কথা বলায় গ্রাহকের লাগামে অপারেটরগুলোর আয়ে ভাটা

আসাদুজ্জামান, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৬ জুলাই ২০২০, ০৩:৪৬

কোভিড-১৯ তথা করোনা মহামারীর মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের ভয়েস কল উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ফলে অপারেটরগুলোর আয়ে বড়ো ধরনের প্রভাব পড়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সিম ও রিম সম্পর্কিত সেবার ওপর সম্পূরক বৃদ্ধিকে তাদের আয়ে ভাটা পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে সিম ও রিমের ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বেড়েছে। এতে করে গ্রাহকরা মোবাইল ফোনে কথা বলা কমিয়ে দিয়ে বিনামূল্যের অ্যাপভিত্তিক পরিষেবা ব্যবহার করে অডিও-ভিডিও কল এবং ক্ষুদে বার্তা আদান-প্রদান করছেন। ফলে মোবিইল ফোন অপারেটরগুলোর আয়ের ওপর বড় প্রভাব পড়েছে।

টেলিকম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে টানা দুই মাস লকডাউন চলে। এই সময়ে মানুষ গৃহবন্দি জীবন-যাপন করেছে। হিসাব মতে, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনে কথা বলার হার বাড়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) ৩১ মার্চে প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা উভয়ই কমেছে।

বিটিআরসির হিসাবে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বলতে মোবাইল ফোন অপারেটরদের সিম ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্যবহারকেই বোঝায়। কিন্তু ব্যবহারকারীদের সংখ্যা কথা বলে জানা গেছে, লকডাউনের সময় যেহেতু বাসা-বাড়িতে বসেই অফিস-আদালতের কাজ সারতে হয়েছে তাই অনেকেই কম খরচে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ নিয়েছেন।

লকডাউন পরবর্তী সময়েরও টেলিকম অপারেটরগুলোর সরবরাহকৃত ইন্টারনেট ব্যবহার না করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটই ব্যবহৃত হয়েছে। অন্যদিকে টেলিকম অপারেটরগুলোর মোবাইল ফোনে কথা বলার কল রেট বেশি হওয়ায় অনেকেই অ্যাপস ভিত্তিক আইপি টেলিফোন সেবা উপভোগ করেছে। কেননা আইপি টেলিফোনের কল রেট মাত্র ৩০ পয়সা। প্রতি সেকেন্ডে পালসও রয়েছে।

অপারেটরগুলোর আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আরেকটি কারণ ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট। এই বাজেটে মোবাইল ফোনের সিম ও রিম সংক্রান্ত পরিষেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

এতে কলরেট যেমন বেড়েছে তেমনি বড়েছে ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচও। তাই মোবাইল এখন হিসাব করে কথা বলছেন। প্রয়োজনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ফেসবুক মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ইমোর মতো বিনামূল্যের প্লাটফর্মগুলো ব্যবহার করছে।

রবির মিডিয়া ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘করোনার কারণে গত কয়েক মাস ধরে আমাদের দৈনিক রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪ কোটি টাকা। বাজেটে সিম ও রিম সেবার উপর সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির পরে গত কয়েকদিনে আমাদের আয় আরও ৪-৫ থেকে শতাংশ কমেছে। এর মাধ্যমে সার্বিকভাবে সরকার ও অপারেটরদের রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার যে আশঙ্কা আমরা প্রকাশ করেছিলাম সেটিই সত্য প্রমাণিত হয়েছে।’

৩১ মে ২০২০ পর্যন্ত রবির গ্রাহক ছিল ৪ কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩ কোটি ২২ লাখ। অর্থাৎ মোট গ্রাহকের ৬৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।

বাংলালিংকের হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড সাস্টেনিবিলিটি আংকিত সুরেকা ঢাকা টাইমস বলেন, ‘দেশের মোবাইল গ্রাহকরা আগে থেকেই উচ্চ করের বোঝা বহন করে মোবাইল ফোন সেবা গ্রহণ করে আসছিলেন। এরইমধ্যে আবার অতিরিক্ত ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করায় স্বল্প আয়ের গ্রাহকরা প্রভাবিত হচ্ছেন।’

‘ফলে বাংলাদেশের ডিজিটালাইজেশনের প্রক্রিয়ায় তাদের অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে পড়তে পারে। বিষয়টি গ্রাহক সংখ্যা ও আমাদের আয়ের উপর ঠিক কতোটা প্রভাব ফেলেছে তা আগামী মাসে ভিওন কর্তৃক প্রকাশিত বাংলালিংকের দ্বিতীয় প্রান্তিকের ফলাফল দেখে বোঝা যাবে।’

এদিকে শীর্ষ মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে গ্রামীণফোনের রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৩০৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা আগের বছর এসময় ছিল ৩ হাজার ৬০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

করোনাভাইরাস মহামারী, নিয়ন্ত্রণী বিধিনিষেধ ও বৈরী আবহাওয়াকে রাজস্ব আয় কমার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে গ্রামীণফোণ। আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী, এই তিন মাসে গ্রামীণ ফোনের করপরবর্তী মুনাফা কমেছে প্রায় ২৪ শতাংশ।

গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান জানান, চার মাস ধরে মহামারির প্রভাবে কাজের ধরন থেকে শুরু করে আমাদের গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হয়েছে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির হিসেবে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর দিকে মার্চ শেষ নাগাদ গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৫৩ লাখ ৩৩ হাজার। মে শেষ নাগাদ তা কমে ৭ কোটি ৪২ লাখ ৬০ হাজারে নামে। আর গ্রামীণফোনের হিসাবে, এর পর থেকে তা কিছুটা বেড়ে ৭ কোটি ৪৫ লাখে উঠেছে, যার মধ্যে ৪ কোটি ৮ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।

(ঢাকাটাইমস/১৬জুলাই/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা