যমুনার পানি কমতে শুরু করলেও বাড়ছে বানভাসীদের দুর্ভোগ

জামালপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৭ জুলাই ২০২০, ২২:৩৮

জামালপুরে যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও বাড়ছে ব্রহ্মপুত্রের পানি। এতে বানভাসীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। ঘর-বাড়ি, রাস্তা- ঘাট, হাট- বাজারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্যার পানি তলিয়ে থাকায় বিপাকে পড়েছে জেলার ৮ লাখ পানিবন্দি মানুষ। জেলা প্রশাসন পানিবন্দিদের দুর্ভোগ কমাতে ত্রান বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখলেও এখনো ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে বন্যার্তদের।

অন্য দিকে যমুনা নদীর পানি কমতে থাকলেও হঠাৎ করে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি উপজেলা। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাসিন্দারা।

শুক্রবার দুপুরে বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১২৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে।

শুক্রবার সকালে জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, বন্যার পানিতে তলিয়ে আছে দেওয়ানগঞ্জের পৌরসভাসহ ৮টি ইউনিয়ন। ঘর-বাড়ি, রাস্তা- ঘাট, হাট- বাজার, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা ভূমি অফিস ও রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় ব্যাহত হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম। বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে বানভাসীরা।

দুই দফা বন্যায় নাকাল হয়ে পড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। এসব মানুষের মাঝে খাবার, গো-খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে দিনমজুর ও নিম্নআয়ের মানুষরা। এসব পরিবারের অভিযোগ, তারা দীর্ঘদিন কর্মহীন হয়ে থাকায় অর্থের অভাবে খাবার সংগ্রহ করতে না পারায় এক বেলা খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন তারা।

এদিকে উজানে পানি কমায় চাপ পড়েছে ভাটি এলাকায়। দুর্ভোগ বাড়ছে বানভাসীদের।

শুক্রবার সকালে জেলার মাদারগঞ্জ এলাকার চরশুভগাছা, শুভগাছা, সুখনগড়ী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বন্যার পানি বৃদ্ধি চরম দুভোগ পোহাতে হচ্ছে বানভাসীদের। বাড়ি ঘরে পানি ঢুকার পাশাপাশি বন্যার পানিতে রাস্তা ঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়া ফসলি জমিতে পানি ঢুকে পড়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে চাষিরা।

চর শুভগাছা এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিম জানান, বন্যার জন্য তাদের আয় উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের। তাই তারা সরকারি সহায়তার কামনা করেন।

একই এলাকার বাসিন্দা সেলিম আব্বাস জানান, তারা যে পরিমাণ সরকারি সহায়তা পেয়েছে। এটা দিয়ে কয়েক বেলা চলবে তাদের। তাই তারা ত্রাণের পরিমাণ আরো বৃদ্ধির দাবি জানান।

তবে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নায়েব আলী জানান, বর্তমান সময়ে যথেষ্ট পরিমাণ ত্রাণ জেলা প্রশাসনের কাছে মজুদ রয়েছে। পর্যায়ক্রমে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী ত্রানেরযোগ্য সকলকে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু সাইদ জানান, কয়েকদিন যাবত বন্যার পানি বাড়তে থাকলেও আপাতত যমুনা নদীর পানি কমছে এবং কিছু দিন পানি এভাবেই কমতে থাকবে। তবে পানি বাড়ার যে হার ছিল, তার তুলনায় পানি কমার হার কম থাকায় এই পানি কমতে কিছুদিন সময় লাগবে। এছাড়া যমুনার পানি কমায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ছে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ২য় ধাপের বন্যায়- জেলার ৭টির উপজেলা ও ৮টি পৌরসভা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে ৫১টি ইউনিয়নের ৬২৫টি গ্রাম। এছাড়া ২ লাখ ১৬ হাজার ৬৫৫টি পরিবারের ৮ লাখ ১৫ হাজার ০৬৩ জন সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৭ হাজার ৫৭৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে প্রান্তিক কৃষকেরা। এছাড়া ৯৭ কিলোমিটার আংশিক কাঁচা রাস্তা ও ২৩ কিলোমিটার আংশিক পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্যার পানির তোড়ে ২৪৪টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও ১৪ হাজার ২২০টি ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘরবাড়ি ছাড়াও ৩৬৯০টি নলকূপ, ১৭৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৫৬৯টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, ৪ কিলোমিটার আংশিক বাঁধ, ৫টি ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এছাড়া জেলার ৭৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৩ হাজার ৬৪৬টি পরিবারের ১৪ হাজার ৯৭৬ জন আশ্রয় নিয়েছে।

বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ৫১টি মেডিকেল টিম বন্যাকবলিত এলাকায় কাজ করছে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস।

এ পর্যন্ত পুরো জেলায় শিশু ও মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৬ জন বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায়।

এছাড়া জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর ও মাদারগঞ্জের কয়েকটি স্থানে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে সেখানকার বাসিন্দারা।

(ঢাকাটাইমস/১৭জুলাই/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :