করোনাকালে ব্যতিক্রমী সাহিত্য আয়োজন

প্রকাশ | ১৬ জুলাই ২০২০, ২২:৫৬

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বৈশ্বিক মহামারি করোনায় দেশের সবকিছু অনেকটা থমকে আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ। ঠিক তখন ফেইসবুক ভিত্তিক একটি সংগঠন  লকডাউনের পুরো সময় জুড়ে অনলাইনে শিশু কিশোরদের জন্য সাহিত্য আয়োজন করলো। এই প্রতিযোগিতায় শিশু-কিশোররা তাদের চিন্তার সব টুকু ঢেলে দিয়ে নানা বিষয়ের উপর লিখেছে। পরে যাচাই বাছাই শেষে পুরস্কৃতও করা হয়েছে এসব শিক্ষার্থীদের।

এই ভিন্নধর্মী আয়োজনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়ে আসে চট্টগ্রামের রাউজান থানার পশ্চিম গহিরা গ্রামের কয়েকজন তরুণ। পশ্চিম গহিরা বড়ুয়া পাড়ার এই তরুণরা ফেসবুকে এই ব্যতিক্রমী সাহিত্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। পুরো আয়োজনটি করা হয় ফেসবুকে West Gohira Barua Para গ্রুপে।

গ্রুপের এডমিন সফল বড়ুয়া শ্রেষ্ঠ জানান, প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য ছিল বিভিন্ন বয়সের শিক্ষার্থীরা যেন লকডাউনের সময়ে স্কুল কলেজে না গিয়ে বাসায় বসে সময়টা নষ্ট না করে সৃজনশীল কাজে লাগায়। তারা তাদের প্রতিভাকে কতটুকু বিকশিত করতে পারে বা তাদের চিন্তার প্রসারতা কতটুকু তা দেখতে চাওয়া হয়েছিল।

এই সৃজনশীল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীরা ১ম থেকে ৭ম এবং ৮ম থেকে দ্বাদশ এই দু গ্রুপে ভাগ হয়ে ফেসবুক গ্রুপে বিভিন্ন বিষয় যেমন, ভ্রমণ কাহিনী, প্রবন্ধ, বুক রিভিউ, ছড়া, কবিতা নিয়ে লিখতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের এসব লেখায় সুপ্ত প্রতিভা উম্মোচিত হয় এবং অনেক ভালো ভালো মানসম্মত লেখা পরিলক্ষিত হয়।

পরবর্তীতে লেখাগুলো বিচারের ভার পড়ে তিন জন বিচারকের উপর। তারা হলেন পরিবার পরিকল্পনা অফিসার নিক্সন চৌধুরী,  বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের গীতিকার বিশিষ্ট কবি রুমী চৌধুরী এবং বৈশাখী টেলিভিশন এর সহকারি বার্তা সম্পাদক প্রবীর বড়ুয়া চৌধুরী।

প্রতিযোগিতায় ক গ্রুপে প্রথম স্থান অধিকার করেন অর্জুন বড়ুয়া, দ্বিতীয় স্থান বোধিপ্রিয় চাকমা, তৃতীয় স্থান নিবেদিতা বড়ুয়া স্নিগ্ধা। খ গ্রুপে হিরোবী বড়ুয়া পায়েল প্রথম স্থান, বিথী বড়ুয়া দ্বিতীয় স্থান এবং অভিজিত বড়ুয়া অভি তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।

বিচারকেরা আলাদা আলাদা ভিডিও বার্তায় সুন্দর মানসম্মত লেখার জন্য প্রতিযোগীদের ধন্যবাদ জানান এবং দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।

তারা বলেন, ছোট ছোট এসব শিক্ষার্থীর চিন্তা এত প্রখর হতে পারে তা কল্পনাতীত। এসব শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে কতটা গভীর চিন্তার অধিকারী তা পরিলক্ষিত হয়েছে। লেখাগুলো পড়ে বোঝা গেছে ছোট মস্তিষ্কেও পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া বিষয়গুলো কতটা প্রভাব ফেলে বা কতটা ভাবায়। ছোট ছোট এসব শিক্ষার্থীও তাদের মানষপটে প্রতিনিয়ত চমৎকার চিত্র আঁকে।

আয়োজকরা বলেন, শিক্ষার্থীদের চিন্তা কতটুকু কিভাবে প্রসারিত করা যায় সে জন্যই আমাদের আয়োজন।  আমরা অনেক সময় তাদের চিন্তার জানতে চাই না। অজানাই থেকে যায় এই শিশু মনের বিশাল ভাবনার বিষয়গুলো। ফলে তাদের মনের সৃজনশীল প্রতিভাগুলো আর বিকশিত হতে পারে না।

তারা বলেন, খুঁদে এসব শিক্ষার্থীদের মনোবৃত্তির চর্চাগুলো সবাইকে আশ্চর্য ও হতবাক করেছে। তাদেরও ভাবনায় যে সৃজনশীলতা থাকতে পারে আমরা সেটা কল্পনাও করিনি।  ফলে কত শত প্রতিভা মনে মনেই হারিয়ে যায়। আর আমরাও হারিয়ে ফেলি ভবিষ্যতের কোন অসীম প্রতিভাবান দ্বীপ শিখা। যে হয়তো একদিন আমাদের গৌরবান্ধিত করে তুলতো বিশ্বের দরবারে। মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতো নিজের স্বদেশকে।

এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা মনে করেন, এই প্রতিভাকে নষ্ট হতে না দিয়ে সকলের উচিত সৃজনশীল চিন্তা ও প্রতিভা চর্চা করার মঞ্চ গড়ে দেওয়া। যেখানে তারা তাদের প্রতিভার চর্চা করতে পারে। তারা যেন সৃজনশীল প্রতিভা প্রকাশের সুযোগ পায়। তবেই হয়তো তারা নিজেদের মেলে ধরতে পারবে।

(ঢাকাটাইমস/১৬জুলাই/বিইউ)