যশোর শিক্ষাবোর্ডে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে

যশোর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৭ জুলাই ২০২০, ১৪:০৮

যশোর শিক্ষাবোর্ডে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি জেঁকে বসেছে বলে অভিযোগ উঠছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা খেয়াল-খুশিমতো চলছেন। চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাবি।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারি ফিসের টাকা জমা না করে পকেটে ভরছেন কোনো কোনো কর্মকর্তা। আবার মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে রাতারাতি আদেশ পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এতে অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করছেন।

শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, বেশ কিছু দিন ধরে শিক্ষাবোর্ডে সার্টিফিকেট যাচাইয়ের সরকারি ফিস অফিসে জমা হচ্ছে না। সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ডকুমেন্টস) মনির হোসেন সরকারি এ ফিস নিজের পকেটে ভরছেন। বোর্ডের বিধি অনুযায়ী, মূল সার্টিফিকেট যাচাই করতে ২০০ টাকার ব্যাংকড্রাফট জমা দিতে হয়। আর ফটোকপি যাচাই করতে ফিস লাগে ১০০ টাকা। সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এই ফিস অফিসে জমা না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করছেন বলে একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর অভিযোগ।

গত ৫ জুলাই এমনই একটি ঘটনা ধরা পড়ে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মূল সার্টিফিকেট যাচাইয়ের জন্যে বোর্ডে আবেদন করেন এক নারী, যিনি ১৯৯৬ সালে এসএসসি ও ১৯৯৯ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি তার দুটি সার্টিফিকেট যাচাইয়ের জন্যে যশোর শিক্ষাবোর্ডে আবেদন করেন। বিধি অনুযায়ী ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে তার কাছ থেকে ফি নেওয়ার কথা। কিন্তু ওই সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নগদ টাকা গ্রহণ করেন। এ ধরনের ঘটনা নাকি প্রতিনিয়ত ঘটছে।

সরকারি টাকা এভাবে পকেটে ভরায় বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মনির হোসেনের দুটি মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।

প্রশ্ন উঠেছে, যশোর সদর উপজেলার রুদ্রপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার সংক্রান্ত দুটি চিঠি নিয়েও।

অভিযোগ, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই প্রধান শিক্ষককে স্বপদে পুনর্বহাল করতে শিক্ষাবোর্ড থেকে চিঠি ইস্যু করা হয়। গত ২২ এপ্রিল চিঠিটি ইস্যু করেন বিদ্যালয় পরিদর্শক ডক্টর বিশ্বাস শাহিন আহম্মদ। নথি নম্বর ৩৭.১১.৪০৪১.৫০১.০১.৬.২০.১৮৪।

ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী বিধি অনুযায়ী কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকে চূড়ান্ত বরখাস্ত করতে হলে বোর্ডের আপিল এন্ড আরবিট্রেশন কমিটিতে প্রস্তাব বিবেচিত ও বোর্ড কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হতে হয়। কিন্তু এই প্রধান শিক্ষকের চূড়ান্ত বরখাস্তের পূর্বে কোনো প্রস্তাব আপিল এন্ড আরবিট্রেশন কমিটি ও বোর্ড কমিটি কর্তৃক অনুমোদিত হয় নাই। সুতরাং প্রধান শিক্ষকের চূড়ান্ত বরখাস্ত আদেশ অবৈধ ও বেআইনি। এমতাবস্থায় চূড়ান্ত বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষকের চূড়ান্ত বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহারপূর্বক বকেয়া বেতন-ভাতাসহ স্বপদে পুনর্বহাল করে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে নিম্নস্বাক্ষরকারীকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’ চিঠিটি বিদ্যালয়ের সভাপতিকে দেয়া হয়।

এর মাত্র ১৪ দিন পর ৭ মে এই চিঠি স্থগিত করে আরেকটি চিঠি ইস্যু করা হয় শিক্ষাবোর্ড থেকে। তাতে বলা হয়, ‘এ বোর্ড হতে প্রেরিত ২২.০৪.২০২০ তারিখের পত্রটি স্থগিত করা হলো। পরবর্তী আপিল এন্ড আরবিট্রেশন কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত চূড়ান্ত বরখাস্তের সিদ্ধান্তও সে পর্যন্ত স্থগিত রাখা হলো এবং তত দিন পর্যন্ত চূড়ান্ত বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত হিসেবে গণ্য হবেন।’

অভিযোগ রয়েছে, ফের বড় অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে মাত্র ১৪ দিনের ব্যবধানে আগের চিঠি স্থগিত করা হয়। এ নিয়ে বোর্ডের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি এখানেই শেষ না।

এখন নাকি অর্থের বিনিময়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, নাসির উদ্দিন নামে একজন শ্রমিক লীগ নেতা এ কাজ করছেন। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাকে সহযোগিতা করছেন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তা। এমন অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা চাঁচড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ফুল।

আব্দুর রাজ্জাক অভিযোগ করেন, তাকে ভাতুড়িয়া স্কুল এন্ড কলেজে সভাপতি করে দেয়ার কথা বলে নাসির উদ্দিন ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। তার দাবি পূরণ না করায় সভাপতি করা হয়নি ফুলকে। নাসির উদ্দিন কয়েক মাস ধরে এ ধরনের কাজ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

শ্রমিক লীগ নেতা নাসির উদ্দিনের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ ভিত্তিহীন। এমপি ডিও লেটারের মাধ্যমে সবকিছু হয়েছে।

রুদ্রপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষকের স্বপদে পুনর্বহাল সংক্রান্ত দুটি চিঠি ইস্যুর বিষয়ে স্কুল পরিদর্শক ড. বিশ্বাস শাহিন আহম্মদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চেয়ারম্যান স্যারের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করি। তাছাড়া, বিষয়টি অনেক দিন হয়ে গেছে। ফাইল না দেখে কিছু বলা যাবে না।’

বোর্ডে বিভিন্ন ব্যক্তির অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোল্লা আমির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সার্টিফিকেট যাচাইয়ের অর্থ জমা না হওয়ার বিষয়টি আমার জানার বাইরে ছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। রুদ্রপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষকের স্বপদে পুনর্বহালের বিষয়ে চিঠি সম্পর্কে ফাইল না দেখে বলা যাবে না জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :