পাঁচ বছরে ১৪০ বাড়ি-ফ্ল্যাট, ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা

প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০২০, ২০:৩৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

ক্যাসিনো কারবারে জড়িয়ে গত পাঁচ বছরে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন পুরান ঢাকার আওয়ামী লীগ নেতা দুই ভাই এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়া। আগে থেকেই পারিবারিকভাবে জুয়া পরিচালনা করলেও ক্যাসিনোতে তারা জড়ান ২০১৪ সালে। এরপর তারা গত পাঁচ-ছয় বছরে সম্পদের পাহাড় গড়েন। এসব সম্পদের মধ্যে রয়েছে- ২৫ কাঠা জমি, ২০টি বাড়ি, ১২০টি ফ্ল্যাট। ৯১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তাদের স্থিতিশীল টাকার পরিমাণ ১৯ কোটি হলেও লেনদেন করেছেন ২০০ কোটি টাকারও বেশি।

মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ বলছে, তাদের বেশিরভাগ সম্পদই দেশে। দুজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা চারটি মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত কাজও শেষ। এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবে সিআইডি।

এই ক্যাসিনো ব্রাদারদের উত্থান মূলত ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সেক্রেটারি জয় গোপালের হাত ধরেই। জয় গোপালকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ২০০৭ সাল থেকে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ওয়ানটেন খেলা হতো। সেখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে খেলা হতো। এনু-রুপনের উত্থান পারিবারিকভাবে। তাদের বাবা জুয়াড়ি ছিলেন। রাজধানীর সদরঘাটেই ছিল তাদের জুয়ার আড্ডা। সেখানেই তাদের পেশাদার জুয়া কার্যক্রমের শুরু। এরপর ২০১৪ সালে বড় পরিসরে ক্যাসিনো কার্যক্রম শুরু হয় ইউরোপীয় আদলে।

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, এনু-রুপনের ব্যাংক হিসাবে জমা ১৯ কোটি ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৯৪ টাকা। আদালতের আদেশে এসব টাকা জব্দ রয়েছে। পুরান ঢাকার বংশাল, ইংলিশ রোড, নয়াবাজার, মতিঝিল, শান্তিনগর, গুলশান, ধোলাইখাল, নবাবপুর এলাকায় সাতটি বেসরকারি ব্যাংকে এসব টাকা জমা রাখেন ক্যাসিনো কারবারি এই দুই ভাই।

ক্যাসিনো ব্রাদার এনু-রুপন কী পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন জানতে চাইলে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ঢাকা ও এর আশপাশে গড়েছেন জমিসহ ২০টি বাড়ি, ১২৮টি ফ্ল্যাট, জমি ২৫ কাঠা। ৯১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তাদের স্থিতিশীল টাকার পরিমাণ ১৯ কোটি হলেও লেনদেন করেছেন ২০০ কোটি টাকারও বেশি। তারা যত সম্পদ গড়েছেন তা সবই ক্যাসিনো থেকে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যেই। তাদের আরও সম্পদের তথ্য খোঁজ করতে আমরা দেশের বিভিন্ন জেলায় তথ্যানুসন্ধান করছি।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) বলছে, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে জড়িত কয়েকজন এজেন্টকে সিআইডি গ্রেপ্তার করে। আদালতে তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের জবানবন্দিতেই মূলত উঠে আসে সেক্রেটারি জয় গোপালের নাম। মূলত তার তত্ত্বাবধানেই ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনোর যাত্রা। এসব তথ্য পাওয়ার পরই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জয় গোপাল সম্পর্কে ডিআইজি ইমতিয়াজ বলেন, ক্যাসিনো সংশ্লিষ্টতার তথ্য আসার পর ৯ মাস আগেই আত্মগোপনে যান জয় গোপাল। সম্প্রতি আমরা তাকে গ্রেপ্তার করেছি। আমরা আশা করছি জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাব।

তাদের ক্যাসিনোতে কারা কারা যেতেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এনু-রুপনের বিরুদ্ধে চলমান চারটি মানি লন্ডারিং মামলার তদন্ত শেষে চার্জশিট দিচ্ছি, যারা জড়িত তাদের নাম আমরা মামলার চার্জশিটে রেখেছি।

এনু-রুপনের বড় ভাই রশিদ ভূঁইয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, তার সম্পর্কেও আমরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তাকেও ধরা হবে।

ক্যাসিনো থেকে প্রতি রাতে এনু-রুপনের কী পরিমাণ আয় হতো জানতে চাইলে সিআইডির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতি রাতে হিউজ অ্যামাউন্ট লেনদেন হতো। বাট ইটস ডিপেন্ডস। ঠিক ফিগার দেয়া সম্ভব নয়। বুঝতেই পারছেন যাদের এতো প্রপার্টি থাকতে পারে, তাদের ইনকাম কী পরিমাণ হতে পারে! এতো প্রপার্টি তারা গড়েছেন ২০১৪ থেকে ২০১৯ সালে, লেনদেনও এই সময়েই সবচেয়ে বেশি। দেশের বাইরে তারা সম্পদ পাচার করেছেন কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে যেটা মনে হয়েছে, তাদের ক্যাসিনোতে অর্জিত অর্থ তারা বাড়ি, ফ্ল্যাট, অলঙ্কারের পেছনে ব্যয় করেছে।‘

তিনি বলেন, আমরা মূলত তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের মামলা তদন্ত করছি। গেন্ডারিয়া থানার মামলায় ১৬ জন, সূত্রাপুরের দুটি মামলায় ১৫ ও ১০ জন এবং ওয়ারীর মামলায় ১১ জনের বিরুদ্ধে আগামী মঙ্গলবার অর্থাৎ এক সপ্তাহের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল করবো।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এনামুল হক এনু ও রুপন ভূঁইয়াদের পুরান ঢাকার বানিয়ানগরের বাসায় এবং তাদের দুই কর্মচারীর বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। সেখান থেকে পাঁচ কোটি টাকা এবং সাড়ে সাত কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় সূত্রাপুর ও গেন্ডারিয়া থানায় তাদের নামে ছয়টি মামলা হয়। পরে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এনু-রুপনের লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাসায় অভিযান চালায় র‌্যাব। ওই বাড়ি থেকে ২৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬০০ টাকা জব্দ করা হয়। ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকার এফডিআরের কাগজ এবং এক কেজি স্বর্ণ জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় দুই ভাইয়ের নামে আরও দুটি মামলা হয়।

অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনও এনু-রুপনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করে। মামলায় এনুর বিরুদ্ধে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের এবং রুপনের বিরুদ্ধে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। তবে দুদক এখনও আদালতে কোনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি।

ঢাকাটাইমস/১৪ জুলাই/এএ/ইএস