নিউইয়র্কে ফ্ল্যাটে পাঠাওয়ের প্রতিষ্ঠাতার খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহ

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২০, ১৩:৫২ | আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০, ১৪:০৫

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস

বাংলাদেশে রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পাঠাও এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহর খণ্ড-বিখণ্ড মরদেহ পাওয়া গেছে নিউইয়র্কের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে। এই বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ফাহিম সালেহর মালিকানাধীন ছিল।

নিউইয়র্কের পুলিশ বলছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলে সালেহর খণ্ড-বিখন্ড মরদেহ পাওয়া যায়। এ সময় তার মরদেহের পাশে একটি যান্ত্রিক করাত পাওয়া যায়। নিউইয়র্কের পুলিশ ধারণা করছে, পেশাদার খুনিরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

ফাহিম সালেহর শরীরের বিভিন্ন অংশ অ্যাপার্টমেন্টে ছড়ানো ছিটানো ছিল এবং কিছু অংশ একটি ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছিল। খবর বিবিসির।

ব্রিটেনের ডেইলি মেইল অনলাইনের খবরে ফাহিম সালেহকে একজন মিলিয়নিয়ার প্রযুক্তি বিষয়ক উদ্যোক্তা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

সালেহর বোনকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা লিখেছে, নৃশংস এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রথমে জানতে পারে ফাহিম সালেহর বোন।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, মঙ্গলবার সারাদিন ফাহিম সালেহর সঙ্গে কোন যোগাযোগ না হওয়ায় বিকেল ৩:৩০ মিনিটে সপ্তম তলায় তার সঙ্গে কথা বলতে যান। সেখানে গিয়ে তার বোন ফাহিম সালেহর খণ্ড-বিখন্ড মরদেহ দেখতে পান।

পুলিশকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, অ্যাপার্টমেন্টের নিরাপত্তা ক্যামেরায় দেখা গেছে কালো স্যুট এবং কালো মাস্ক পরা একজন ব্যক্তির সঙ্গে একই লিফটে প্রবেশ করেন ফাহিম সালেহ। লিফট ফাহিম সালেহর অ্যাপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়ালে দুজনেই সেখান থেকে বের হয়ে যান।

এরপর ফাহিম সালেহ তার অ্যাপার্টমেন্টে প্রবেশ করেন। তখন সেই ব্যক্তি ফাহিম সালেহকে অনুসরণ করে। পুলিশ বলছে, এরপর দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ফাহিম সালেহর জন্ম সৌদি আরবে। এরপর পরিবারের সঙ্গে তিনি নিউইয়র্কে চলে যান। সালেহ পড়াশুনা করেছেন নিউইয়র্কে।

ঢাকায় পাঠাও রাইড শেয়ারিং এর একজন কর্মকর্তা ওসমান সালেহ বিবিসিকে বলেন, ফাহিম সালেহ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি তারা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানতে পেরেছেন। তিনি বলেন, 'আমরা এই ঘটনায় শকড। বিষয়টা কিভাবে ঘটেছে সে সম্পর্কে আমরা এখনো বিস্তারিত কিছু জানিনা'।

তিনি জানান, বাংলাদেশে অ্যাপ-ভিত্তিক রাইড শেয়ারিং পাঠাও প্রতিষ্ঠার পরে থেকে ফাহিম সালেহ চেয়েছিলেন আফ্রিকা মহাদেশে ব্যবসা বিস্তার করতে।

এর অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে নাইজেরিয়াতে 'গোকাডা' নামে একটি রাইড শেয়ারিং সার্ভিস চালু করেন। তার সঙ্গে সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আরো একজন ছিলেন।

কিন্তু প্রতিষ্ঠার এক বছরের মধ্যেই সংকটে পড়েন তারা। কারণ নাইজেরিয়ার সরকার মোটরসাইকেলে রাইড শেয়ারিং নিষিদ্ধ করে। 'টেককাবাল' নামে নাইজেরিয়ার একটি প্রযুক্তি বিষয়ক গণমাধ্যম রিপোর্ট করেছে যে, সংকটে পড়ার আগে এক বছরেই 'গোকাডা' ৫৩ লাখ ডলার আয় করে।

যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ হয়ে গেলে 'গোকাডা' পার্সেল ডেলিভারি সার্ভিস চালু করে। বর্তমানে নাইজেরিয়ার রাজধানী লেগোসে তাদের ১০০০ মোটরসাইকেল রয়েছে।

ফাহিম সালেহ নিউইয়র্কে বসবাস করতেন। ২০১৪ সালে তিনি ঢাকায় এসে প্রযুক্তি-ভিত্তিক কিছু ব্যবসার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলো ব্যর্থ হয়। এরমধ্যে 'পাঠাও' উদ্যোগ সফল হয়েছিল। শুরুতে পণ্য পরিবহন সার্ভিস থাকলেও পরবর্তীতে রাইড শেয়ারিং সেবাও চালু করে পাঠাও।

পাঠাও প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ফাহিম সালেহর সঙ্গে আরো দু'জন ছিলেন। পরবর্তীতে ফাহিম সালেহ তার কিছু শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে নিউইয়র্কে ফিরে আসেন। এরপর তিনি 'পাঠাও' এর আদলে অন্য দেশে ব্যবসার চিন্তা করেন।

ঢাকা টাইমস/১৫জুলাই/একে