চুক্তিটা ছিল মানুষের জীবন মরণের, ছেলে খেলার মতো বিষয় না

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২০, ১০:১৪

সাহাদাত পারভেজ

একটি চুক্তি অনুষ্ঠান, অথচ এ নিয়ে কত বিতর্ক। এ বিতর্ক সমাধানে কেউ দায়িত্ব নিচ্ছেন না। সবাই কেবল একে অন্যকে দোষ দিয়ে যাচ্ছেন। যে যার মতো ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। অপরকে দোষারোপ করে নিজেরা তুলসি পাতা হয়ে যাচ্ছেন। কেউ নিজের ঘাড়ে দোষ নিতে চাচ্ছেন না। দেশের স্বার্থে কেউ দায়িত্ব নিয়ে সঠিক কথাটা বলতে পারছেন না। ফলে আমরা আমজনতা একটা গোলক ধাঁধার মধ্যে পড়ে গেছি।

দুই তিন ধরে পত্রিকা পড়ে যা বুঝলাম, একের পর এক অনিয়ম আর কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একে অপরকে দায়ি করছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রী, জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘চুক্তির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিলেতো ফাইল থাকতো। ডিজি ব্যাখা দিলেই সব পাবেন।’

স্বাস্থ্যের ডিজি ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, ‘মন্ত্রণালয় আমার কাছে যে ব্যাখা চেয়েছে, আমি অবশ্যই তার জবাব দেব। সব কিছু চিঠিপত্র দিয়ে হয় না। মৌখিক নির্দেশেও অনেক কিছু হয়। তারপরও বলছি, আমার কাছে প্রমাণ আছে; আমি দিব।’

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেছেন, ‘স্বাস্থ্যের ডিজিকে শোকজ করা হয়েছে। এর ব্যাখ্যার বিষয়ে তিনি আমাদের কিছু জানান নি। তবে বাঁচার জন্য তিনি তাৎক্ষণিক চিঠি দিয়েছেন।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘ডিজিকে যে ফাইল (নোট) দিয়েছেন সেখানে স্পষ্ট লেখা আছে কে নির্দেশ দিয়েছেন। এ নোট এডিজি হয়ে ডিজির কাছে যায়।’
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা স্থানীয় সরকার বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে করোনাসংক্রান্ত বৈঠকের পর মন্ত্রীর অনুরোধেই ওই অনুষ্ঠানে ছিলাম।’প্রায় একই রকম কথা বলেছেন, জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীনও।

ছবি নাকি সত্য বলে। ছবি নাকি ঘটনার নিরব স্বাক্ষী হয়ে থাকে। ফলে এই ছবিটাই এই নিবির রহস্যের সত্য উদঘাটনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। এই ছবিই বলে দেয়, ওই অনুষ্ঠানে কারা উপস্থিত ছিলেন। ছবিতে যাদের দেখা যাচ্ছে তারা সবাই বিশিষ্টজন, দেশের অভিবাবক। অথচ তাদের সামনে করোনার মতো স্পর্শকাতর চিকিৎসার দায়িত্ব পেয়ে গেলো একটা লাইসেন্সবিহীন, সক্ষমতাহীন একটা হাসপাতাল; সাহেদের মতো একজন অথর্ব, প্রতারক, ভাবা যায়? চুক্তিটাতো ছিল মানুষের জীবন মরণের, ছেলে খেলার মতোতো বিষয়টি ছিল না।

তাহলে ওই চুক্তি অনুষ্ঠানে আমাদের এই দায়িত্বশীল অভিবাবকরা আসলে কি করছিলেন?
চুক্তির দায় শুধু অধিদপ্তরের, মন্ত্রণালয় কিছু জানে না; এই বলে কী দায়িত্ব এড়ানো যায়? এই যজ্ঞে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের কারো কি এই দায় এড়ানোর সুযোগ আছে?

লেখক: সংবাদচিত্রী ও শিক্ষক

ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/এসকেএস