এন্ড্রু কিশোরের শেষকৃত্য কাল

প্রকাশ | ১৪ জুলাই ২০২০, ২০:৩৭

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী

লক্ষ-কোটি ভক্তের চোখের জলে বুধবার চিরবিদায় দেয়া হবে উপমহাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোরকে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার ও সার্কিট হাউস এলাকায় খ্রিস্টিয়ান কবরস্থানে সমাহিত হবেন তিনি। এ নিয়ে মঙ্গলবারই প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে।

ক্যানসারের কাছে পরাজিত হয়ে গেল ৬ জুলাই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন প্লে-ব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর। তারপর অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত তার দুই সন্তানের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছিল। বাবা এন্ড্রু কিশোরকে শেষবারের মতো দেখতে সোমবার অস্ট্রেলিয়া থেকে রাজশাহী এসে পৌঁছেছেন তার মেয়ে এন্ড্রু সংজ্ঞা।

আর ছেলে জয় এন্ড্রু সপ্তক ফিরেছেন গত বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই)। করোনা পরিস্থিতিতে মেয়ে এন্ড্রু সংজ্ঞা টিকিট না পাওয়ায় ফিরতে দেরি হচ্ছিল। ফেরার পর সংজ্ঞা হাসপাতালের মর্গে গিয়ে বাবাকে একনজর দেখে এসেছেন। এন্ড্রু কিশোর চলে গেছেন এটা এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে অনেকের।

প্রয়াত এন্ড্রু কিশোরের বড় বোনের স্বামী ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস বলেন, কিশোরকে সমাহিত করার দিন মৃত্যুর পরই ঠিক করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী বুধবার তাকে তার পছন্দের জায়গায় সমাহিত করা হবে।

তিনি জানান, পরিবর্তন আনা হয়েছে শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে। সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আগে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী কলেজে। কিন্তু এতে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

প্যাট্টিক বিপুল বিশ্বাস বলেন, সকাল ৯টায় এন্ড্রু কিশোরের মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘর থেকে নিয়ে সরাসরি সিটি চার্চে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শেষে পাশেই থাকা খ্রিস্টিয়ান কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।

রাজশাহীর সার্কিট হাউস ও কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে খ্রিস্টিয়ান কবরস্থানে শায়িত হবেন এন্ড্রু কিশোর। কবরস্থানে ঢুকেই বাম পাশের একটি স্থান তার পছন্দ। জায়গাটি তিনি আগেই দেখিয়ে দিয়ে গেছেন। এই কবরস্থানেই সমাহিত হয়েছেন শিল্পীর বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মা মিনু বাড়ৈ।

রাজশাহীতে জন্ম নেওয়া এন্ড্রু কিশোর প্রায় ১৫ হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। তাকে বলা হয় ‘প্লেব্যাক সম্রাট’। আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই শিল্পী ক্যানসারে ভুগছিলেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সিঙ্গাপুরেই ছিলেন চিকিৎসার জন্য। কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি চিকিৎসার পরও দ্বিতীয় দফায় তার দেহে ক্যানসার বাসা বাঁধে। ফলে চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেন।

তাই শিল্পীর ইচ্ছায় তাকে দেশে আনা হয় গত ১১ জুন। এরপর থেকে রাজশাহীতে তিনি বোনের বাসায় ছিলেন। গত ৬ জুলাই সন্ধ্যায় এখানেই উপমহাদেশের এই কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এন্ড্রু কিশোরকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে মরদেহ রাখার কথা ছিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনার ও রাজশাহী কলেজ চত্বরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি হচ্ছে না। তাই ভক্তদের শ্রদ্ধাতে জানাতে এই সুর সম্রাটকে সমাধিস্থ করার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় একসঙ্গে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

ওস্তাদ আবদুল আজিজ বাচ্চু স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খোকন এই কর্মসূচির কথা জানান। শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের আহ্বান জানিয়েছে রাজশাহী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটও।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক দীলিপ কুমার ঘোষ জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে বড় আয়োজনে এই কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ নেই। তাই মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর এই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। দেশবাসীকেও তিনি এই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুলাই/এলএ)