সম্ভাবনার বাংলাদেশ নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসের কারণ!

সবুজ ইসলাম হিরক
 | প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০২০, ১৭:৫৪

বাংলাদেশ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময় একটি দেশ। যার দক্ষিণে রয়েছে সমুদ্র এবং এর কিনারা ঘেঁষে রয়েছে ঘূর্ণীঝড় থেকে রক্ষা পাওয়ার দেয়াল সুন্দরবন। পশ্চিম-উত্তর-মধ্যমে সমতল আর উত্তর পূর্বে রয়েছে পাহাড়-টিলা সমৃদ্ধ বিস্তৃত উচু ভূমি।

দেশের প্রতিটা জায়গায় জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে প্রাকৃতিক সড়ক নদী নালা, খাল বিল, হাওড়। পলিমাটি, খনিজ সম্পদ, মানবসম্পদে ভরপুর সম্ভবনার এ বাংলাদেশ। পৃথিবীর অন্যতম ধনী রাষ্ট্রগুলো আমাদের মত এত বৈচিত্রময়ী প্রাকৃতিক সৌন্দমন্ডিত নয় কিন্তু তারপরেও তারা ধনী রাষ্ট্র সুখি রাষ্ট্র তাদের মন্ত্রটা কি ?

স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর কথা নিশ্চয় মনে আছে সবার। রেডিও আবিষ্কারক, তার থেকে চুরি করা সূত্র নিয়ে মার্কনী রেডিও আবিস্কারের নকল গৌরবধারী বিজ্ঞানী।

এদেশের মানুষের মেধা সম্পর্কে চিন্তা করলে অবাক হয়ে যেতে হয়। মহাশূন্য স্টেশন নাসা থেকে শুরু করে সমুদ্রের তলদেশেও বাঙ্গালীদের অবদান রয়েছে। কয়েক হাজার বছর ধরে বাঙ্গালীরা বিদেশি জাতীর মাধ্যমে শোষিত শাষিত হয়েছে। তারপরেও এমন কোন সেক্টর নেই যে সেখানে বাঙ্গালীদের অবদান নেই। কিন্তু কেন তারপরেও সম্ভাবনার এ ভূখন্ডের মানুষ ত্রাণের জন্য গাড়ির পিছনে দৌড়ায় ? কেন এদেশের মানুষ স্বাধীনতার এত বছর পরে এসেও গরীব প্রশ্ন থেকে যায়।

প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে যা পাওয়া যায় তা হলো আমাদের দেশের মানুষের চরিত্র। এককথায় বেড়ায় ক্ষেত খাওয়া অবস্থা অর্থাৎ এদেশের মানুষ যাদেরকেই এদেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে তারাই এ দেশকে সম্পদ লুটের আস্তানা বানিয়ে ফেলেছে।

বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করতে যেয়ে এদেশের কিছু চরিত্রহীন পরিচালকদের লুটেরা স্বভাব দেখে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন "দেশ স্বাধীন করে সবাই পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি" "পাকিস্তান সব লুটেপুটে নিয়ে গেছে শুধু চোরগুলা এদেশে রেখে গেছে" " আমি বিদেশ থেকে ভিক্ষা করে আনি আর চাটার গোষ্টি চেটে চেটে খায় আমার গরীব খেতে পায় না"। একজন জাতীর পিতা কতটা রাগান্বিত হলে এমন কথা বলতে পারেন?

এদেশে যুগে যুগে যারাই ক্ষমতার মসনদে বসেছে তারাই নিজেদের আগামী ১শ বছরের আখের গোছানোর পায়তারা করেছে যার জন্য দেখা যায় এদেশের সকল বড় বড় দুর্নীতিবাজ কোন না কোন রাজনীতির সাথে জড়িত।

এদের টাকার পরিমান শুনলে যে কোন লোকের মাথা ঘুরে পিছনে চলে যেতে পারে। একজন পিয়ন,একজন কেরানি শত শত কোটি টাকার মালিক। একজন হিসাব রক্ষক হাজার কোটি টাকার মালিক। তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর একজন সাধারণ কর্মচারী যদি এত এত সরকারি অর্থ লুট করতে পারে তাহলে তাদের উপরে যেসব কর্মকর্তা রয়েছে তারা কত হাজার কোটি রাষ্ট্রীয় টাকা আত্মসাৎ করেছে প্রশ্ন থেকে যায়।

এসব সরকারি বিভিন্ন দপ্তর পরিচালিত হয় সরকারি দলের জনপ্রতিনিধি মন্ত্রী-এমপিদের দ্বারা। তাহলে তারা কত হাজার কোটি টাকা লুট করতে পারে তা সাধারণ ক্যালকুলেটারে হিসাব করা যাবেনা।

এদেশের প্রচলিত একটা নিয়ম হলো কোনো প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারী যদি দুর্নীতি বা অনিয়মের সাথে জড়িত হয় তাহলে তাকে স্থানান্তর অর্থাৎ বদলি করা হয়। এই বদলি করা ট্যাবু কি তার যথাযথ শাস্তি ?

এদেশের একটি খাতও দুর্নীতিমুক্ত কেউ দেখাতে পারবেনা। এদেশের শিক্ষাখাত অনেক আগেই জীবন নির্ভর শিক্ষা থেকে অনেকাংশে সরে এসেছে যার জন্য স্নাতকোত্তর শেষ করেও লাখ লাখ যুবক বেকার থাকে। এদেশের ছেলেরা বিদ্যুৎ এর প্রিপেইড মিটার কম খরচে বানাতে পারে কিন্তু তার পরেও বিদেশ থেকে ট্রিপল গুন বেশী দামে সে মিটার আমদানি করা হয়। এদেশে দুই লাখ টাকার গ্যাস চালিত টেম্পু পনেরো লাখে বিক্রি হয় আসলে মূল ঘটনাটা কি কারা এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে কারা জড়িত প্রশ্ন থেকে যায়।

এদেশে অবকাঠামোগত উন্নয়নের অন্যতম একটা বিষয় হলো মানুষের যাতায়াতের জন্য ও মালবাহী পরিবহন চলাচলের জন্য পাকা রাস্তা নির্মাণ। এই রাস্তা নির্মাণের দু'চার বছর পরে কি অবস্থা হয় তা নতুন করে কাউকে বলতে হবেনা।

দেশের সরকার প্রধানের বাসভবন গণভবন থেকে শুরু করে গরীবের কুঁড়ে ঘরের বরাদ্দে পর্যন্ত দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে। কিছুদিন পূর্বের খবর গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন তাহলে এত এত গোয়েন্দা অনুচর বেতন দিয়ে পুষে লাভটা কি হল! এমপি পাপুলের নথি, শাহেদের নথি, সম্রাট, খালেদ পাপিয়াদের কোন নথি'ই কি গোয়েন্দারা জানতো না? নাকি মাসোয়ারা পেয়ে তারা চুপে ছিল। কেননা ক্যাসিনো সম্রাট, পতিতা পাপিয়া, শাহেদরা একদিনে জন্ম নেয়নি এদেশে।

এখন প্রশ্ন এসে যায় এদের রক্ষাকবজ বা জীবন বিমা কারা? কারা এদের অপকর্ম দেখেও দেখেনা, আর দেখেও কেন একশনে যায়না? তারা কি গোয়েন্দাদের রিমোট এরিয়ার বাইরে? আর এগুলা এক একটা দানবে পরিণত হওয়ার পূর্বেই যদি এদেরকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করে দেয়া হত তাহলে বিদেশের বুকে আজ আমাদেরকে করোনা বোমা খ্যাতি অর্জন করা লাগত না।

এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? কঠোর আইন প্রয়োগ? সবার জন্য সমান আইন? চরিত্র গঠন?

কোনো কিছুতেই কিছু হবেনা যদিনা শর্ষের ভুত তাড়ানো না হয়। অন্যায়ের সাথে আপোষ বলে শব্দ থাকতে পারবেনা হোক সে জাতীয় নেতাদের নাতিপুতা বা হোক সে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা যে কেউ। যেখানে জীবন বাঁচাতে আইসিইউ, অক্সিজেন পাওয়া যায়না সেখানে চেতনার গান গাড়ির হর্ণের মত বিরক্তিকর ছাড়া কিছুই না। যখনই কোন অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করা হয় ঠিক তখনই মানুষ পরবর্তিতে বড় বড় অন্যায় করার সাহস পেয়ে যায়।

নিজস্ব সমুদ্রবন্দরের এই দেশ, পলি মাটির এই দেশ, নদীমাতৃক এই দেশ, জগদ্বীশ চন্দ্র বসুর এই দেশ, শাহ জালাল শাহ পরানের এই দেশ, বঙ্গবন্ধুর এই দেশ, আঠারো কোটি সংগ্রামী কর্মঠ মানুষের প্রাকৃতিক সম্পদ সমৃদ্ধ সম্ভাবনার এই দেশে অন্যায়, অনিয়ম, অবিচার, জুলুম, দুর্নীতির সাথে কোনরূপ আপোষ না করে কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করে একটি সুখি, সমৃদ্ধিশালী উন্নত রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তুলতে হবে এবং প্রমাণ করতে হবে সাত শত বছর পূর্বে বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা বঙ্গ ভ্রমণ শেষে যে বলেছিলেন "বঙ্গ হলো বিভিন্ন নাজ নেয়ামতে পরিপূর্ণ একটা দোযখ" এ কথা মিথ্যা।

ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

মুক্তমত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা