করোনা নিয়েও ভয়াবহ প্রতারণা সাহেদের!
র্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া মো. সাহেদ প্রতারণার আইডল। তার উত্থানের শুরু থেকেই পদে পদে প্রতারণার জাল বিস্তার করে আসছেন সাতক্ষীরার এই মানুষটি। এমএলএম ব্যবসার নামে মানুষের টাকা আত্মসাৎ করা, অন্যের জমি দখল করা, নিজেকে একেকসময় সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নেওয়া এসব ছিল তার নিয়মিত কাজ। তবে সবশেষ মহামারি করোনা নিয়েও প্রতারণা করতে ছাড়েনি তিনি।
করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট প্রদান, অর্থ আত্মসাতসহ প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ র্যা বের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বুধবার ভোরে সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সপ্তাহের সোমবার থেকে প্রকাশ্যে আসে সাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালের একের পর এক অনিয়ম। যা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।
র্যা বের অভিযানে জানা গেছে, গত ২৩ মে’র পর করোনার কোনো নমুনা পরীক্ষা করেনি রিজেন্ট। বরং নমুনা ফেলে দিয়ে নিজেদের কম্পিউটারের মাধ্যমে ভুয়া ইউনিক আইডি তৈরি করে মনগড়া রিপোর্ট দিতো রিজেন্ট। পাশাপাশি রিপোর্টে জালিয়াতি করে আইইডিসিআর ও ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন- নিপসমের প্যাড-সিল ব্যবহার করত তারা।
অননুমোদিত কিট দিয়ে করোনা টেস্ট:
দেশে মার্চের শেষের দিকে করোনার প্রকোপ শুরুর পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি হয় সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালের। তারা করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেবে বিনামূল্যে। কিন্তু তারা টাকা নিত রোগীদের কাছ থেকে। শুধু তাই নয়, গত ৬ জুলাই হাসপাতাল অভিযান চালিয়ে করোনা টেস্টের অননুমোদিত কিট পেয়েছে র্যা ব। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা বাংলাদেশ সরকার যে কিট ব্যবহারের অনুমোদন দেয়নি, সেটি দিয়েই টেস্ট করছিল রিজেন্ট।বিনামূল্যের পরীক্ষায়ও টাকা নিত দুই দফায়:
সরকারের সাথে চুক্তি অনুযায়ী করোনা চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে রিজেন্টে করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের কোনো টাকা নেওয়ার কথা না। তবে টেস্টে প্রত্যেকের কাছ থেকে সাড়ে তিন হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা করে নিত তারা। যাদের ‘করোনা পজিটিভ’ রিপোর্ট দেওয়া হতো, তাদের কাছ থেকে ফের পরীক্ষার জন্য আরও এক হাজার টাকা নেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে র্যা ব।
চিকিৎসার টাকা রোগীদের থেকেও নিত, ক্ষতিপূরণ চাইত সরকারের কাছেও। করোনা বিশেষায়িত হাসপাতাল হিসেবে করোনা রোগীদের কাছ থেকে কোনো ফি নেওয়ার কথা না। তবে র্যা ব অভিযানে গিয়ে দেখেছে, রিজেন্ট রোগী প্রতি দেড়লাখ, দুইলাখ ও সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা বিল আদায় করত। পাশাপাশি ‘রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে’ এই বাবদ সরকারের কাছে এক কোটি ৯৬ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ বিল জমা দিয়েছে রিজেন্ট হাসপাতাল। অধিদপ্তর হয়ে সেই বিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে প্রায় অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় ছিল। তবে এখনও কোনও অর্থ ছাড় হয়নি।
অভিযানের কথা বুঝতে পেরে নতুন কৌশল নেয় সাহেদ:
প্রতারণার অভিযোগে হাসপাতালে অভিযান হতে পারে বিষয়টি বুঝতে পেরে আগেভাগেই বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করে সাহেদ। যাতে তার অপরাধ ঢাকা পড়ে যায়। তার অভিনব কৌশলের বিষয়ে র্যা বের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘রিজেন্টের বিরুদ্ধে যখন সবাই অনিয়মের অভিযোগ করছিল তখন রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ এটাকে গোপন করার জন্য একটা প্রেস কনফারেন্স করে। সেখানে তারা বলে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসবে দায়ী না। রিজেন্ট হাসপাতালের ৩ জন কর্মী এর সঙ্গে দায়ী।’
সারোয়ার আলম বলেন, ‘নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণ করতে ১ মাস ৭ দিন আগের ব্যাকডেট দিয়ে ৩ কর্মচারীকে বরখাস্ত করে রিজেন্ট। তাদের বিরুদ্ধে থানায় একটা সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছে রিজেন্ট। অথচ আমরা দেখলাম ওই ৩ কর্মী গত দেড়মাস অফিস করেছে, হাজিরা দিয়েছে।’
তিনি জানান, রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ ফ্লুইড দিয়ে তাদের হাজিরাখাতার সাক্ষরগুলো মুছে দিয়েছে, যাতে সে প্রমাণ করতে পারে যে আগেই তাদের বরখাস্ত করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/বিইউ/এইচএফ)