যমুনার পানি বিপদসীমার উপরে, বাড়ছে জনদুর্ভোগ

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৭ জুলাই ২০২০, ২২:২৯

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল আর টানা বৃষ্টিতে গত কয়েকদিন অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে যমুনার পানি। যা প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ১০৫ সে.মি উপর দিয়ে। এতে সৃষ্ট বন্যায় টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে। পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চলসহ গাবসারা, অর্জুনা, গোবিন্দাসী নিকরাইল, অলোয়া ও ফলদা ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই পানি প্রবেশ করেছে। অধিকাংশ বাড়ির বসতঘরে পানি উঠায় বাঁশের মাচা করে আশ্রয় নিয়েছে মানুষ। কেউ কেউ গবাদি পশু সরিয়ে নিয়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিলেও অধিকাংশই পানিতে রয়ে গেছে। দীর্ঘদিন পানিতে থাকলে এসব পশুর পায়ে ঘা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা। সেইসঙ্গে দেখা দিয়েছে গো-খাদ্য সংকট।

এদিকে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের বিভিন্ন স্থানে লিকেজ দেখা দিয়েছে। তবে এসব লিকেজ মেরামতে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ সড়কটি ভেঙ্গে গেলে জেলার প্রায় পাঁচটি উপজেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হবে। এতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে তারাকান্দি যমুনা ফার্টিলাইজার সার কারখানাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়া তলিয়ে যাবে উপজেলার হাজার হাজার একর ফসলি জমি।

গাবসারার চরচন্দনী গ্রামের কৃষক রহিজ উদ্দিন বলেন, ‘নদীর পানি বৃদ্ধি, ভারি বর্ষণ এবং নদী ভাঙন। সব মিলে আমাগরে কষ্টের শেষ নাই। যা আবাদ করছিলাম সব বানে তলায়া গেছে। বাড়ি-ঘর ও গরু-ছাগল নিয়া রাস্তায় আশ্রয় নিছি।’

গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে প্রায় ৩৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যাকবলিত পরিবারগুলো অতিকষ্টে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এ পর্যন্ত বরাদ্দ যে ত্রাণ পেয়েছি, তা তাদের মাঝে বিতরণ করা হয়ে গেছে। যা দুর্যোগের তুলনায় অপ্রতুল।’

এছাড়াও উপজেলার আরও তিনটি ইউনিয়নের ৬০টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন ‘যমুনার পানি ভূঞাপুর অংশে বিপদসীমার ১০৫ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গারাবাড়ি ও বলরামপুরে লিকেজ দেখা দেওয়ায় আমি সারারাত উপস্থিত থেকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের যেখানে লিকেজ দেখা দিচ্ছে সেখানেও জিও ব্যাগ ফেলে বন্ধ করার ব্যবস্থা করছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন পারভীন বলেন, ‘উপজেলার বন্যাকবলিত পরিবারের মধ্যে বরাদ্দ ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে এবং আবারো ৬০ মেট্রিক টন চাল, শুকনো খাবারের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ও ৫০০ প্যাকেট, শিশু খাদ্যের জন্য ৩০০০০ এবং গো খাদ্যের জন্য ৩০০০০ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। ৪০ মেট্রিক টন চাল চেয়ারম্যানরা বিতরণ করছে। এছাড়া গোবিন্দাসী থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত এবং ভূঞাপুর স্লুইস গেট থেকে নলিন পর্যন্ত তারাকান্দি রাস্তায় যারা আশ্রয় নিয়েছে, তাদের মাঝে চাল ডালসহ শুকনো খাবার রাতে ঘুরে ঘুরে বিতরণ করেছি।’

এদিকে টাঙ্গাইলের নবাগত জেলা প্রশাসক আতাউল গনি শুক্রবার বিকেলে বন্যাকবলিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা তাড়াই-বলরামপুর বাঁধ পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি চরাঞ্চলের বন্যার্তদের খোঁজ নেন এবং ত্রাণ সহায়তার আশ্বাস দেন।

(ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :