আমার দাদি চলে যাওয়ার পর...

আবু বকর সিদ্দিক
 | প্রকাশিত : ১৭ জুলাই ২০২০, ১৬:৩৪

একটা মানুষকে তার মা বাবার পরে কে বেশি ভালোবাসেন। একেক জনের কাছে এর উত্তর একেক রকম হবে। সবার ভালোবাসার মায়ার মানুষ আলাদা হওয়াটাই স্বাভাবিক। একেকজন মানুষের জীবনে একেক জন মানুষের অবদান আলাদা আলাদা।

অনেক দূরের মানুষ দীর্ঘদিন কাছে থাকতে থাকতে একটা সময় অতি আপন জনে পরিণত হয়ে যান। অতি আপন জন মায়া মহব্বত করার কারণে অনেক সময় তারা বিদায় হলেও তাদেরকে কোনোভাবে ভুলে থাকা সম্ভব হয় না।

আমি প্রায় চিন্তা করি আমাকেকে বেশি ভালোবাসেন। আমার মা নাকি দাদি। যদিও বা আমার দাদি দুই বছর আগে আল্লাহ'র ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আল্লাহ উনার প্রতি রহম করুন। দোয়া করি সবসময়।

যে কথায় ছিলাম। সন্তানের প্রতি মা বাবার ভালোবাসা অতুলনীয়। এইসবের কোন রকম তুলনা হয় না। আমার মাঝেমধ্যে মনে হয় হয় আমার মায়ের পরেই আমাকে বোধহয় আমার দাদিই সবচেয়ে বেশি মায়া করতেন।ভালোবাসা বলতে মায়া মহব্বত বলতে যদি কিছু বুঝায় তাহলে আমার জীবনে আমার দাদির কাছ থেকে আমি প্রচুর আদর ভালোবাসা পেয়েছি। দাদি দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার দুই বছরের অধিক সময় হবে তবু আজ ও প্রায় মাঝেমধ্যে ঘুরের মাঝেও দাদির কথা খুব মনে পড়ে।

অনেকের সাথে দাদা দাদির সম্পর্ক কি রকম ছিলো সেটা আমার জানা নেই কিংবা একেকজন এর অভিজ্ঞতা একেক রকম হবে। আমি ছোটবেলা থেকেই দাদির সাথে সাথে থাকতাম। ঘরের বড় নাতি ছিলাম আমি। দাদি সব সময় আমাকে আগলে রাখতেন।

কোনো আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি বেড়াতে গেলে আমাকে সবসময় সাথে রাখতেন৷ আমার এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে খুব ছোট বেলায় আমি আমার অনেক আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি দাদির সাথে গিয়েছি। তাদের অনেকেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন৷ আল্লাহ তাদের প্রতি ও রহম করুন৷

এখনো মনে পড়ে দাদি আমাকে রেখে কোনকিছু খেতেন না। আমি বাড়িতে না থাকলে তিনি আমার জন্য খাবার রাখতেন সেটা হউক কোন ফলমূল কিংবা অন্যকিছু। আমি স্কুল থেকে আসলে আমার হাতে ধরিয়ে দিতেন। সবচেয়ে স্মরণীয় যে বিষয় সেটা হলো আমি যখন ছোটবেলা স্কুলে যেতাম তখন দাদির হাত থেকেই টাকা নিতাম। সব আবদার দাদিই মেটাতেন।

বলে রাখা ভালো দাদি আমৃত্যু আমাদের পরিবারের সকল দায়িত্বে ছিলেন। উনার কাছেই আমাদের সকল আবদার থাকতো। আর আমার বাপ চাচারা ও ছোটবেলা থেকেই দেশের বাইরে ছিলেন। দাদিই আমাদের তখন একমাত্র আবদারের স্থান ছিলেন। কোনকিছু দরকার হলেই দাদির কাছেই গিয়ে বলতাম।

দাদি মারা যাওয়ার পর থেকে আমি আর তেমন কোনো আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে যাই না। অনেকেই আমায় চিনে না সেজন্য আসলে যাই না। কেননা যখন ছোট ছিলাম দাদির সাথেই যেতাম। এখন বয়স বাড়ছে বড় হয়ে গেছি সেজন্য আর অনেকেই চিনে না৷ যদিও বা আজকাল আমি ঘরকুনো মানুষ হয়ে গেছি।

দাদির সাথে আমার ছোটবেলার অসংখ্য স্মৃতি বিজড়িত। দাদির সাথে ইচ্ছা ছিলো হজ্ব করবো খুব ছোট থাকায় আর দাদির সাথে যাওয়া হয় নি। যদিও বা তিনি বাপ চাচাদের সাথে হজ্ব করেছিলেন। ইচ্ছা ছিলো বড় হলে দাদিকে নিয়ে উমরাহ কর‍তে যাবো কিন্তু সে আশা আর পূর্ণ হয় নি। দাদি তার আগেই মহান মাবুদের ডাকে সাড়া দিয়ছেন।

দাদিকে নিয়ে লিখতে গেলে লাইনের পর লাইন হবে শেষ হবে না। যদি কোনোদিন বই লেখায় হাত দেই সেদিন না হয় ছোটবেলার এইসব অসংখ্য স্মৃতি তুলে ধরবো।

দাদি আমাদের দিয়ে গেছেন অনেককিছু।আমাদের পারিবারিক ক্ষেত্রে দাদির অবদান অন্যান্য। একজন নারী যে এতোকিছু দেখভাল করে রেখেছিলেন তা ভেবে আজকাল ও আমি অবাক হই। আমরা হয়তোবা তার কোনকিছুই দিতে পারি নাই। অদূর ভবিষ্যতে পরিকল্পনা আছে আল্লাহ যদি কবুল করে দাদির নামে একটা ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট পরিচালনা করবো ইনশাআল্লাহ।

আমাদের প্রতিটি মানুষের বেড়ে উঠার পিছনে অনেক অনেক মানুষের অবদান রয়েছে যা আমরা খুব অল্প সময়ই অনুধাবন করে থাকি। তাদের যত্ন ভালোবাসা আদরেই আমরা আমাদের জীবনের একটা অন্যান্য কৈশোর পার করি। দুনিয়ার সকল ভালোবাসার আত্মার মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা।

আমার দাদিসহ যাদের দাদি মারা গেছেন আল্লাহ সবাইকে জান্নাত দান করুন। যাদের দাদা দাদি এখনো আছেন আপনারা চেষ্টা করুন তাদের সাথে সময় কাটানোর। দুনিয়াতে মা বাবার পরে যদি কেউ নিঃস্বার্থভাবে আমাদের ভালোবাসেন তাহলে আমাদের সকলের দাদা দাদি।

নিঃস্বার্থ মায়া মহব্বতের সিলসিলা মনের গভীরে দাগ কেটে রাখে যুগের পর যুগ। তাদেরকে কখনোই ভোলা যায় না। তারা চলে কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া ভালোবাসাকে পুজি করে আমরা ঠিকে থাকি নতুন এক ভোরের অপেক্ষায়।

লেখক: শিক্ষার্থী

ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

মুক্তমত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা