সাহেদ-সাবরিনাদের লাইসেন্স প্রদানকারীদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে

আরিফ জেবতিক
 | প্রকাশিত : ১৬ জুলাই ২০২০, ১৬:২৯

কেউ কেউ টকশোতে নতুন নতুন গেলে খুব উত্তেজিত হয়ে ছবি তুলেন। হোস্ট আপা এদিকে তাকান-ক্লিক। গেস্ট ভাই ওদিকে তাকান-ক্লিক। প্রোডাকশনে জড়িত ক্যামেরা পারসন কিংবা ফ্লোর সহকারীকে ডেকে তাঁর হাতে ক্যামেরা ধরিয়ে দিয়ে গ্রুপ ছবি-ক্লিক।

একজনকে একবার দেখলাম ক্যামেরায় চোখ রেখে ডিরেক্টর ভাব নিয়েছেন-ক্লিক। এমন ভাবে ক্যামেরা নিয়ে জড়াজড়ি করছিলেন যে আমার ভয় হচ্ছিল ক্যামেরাটা স্ট্যান্ড সহ নিয়ে হুড়মুড় করে পড়েন কী না।

এই বিষয়গুলো দেখার মধ্যে মজা আছে।

তাই টকশো হোস্টের সাথে কোনো দুর্বৃত্তের ছবি থাকলেই সেই হোস্টকে গালমন্দ করা বা তাঁকেও দুর্নীতিবাজ ভাবাটা ঠিক নয়। আজকাল সবার পকেটে ক্যামেরা, জীবনের প্রতিদিনই কারো না কারো সাথে সামাজিকতায় দেখা হতে পারে, এবং সেখানে ছবি যে কেউ তুলতে পারে।

আপনি ছ্যাচড়া সাংবাদিক আর প্রকৃত সাংবাদিককে তাঁদের টাইমলাইন দেখেই চিনতে পারবেন। ভালো সাংবাদিকের টাইমলাইন তাঁর দৈনন্দিন জীবন যাপনের গল্পে ভরপুর। সে যদি টঙের দোকানে পাশের মহল্লার কুদ্দুসের সাথেও চা খায়-সেই ছবি দিতে কুণ্ঠিত হয় না আবার যদি ট্রাম্পের সাথে চা খায়, সেটাও একই গুরুত্ব দিয়ে দেয়। স্রেফ জীবন যাপনের সরল রৈখিক গল্প থাকে এদের টাইমলাইনে।

টাউটগুলোর টাইমলাইনে সবসময় দেখবেন হোমড়া চোমড়াদের সাথে ছবি। এরা টঙ দোকানের ছবি দেবে না, কিন্তু কেউ যদি একদিন ফাইভস্টারে খাওয়ায়, সেই ছবিটা অনেক ফেনিয়ে ফেনিয়ে দেবে। শুধু একবার দিবে তা না, প্রতিবছর ফেসবুক মেমোরী থেকেও সেই ছবি হয়তো শেয়ার দেবে। আমার মতে এগুলো ব্যক্তিত্বহীনতার ডিজঅর্ডার। কিছু লোক ক্ষমতাবানদের সাথে ছবি তুলে নিজেদের সম্পর্ক দেখিয়ে তৃপ্তি পায়।

যাক, টক শো হোস্ট ব্যবচ্ছেদের জন্য এই পোস্ট নয়। আমার কথা হচ্ছে, সবসময় দেখবেন যে বড় বড় দুর্নীতিবাজ বা টাউট বাটপার ধরা পড়ার পরে আমরা সেই বাটপারকে আর তার সাথে ছবি তোলা লোকদেরকেই গালাগালি করি, এর ফাকে আসল অপরাধীরা যেহেতু ফেসবুকে নেই তাদের ব্যাপারে আলাপ করি কম।

এই শাহেদের কথাই ধরুন। শাহেদকে কাজ দিয়েছে কারা? স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জেকেজিকে কাজ দিয়েছে কে? স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এদের প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব ছিল এই জেকেজি কিংবা রিজেন্টকে অডিট করা। এদের কাগজপত্র পরীক্ষা করা, এদের প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে পরিদর্শন করা-তারপর চুক্তি করা। এই কাজের জন্যই এই মন্ত্রনালয়, এই অধিদপ্তর এসব তৈরি করা হয়েছে। এইসব কাজ দেখার জন্য আমরা এদের বেতন দেই।

এই যে কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়ে আমাদের স্যাম্পলগুলো ড্রেনে ফেলে দিল, এর দায় দায়িত্ব কি শুধুই আরিফ চৌধুরী-ডা. সাবরিনা-শাহেদ দের?

আপনারা কি মনে করেন যে কাউকে এই টাকার ভাগ না দিয়ে এই অরাজকতা করা সম্ভব ছিল? শাহেদের ভুড়ি আর সাবরিনার শাড়ি নিয়েই যদি আপনি ব্যস্ত থাকেন, তাহলে আপনি টেরই পাবেন না যে আপনার আমার পেছন দিয়ে ট্রেন চালিয়ে দিচ্ছে।

ফোকাস ঠিক করেন। ভুড়ি ও শাড়ির আলাপ বাদ দিয়ে, মুক্তকণ্ঠে পরিস্কার করে জিজ্ঞেস করেন, আরিফ-সাবরিনা-শাহেদের পাশাপাশি এদেরকে লাইসেন্স দেয়া শুওরের বাচ্চাদেরকেও কেন খোঁয়াড়ে ঢোকানো হবে না?

লেখক: কলামিস্ট ও ব্লগার

ঢাকাটাইমস/১৬জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :