সাত বছর সাজাপ্রাপ্ত আলফা সাতক্ষীরা সীমান্তে অবৈধ পারাপারের নিয়ন্ত্রক

নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ জুলাই ২০২০, ১৪:২০

সাতক্ষীরার শীর্ষ চোরাকারবারি আল ফেরদৌস আলফা। অবৈধ সীমান্ত পারাপারের নিয়ন্ত্রক। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। একসময় তার কিছু ছিল না। বর্তমানে বেশুমার অর্থ-সম্পদ। তা দিয়ে কিনেছেন সম্মানও। চোরাকারবারির গ্লানি মুছতে গত সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ নির্বাচনে বৃষ্টির মতো টাকা ঢেলে হয়েছেন জেলা পরিষদের সদস্য।

এমনটাই দাবি সাতক্ষীরার একাধিক ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের। তার এই চোরাচালান দক্ষতা দিয়ে প্রতার সাহেদকে সীমান্ত পার করে দিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন।

বিভিন্ন নথি সূত্রে জানা গেছে, চোরাকারবারির অভিযোগে ওয়ান-ইলেভেনের সময় যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন আলফা। সে সময় আদালতে তার সাত বছরের সাজা হয়। কয়েক মাস জেল খেটে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি।

দেবহাটা উপজেলার পারুলিয়া ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের আবুল কাশেম সরদারের ছেলে আলফা। ২০১৪ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ৪০৪ জন অস্ত্র ব্যবসায়ীর তালিকায় তার নাম ছিল।

দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের মানুষ জানান, যদিও তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস নেই কারও। অবৈধ টাকায় ভোট কিনে জেলা পরিষদের সদস্য হয়ে নিজেকে জাতে তোলার চেষ্টা করেন তিনি।

তার আপন সহোদর আব্দুল আলিম বিজিবি সদস্য হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি বলে সদর থানায় দায়েরকৃত ৩৮ নম্বর মামলা সূত্রে জানা গেছে। এই মামলা ২০১৩ সালের নভেম্বরে দায়ের করেন ভোমরা বিজিবির নায়েক মো. নাসির উদ্দীন। জানা যায়, চোরাচালান পণ্য আটক করতে যাওয়ায় ওই বিজিবি সদস্যকে ট্রাক চাপা দিয়ে হত্যা করেন আলিম।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর আল ফেরদৌস আলফা ও তার সহোদর আবদুল আলিমকে গ্রেপ্তার করে সাতক্ষীরা পুলিশ। আলফা ও আলিমের সাতক্ষীরার মামলার বরাত দিয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, গত ২৯ ডিসেম্বর ৩৩ বিজিবির একটি টহল দল ট্রাকভর্তি ভারতীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ মামুনুর রশিদ ও আকবর হোসেন নামে দুজনকে আটক করে। এ ঘটনায় সদর থানায় ৩০ ডিসেম্বর বিজিবি আলিপুর বাঁকাল চেকপোস্টের হাবিলদার মো. মোহসিন আলী বাদী হয়ে আটক দুজনসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন।

জব্দকৃত ৬ হাজার ৪৫০ কেজি মাছ সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভোমরা স্থলবন্দর এলাকা দিয়ে আনা হয় বলে বিজিবি মামলায় উল্লেখ করে। ট্রাকসহ ভারতীয় মাছের মূল্য ১ কোটি ৪২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

আলফার মামলারগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের ৮ এপ্রিল সাতক্ষীরা সদর থানার মামলা নম্বর ১৯। ২০০৭ সালের ২৫ জানুয়ারি দেবহাটা থানার মামলা নম্বর-৫। এই মামলায় তার ৭ বছরের সাজা হয়। এর আগ ২০০৫ সালের ১৪ জানুয়ারি দেবহাটা থানার মামলা নম্বর ৭, ২৫(খ)।

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা শাকরা কোমরপুরের আলফার মাছের ঘেরে আশ্রয় নিয়েছিল প্রতারণা মামালার পলাতক আসামি রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ করিম। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পর্যন্ত অন্তত চার দিন আলফার মাছের ঘেরে সুসজ্জিত এসি রুমেই রাতযাপন করেন ৫৬ মামলার আসামি সাহেদ।

মূলত আশ্রয়দাতা আলফাই তাকে নৌকা করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সব বন্দোবস্ত করেছিলেন।

সাহেদ আটক হওয়ার পরপরই আলফা পালিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সৈয়দ আমিনুর রহমান বাবু বলেন, আলফার বিষয়ে তিনি তেমন কিছুই জানেন না। তবে পত্রপত্রিকায় তার বিরুদ্ধে চোরাকারবারিসহ বিভিন্ন অভিযোগের বিষয় তার নজরে এসেছে।

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের নেতা ভোমরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম বলেন, আলফা চোরাকারবারি এটা সবাই জানে। এখানে অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারও আলফার লোকজন করে। আলফা তাকে ভারতে পার করে দেবে এমন ইঙ্গিত পেয়েই হয়তো সাহেদ এখানে এসেছিল।

প্রতারক সাহেদকে আলফার ঘেরের পাশ থেকে আটিক করে র‌্যাব।

আলফা বর্তমানে ভারতীয় ছাটি ও রেনুর ব্যবসা পরিচালনা করেন জানিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল ইসলাম বলেন, আলফা অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারসহ এ ধরনের কর্মকাণ্ড দীর্ঘদিন ধরে জড়িত বলে সাতক্ষীরাবাসী সবাই জানে।

রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে ভারতে পার করে দিতে ৫০ লাখ টাকায় রফা করেছিলেন আল ফেরদৌস আলফা- এমন খবরও গণমাধ্যমে চাওর হয়েছে। এ জন্য নিজের মাছের ঘেরে সুসজ্জিত এসি ঘরে চার দিন সাহেদকে রেখেছিলেন তিনি। এর মধ্যেই আলফা ব্যবস্থা করেন নৌকা ও মাঝি।

পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাবের হাতে সাহেদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্রের মাধ্যমে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আলফার মাধম্যেই ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন ৫৬ মামলার আসামি প্রতারক সাহেদ করিম।

করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদ ভারতে পালানোর সময় বুধবার (১৫ জুলাই) ভোরে সাতক্ষীরা সীমান্তে র‍্যাবের হাতে ধরা পড়েন।

করোনাভাইরাস শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা না করেই ভুয়া সনদ দেওয়ার অভিযোগ ৬ জুলাই র‌্যাব সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। এরপর থেকে পলাতক ছিলেন তিনি। ঘন ঘন স্থান বদল, নিজের মোবাইল ফোন ফেলে দেওয়াসহ নানা কৌশলে গত ৯ দিন র‍্যাবকে ফাঁকি দিয়ে গেছেন তিনি।

সাতক্ষীরায় কয়েক জায়গা বদল করে সাহেদ বুধবার সীমান্ত পাড়ি দেবেন- এমন তথ্য পেয়ে র‍্যাব সারা রাত সীমান্তে উত পেতে থাকে। অবশেষে দেবহাটার রামগতি সীমান্ত এলাকার লবঙ্গবতী নদীর তীর থেকে তাকে অবৈধ অস্ত্রসহ বোরকা পরা অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়।

বোরকার নিচে সাহেদের পরনে ছিল জিন্সের প্যান্ট ও নীল রঙের শার্ট। কোমরে ঝোলানো একটি পিস্তল। তাতে তিন রাউন্ড গুলি।

র‍্যাবের সাতক্ষীরার কোম্পানি কমান্ডার (সিপিসি-১) বজলুর রশীদ বলেন, দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর বেইলি ব্রিজের দক্ষিণ পাশের লবঙ্গবতী নদীর পাড় থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করা হয়। নদীর ঠিক ধারে একটি নৌকা রাখা ছিল। ওই নৌকায় করে ভারতে পালানোর প্রস্তুতি ছিল সাহেদের।

গ্রেপ্তারের পর সাহেদকে সাতক্ষীরা জেলা স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে র‍্যাবের সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং শেষে সাহেদকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়।

সরকারের সঙ্গে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে টাকার বিনিময়ে করোনাভাইরাস শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ করা এবং ভুয়া সনদ দেওয়ার অভিযোগ ৬ জুলাই র‌্যাব রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। পরদিন উত্তরা পশ্চিম থানায় র‌্যাব বাদী হয়ে মো. সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে মামলা করে। সেই মামলায় ৯ দিন পলাতক থাকার পর গ্রেপ্তার হন মো. সাহেদ।

সাহেদ নিজেকে আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্র উপকমিটির নেতা দাবি করতেন। বিভিন্ন টিভিতেও এই পরিচয়ে টকশোতে অংশ নিতেন। এ ছাড়া তিনি এর আগে বিভিন্ন সময় নিজেকে কখনো সেনা কর্মকর্তা, প্রধানমন্ত্রীর এডিসি বলে পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন।

(ঢাকাটাইমস/১৬জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :