দুর্নীতিমুক্ত আওয়ামী লীগ সরকার চাই

মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু
 | প্রকাশিত : ১৮ জুলাই ২০২০, ০৮:২৬

১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের ভূমিতে পা রাখেন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শূন্য থেকে বিত্ত গড়ে তোলার স্বপ্ন নিয়ে সংগ্রামে নামেন বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশের চারিদিকে তখন শুধু হাহাকার আর যুদ্ধবিদ্ধস্ত ধ্বংসের নিদর্শন। যেদিকে চোখ যায় শুধু নাই, নাই আর নাই। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে বাঙালিকে রক্ষার লক্ষে বঙ্গবন্ধু বিশ্ব দরবারে সাহায্যের হাত বাড়ান। বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে সমাজতান্ত্রিক দেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসতে থাকে সাহায্য। কিন্তু জাতির এতই দুর্ভাগ্য যে সেই সাহায্যের অনেকাংশ গরিবের ঘরে না গিয়ে উঠে আওয়ামী লীগ নামধারী কিছু সংখ্যক সুযোগ-সন্ধানী ও সুবিধাবাদীদের হাতে। দুর্নীতিপরায়ন এসব ব্যক্তিরা বিদেশি সাহায্য কালোবাজারে বিক্রি করে রাতারাতি বিত্তশালী হয়ে যায়। তাই একদিন বঙ্গবন্ধু বলেন, আমার কম্বল আমি পাইনি। কোথায় গেল আমার কম্বল? আমি এত কষ্ট করে বিদেশ থেকে আমার দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য ভিক্ষা করে সাহায্য নিয়ে আসি আর সেই সাহায্য চোরেরা সব চুরি করে খায়l এই চোরেরা আর অন্য কেউ না, ছিল আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা দুর্নীতিবাজ ও সুবিধাবাদী ব্যক্তি। সেদিন আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা কিছু সংখ্যক দুর্নীতিবাজ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

আজকে বাংলাদেশের ক্ষমতায় জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা। অবস্থা এখন আরও ভয়ানক। বাংলাদেশে এখন ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয়ে চলছে দুর্নীতি আর সন্ত্রাসী। সাধারণ জনগণ তাদের নিজ নিজ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সরকারের ছত্রছায়ায় সন্ত্রাসীদের লালন পালনের অভিযোগ আসছে। অন্যায় অত্যাচার আর দুর্নীতির কারণে কখনো কখনো গ্রেপ্তার হলেও তাদের প্রকৃত বিচার হয় না। উল্টো ধামাচাপা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। শোনা যায় আওয়ামী লীগের কিছু কিছু সাবেক ও বর্তমান মন্ত্রী এমপি এবং তাদের পৃষ্টপোষকতায় বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন সরকারি আমলা নামে বেনামে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ করেছেন। এদের অনেকে প্রধানমন্ত্রীর আশপাশে অবস্থান করছেনl

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের ভেতরে থাকা এসকল দুর্নীতিবাজরা বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন একটি সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে এখন অন্তরায়। এসব দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীদের কারণে শেখ হাসিনার অগ্রযাত্রার পথে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। যারা আজ আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার, সন্ত্রাসী ও দুর্নীতি করে কালো টাকার পাহাড় গড়ছে তারা কখনো বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী হতে পারে না।

বঙ্গবন্ধুর শেষ সময়ের ভাষণগুলোতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার সোচ্চারকণ্ঠ এরা কেউ কর্ণপাত করে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বার বার হুঁশিয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, একদম সাফ কথা। অপরাধ যে করবে, শাস্তি তাকে পেতেই হবে। আমি তাকে অপরাধী হিসেবেই দেখব। কিন্তু তবুও অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই। বরং দিন দিন পরিস্থিতি আরও ভয়ানক রূপ ধারণ করছে।

এখন প্রশ্ন হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন আজ এমন অবস্থা? এর জন্য দায়ী কে? কোন শক্তির বলে সরকারের ভেতরে থাকা দুর্নীতিবাজরা করছে এই দুর্নীতি? সম্প্রতি জনৈক বুদ্ধিজীবী দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন ওদের গুলি করে মারার কথা। কিন্তু একটি সভ্য দেশে তা কখনো সম্ভব নয়। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এদের বিচারের মাধ্যমে কঠোর সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের নির্মূলে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা এসব লোকেরা যখন দলের ভেতরে থেকে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সন্ত্রাসী ও ক্ষমতার লড়াই করছে ঠিক একইসময় জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার ধানমণ্ডি বত্রিশ নাম্বার রোডে অবস্থিত পরিবারের অতি মূল্যবান বাড়িটি দান করে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। এই বাড়িটি এখন বঙ্গবন্ধু জাদুঘর বলে সকলের কাছে পরিচিত।

আর কতদিন চলবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার এপথে? আজ জনগণ ও বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে বলা হচ্ছে, নীরবতাই সন্মতির লক্ষণ। এদের অনেকে পরোক্ষভাবে বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে পর্যন্ত দায়ী করছেন। কিন্তু কেন এই নীরবতা? দুর্নীতি সন্ত্রাসী আর ক্ষমতার অপব্যবহার আজ নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষ এখন পরিত্রাণ চায়। শান্তি চায়l একটি সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ দেখতে চায়।

মানুষ এখনো আশাবাদী। কারণ তারা জানে একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাই পারবেন দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে। তবে এজন্য তাকে আরও কঠোর হতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলছি, আপনাকে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চরম পদক্ষেপ নিতে হবে। আপনাকে প্রথমেই চালাতে হবে আওয়ামী লীগ ও সরকারের ভেতরে শুদ্ধি অভিযান। দুর্নীতিবাজরা এখন আওয়ামী লীগের ভেতরে শক্ত হয়ে বসে আছে। শুধু তাই নয় আপনার আশপাশেও আছেন কোনো কোনো আমলা যারা চাকরির ফাঁকে ফাঁকে নামে বেনামে করছেন বাণিজ্য।

আমরা একসময় ছাত্রলীগ থেকে শ্লোগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু কঠোর হও কঠোর হও। আজ তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বলছি, সময় থাকতে আপনাকে আজ আরও কঠোর হতে হবে। দেশের মানুষের ভালবাসা পেতে হলে, আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করতে হলে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হলে ও সবশেষে আপনার নিজের স্বপ্ন বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে উন্নতি করতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। এই মুহুর্তে দুর্নীতি ও সন্ত্রাস দমন হতে হবে সরকারের সবচেয়ে বড় কাজ। দেশের সাধারণ জনগণকে যদি প্রশ্ন করা হয় দেশের বর্তমান আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ও দুর্নীতির জন্য দায়ী কে, জনগণ এক কথায় বলবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার| আর সরকারকে দায়ী করা মানে পরোক্ষভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই দায়ী করা। এজন্যই আজ আওয়ামী লীগের ভেতর থেকেই আওয়াজ এসেছে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত আওয়ামী লীগ সরকার চাই, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ চাই।

লেখক: ইলেক্টেড মেম্বার মনোনয়ন বোর্ড, সুইডিশ লেফট পার্টি সেন্ট্রাল কমিটি ও সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগ ১৯৭৩-৭৪

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :