরেন তিনি। মহৎ হৃদয় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে যে অর্থ আসে, তা দিয়ে উপকূলের ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কাজ করেন বলে জানান শাহিন।

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান পরবর্তী বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে ফেসবুক লাইভ করেছি। মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছি। অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন ও সংস্থার প্রেরিত অর্থ এবং ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি মানুষের কাছে। সব অর্থের ব্যবস্থা হয়েছে আমার করা লাইভের মাধ্যমে বিভিন্ন বিত্তবান, সংগঠন ও সংস্থার এগিয়ে আসার মাধ্যমে। এমন কিছু জায়গায় গিয়েছি যেখানে আমাদের স্থানীয়দের পক্ষেও যাওয়া অনেকটা কষ্টসাধ্য।’

বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাক্ষী শাহিন বলেন, ‘আমি আইলা, ফণী, বুলবুল, সর্বশেষ আম্পানের সময় ফ্রন্টলাইনে ছিলাম। মানুষদের সচেতন করা, আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া, ঝড় পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকেছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে থেকে কাজ করেছি। আম্পানে বানভাসিদের মাঝে খাদ্য, ওষুধ, সুপেয় পানি সরবরাহ করেছি এবং উঁচু বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেওয়া মানুষদের জন্য টয়লেট ও নলকূপের ব্যবস্থা করেছি। সঙ্গে সঙ্গে যে সব এলাকা প্রকৃত পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু অবহেলিত সে সব এলাকার বাস্তব  চিত্র কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’

নারী ও শিশুদের জন্যো বাড়তি কাজ করছেন এই তরুণ। শাহিনের ভাষায়, ‘এখন নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরণ ও তাদেরকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেয়ার কাজ করে যাচ্ছি। পরিকল্পনা বঞ্চিত শিশুদের জন্য কাজ করতে চাই। উপকূলের মা-বোনদের জন্য ন্যাপকিন, শিশুদের খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি।’

শাহিন কাজ করতে চান পরিবার বঞ্চিত শিশুদের জন্য। বলেন, ‘আমি উপকূলের শিশুদের নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসি। করে আসছি এবং শিশুদের নিয়ে কাজ করতে চাই। উপকূলের শিশুরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে, বার বার প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানার ফলে তারা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের জন্য কাজ করতে চাই।’

(ঢাকাটাইমস/১৩জুলাই/কারই/জেবি)