ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে প্রশিক্ষণ পাওয়া ফুটবলার এখন পরিচ্ছন্নতাকর্মী

প্রকাশ | ১৫ জুলাই ২০২০, ২৩:১৫

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ম্যানচেস্টার থেকে ফিরে ঝাড়ু হাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করছেন বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে প্রশিক্ষণ পাওয়া ফরিদপুরের ফুটবলার রিপন কুমার দাস। সংসারের অভাব-অনাটন তাকে বাধ্য করেছে এ কাজে।

রিপনের এই কাজের জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও বাফুফের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এমন অবস্থা বলে মনে করছেন ফুটবলের সঙ্গে জড়িতরা।

শৈশবে গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলতেন রিপন। অল্প বয়সেই পায়ের নৈপুন্যে নজর কেড়েছিলেন তিনি। যাতে উৎসাহ দেয় পাড়া-পড়শি, বন্ধু-বান্ধবরাও। ধীরে ধীরে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন দানা বাঁধে বুকে।

রিপনের মা পান্তা দাস বলেন, আমার দুই ছেলে রিপন সবার বড়। ছোট ছেলে তপন এখনও কিছু করে না। রিপন এতবড় একজন ফুটবলার শুধু সংসারের অভাবের কারণে বেছে নিতে হয়েছে ওর বাবার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ। এতে আমাদের খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। রিপন যদি আয় রোজগার না করতে পারে, তাহলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।

ফরিদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম খন্দকার লেভী জানান, রিপন দাস ২০১২ সালে এয়ারটেলের রাইজিং স্টার চ্যাম্পিয়ন হয়ে ১২ জনের একটি টিমের সঙ্গে ১৭ নভেম্বর ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবে অনুশীলন করার জন্য বিদেশে যান। এরপর সেখানে ১০ দিনের অনুশীলন শেষ করে ফিরে আসেন দেশে।

দেশে আসার পর বাফুফের তদারকির অভাবে তাকে ফিরে আসতে হয় নিজ জেলায় ফরিদপুরে। ফরিদপুরে আসার পরে সংসারের অভাব-অনটনের কারণে তাকে বেছে নিতে হয় বাবার কর্মস্থল ফরিদপুর সড়ক বিভাগে মাস্টার রোলের পরিচ্ছন্নতার কাজ।

গত কয়েক বছর ধরে এই কাজ করছেন ফরিদপুর সড়ক বিভাগে তিনি। প্রতিদিনের রুটিন কাজ শেষে তিনি সুযোগ করে বল নিয়ে নেমে পড়েন যে কোন মাঠে।

ফরিদপুর জেলা ফুটবল টিমের কোচ প্রণব কুমার মুর্খাজী বলেন, রিপনের ফুটবলের প্রতি বিশেষ প্রেম রয়েছে। যে কারণে অফিসের পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে সুযোগ পেলেই অনুশীলন করতে স্টেডিয়ামে চলে আসে। এখনো তার ইচ্ছা দেশসেরা ফুটবলার হওয়া।

ফরিদপুর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ভোলা জানান, রিপনের মতো ফুটবলার তৈরি হয় খুব কম। বাফুফে যদি সঠিকভাবে ভূমিকা নিত, তাহলে তাকে এভাবে ঝড়ে পড়তে হতো না। এখনো তার অনেক সুযোগ রয়েছে।

ফুটবলার রিপন কুমার দাস জানালেন, সংসারের অভাব-অনাটনের কারণে আমি এখন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। বাবা-মায়ের কষ্টের কথা চিন্তা করে কাজ করছি।

তিনি বলেন, চেয়েছিলাম বড় ফুটবলার হতে। এতে সংসারের দৈন্যদশা কাটবে কিন্তু তা হয়নি। সরকার যদি আমার বিষয়টি দেখে তাহলে হয়তো আমি আবারও বল নিয়ে মাঠে দর্শকদের মনজয় করতে পারব।

তিনি বলেন, ইংল্যান্ডে যাওয়ার পরে সে দেশের নামকরা ফুটবল তারকারা আমাদের সময় দিয়েছিলেন। দেখিয়েছেন, কীভাবে আরো ভাল ফুটবল খেলা যায়। ফুটবল খেলার মান কীভাবে উন্নত করা যায়। কিন্তু সেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগাতে পারিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৫জুলাই/এলএ)