মাদক-গরু পাচার ঠেকাতে সীমান্ত পাহারায় গ্রামবাসী

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২০, ১৩:১৬

রাজশাহী ব্যুরো,ঢাকাটাইমস

সামনে ঈদুল আযহা। ভারত থেকে আনা হতে পারে গরু। ঈদ উপলক্ষে আসতে পারে মাদকও। এমন পরিস্থিতিতে রাত জেগে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন রাজশাহীর একটি গ্রামের বাসিন্দারা। পাচার ঠেকাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের সঙ্গে তারাও পালা করে এই কাজ করছেন।

ছোট্ট এই গ্রামটির নাম চরখিদিরপুর। গ্রামের তিন পাশেই ভারত। কিন্তু কাঁটাতারের বেড়া নেই। তাই এখান দিয়েই চোরাচালানের ঝুঁকি বেশি। সে কারণেই গ্রামবাসী সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন। চরখানপুর রাজশাহীর পবা উপজেলার মধ্যে পড়েছে। তবে সেটি রাজশাহী শহরের দক্ষিণে পদ্মা নদীর ওপারে।

গ্রামটিতেই বিজিবির চরখানপুর সীমান্ত ফাঁড়ি (বিওপি)। সীমান্তে সতর্ক নজর রাখেন বিজিবি সদস্যরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন গ্রামবাসী। সীমান্তে চোরাচালান ঠেকাতে গ্রামের ১৬ জন ব্যক্তিকে নিয়ে দুটি দল গঠন করা হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ৮ জন সীমান্ত পাহারা দেন। তারা ৪ জন করে ভাগ হয়ে সীমান্তে নজর রাখেন। একইভাবে অপর ৮ জন রাত ১২টা থেকে ভোর পর্যন্ত সীমান্ত পাহারা দেন। কখনও কোন এলাকায় সন্দেহজনক কিছু মনে হলে মুঠোফোনে খবর দেন বিজিবিকে। তারা গিয়ে পরিস্থিতি দেখেন।

চরখিদিরপুরের বাসিন্দা পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী সদস্য কোহিনুর বেগম জানান, তাদের গ্রাম এখনও করোনামুক্ত। কিন্তু ভারত থেকে যদি গরু আসে তাহলে করোনারও আসার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বিজিবি তাদের বুঝিয়েছে যে নিজেদের গ্রাম নিজেদেরকেই নিরাপদ রাখতে হবে। তাই দুটি দল গঠন করে তাদের গ্রামের পুরুষরা ৯ জুলাই থেকে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছেন।

রাতে সীমান্ত পাহারায় থাকেন গ্রামের বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, চরে চাষবাস করি। গরু-ছাগল পালন করি। সামনে কোরবানি ঈদ। ভারত থেকে যদি গরু আসে তাহলে বাংলাদেশের গরুর দাম কমে যাবে। আমার যে গরুর দাম ৮০ হাজার, সেটা তখন ৫০ হাজারে বিক্রি করতে হবে। আমিই লোকসানে পড়ব। তাই ভারতীয় গরু আসা বন্ধ থাকা দরকার। সেই চিন্তা থেকেই আমি সীমান্ত পাহারা দেই।

চরখিদিরপুরের গ্রাম্য চিকিৎসক পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, আমাদের গ্রামের কেউ মাদকের সঙ্গে এখন সম্পৃক্ত না। ওপারের গ্রাম থেকে লোকজন এসে সীমান্ত থেকে ফেনসিডিল পাচার করে নিয়ে যেত। গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে তা এখন বন্ধ হয়েছে।

বিজিবির রাজশাহীর ১ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সীমান্ত এলাকায় আমাদের চারটি বিওপি রয়েছে। সবখানেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একটি করে কমিটি গঠন করেছেন। আমাদের প্রয়োজন হলেই সেই কমিটির সদস্যরা এভাবে সীমান্ত পাহারায় আসেন।

তিনি বলেন,  গ্রামবাসী স্বতস্ফূর্তভাবেই এগিয়ে আসছেন। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করার উদ্দেশ্যেকে সামনে রেখেই আমরা এভাবে কাজ করছি। এতে ভালো ফল মিলছে।

ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/পিএল