শেরপুরে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত

শেরপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২০ জুলাই ২০২০, ১৯:৪৬

বর্ষণ অব্যাহত থাকায় শেরপুর সদর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ও নালিতাবাড়ীর চেল্লাখালি নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।

সোমবার সকালে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী (এসএই) জিয়াসমিন খাতুন জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বর্তমানে বিপদসীমার ০.০২ মিটার ও চেল্লাখালি নদীর পানি ০.৫ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সদর উপজেলায় বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী ৪টি ইউনিয়নের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া জেলার শ্রীবরদী উপজেলার দুইটি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রাম, নালিতাবাড়ীর চেল্লাখালী, ভোগাই ও নাকুগাঁও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওইসব এলাকার ৪টি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া নকলার ৫টি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এ কারণে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় লাখো মানুষ। এখন বন্যার পানির নিচে তলিয়ে আছে চলতি রোপা-আমন মৌসুমের বিপুল পরিমাণ জমির বীজতলা। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে অর্ধশতাধিক ঘর বাড়ি। এছাড়া শেরপুর-জামালপুর সড়কের কজওয়ে পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় গত চার দিন যাবত শেরপুরের সাথে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আর বন্যার পানিতে ডুবে এখন পর্যন্ত দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

সদর উপজেলার ভাগলগড় গ্রামের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল হালিম বলেন, ঝোড়ার মাথায় আমার বাড়ি। ওই বাড়িটা হেউ (নিচু)। বন্যার পানি ঘরে ঢুইকা পড়ার কারণে এক চকির উপড়ে আরেক চকি ফালাইয়া পুলাপান লইয়া এহন থাকতাছি। এহন কামাই রোজগারও নাই। সবাই না খাইয়া থাকতাছি।

আরেক ক্ষতিগ্রস্ত নিজাম বলেন, কয়দিন ধইরাই বৃষ্টি হইতাছিল, ভাবছিলাম তেমন কিছু হবো না। এহন দেখতাছি বন্যা হইয়া গেল। এক রাতের মধ্যেই ঘরে পানি ঢুইকা পড়ায় কোন মাল সামানা বাইর করবার পাই নাই। সব নষ্ট হইয়া গেছে।

রিতা বেগম বলেন, গাঙ্গের পানি (নদীতে) ঘরটর সব ভাসাইয়া নিয়া গেছেগা। এখন ঘুমানির জন্য খেতা-বালিশ কম্বল কিছুই নাই।

নকলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বোরহানউদ্দীন বলেন, ৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষক। চলতি আমনের বিপুল পরিমাণ বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক সহায়তা করতে ইউপি চেয়ারম্যানরা করছেন বলে তিনি জানান।

নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুর রহমান বলেন, বন্যায় প্লাবিত এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. অনোয়ারুর রউফ বলেন, এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে দুজন মারা গেছে। এছাড়া বন্যায় পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা দিতে ইতোমধ্যে ২০টি মেডিকেল টিম গঠন করে চিকিৎসা সেবা দেয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া খাবার স্যালাইন, প্যারাসিটামল ও এন্টিবায়োটিকসহ নানা ধরণের ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জানিয়ে জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মোহিত কুমার দে বলেন, বন্যায় সদর উপজেলা এবং নালিতাবাড়ীর কৃষকরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন। জেলায় এ পর্যন্ত রোপা-আমনের ৪৩০ হেক্টর, সবজির ১২৬ হেক্টর, আউশ ধানের ১৫৭ হেক্টর ও পাট ৬২ হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে আছে।

তিনি আরো বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পুরো চিত্রটা পাওয়া যাবে পানি নেমে গেলে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করতে ৫০ একর জমিতে রোপা-আমন বীজতলা তৈরি করা হবে। সেখান থেকে কৃষকদের চারা সরবরাহ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২০জুলাই/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :