সাদিক হাসান ইমনের কবিতা

প্রকাশ | ২১ জুলাই ২০২০, ১৪:৫০

সাদিক হাসান ইমন

অভিমানী পৃথিবী

 

.

 

সাদিক হাসান ইমন

.

 

 

মহাবিশ্বের সু-সজ্জিত কাননের হাস্যোজ্জ্বল

এক গ্রহে অধরিক চর্চা চলছিল,

কাউকে না সে বুঝতে  দিচ্ছিল,

কাউকে না জানতে দিচ্ছিল;

অন্তর্যামী হয়ে শুধু সয়ে যাচ্ছিল।

 

.

 

 

প্রাণ সতেজতার বদৌলতে শ্বাসরুদ্ধতা ছড়িয়ে পড়ছিল হরহামেশা,

প্রকাণ্ড মহালয়াকে জ্ঞানশূণ্য শো-পিচ বানিয়ে,

আর সদা মঙ্গল-শ্লোক সমগ্রকে বাক্স বন্দী করে,

একের পর এক কোমলদেহে বিচ্ছিন্নভাবে মেখে নিচ্ছিল;

কালধ্বংসী ঈর্ষা,লোভ,দাম্ভিকতা ও সাম্প্রদায়িকতা।

 

.

 

 

স্বয়ং পূঁজারীদের অট্টহাসির হুইসেলে

পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ভেসে বেড়াচ্ছিল

মুমূর্ষতা, হাহাকার ও চিৎকার,

একটু খানি স্বস্তি ও আশ্রয়কাতর অসহায়দের করুন আর্তনাদ,

আপন-শক্তি প্রদর্শকদের দৃষ্টিতে আবছা হয়ে যাওয়া;

সেই কানন আয়োজক মহাজনের দরবারে কড়া নেড়েছিল ।

 

.

 

 

সেই দরবারে বোধহয় পৌঁছেছিল

সাম্প্রদায়িকতার মৃত্যুগর্জনের মুখে সশঙ্ক আর্জি,

প্রাণভিক্ষায় আশ্বস্থ মনের আকুল আরাধন

অথবা মৃত্যু উপত্যকায় জ্বলন্ত চোখের অগ্নি অভিশাপ!

 

.

 

 

বোমায় ক্ষত-বিক্ষত দেহের যন্ত্রণায় নিস্তেজ হওয়া

সিরিয়ার সেই নিষ্পাপ শিশুটি বোধহয় প্রতীকীরূপে রেখেছে

তার শেষ কথাটি

"আমি আল্লাহ্কে সব বলে দিব!"

 

.

 

অস্থির প্রবল ছটফটিত বিশ্বের অলিতে গলিতে

পড়ে থাকা দুর্গন্ধ রক্ত,অস্থির নিঃশ্বাস,মৃত্যু যন্ত্রণা

এবং পরপার বাহক কফিনের সামনে

স্বার্থের প্রয়াস প্রিয় বাকপরাধীনতা ও নিছক কাকতন্দ্রা চোখের রুষ্টতায়;

লজ্জাজড়িয়ে নগ্ন হতে চলেছিল বিশ্ব মানবতা।

 

কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সব থমকে গেল,

আকাশ ছিঁড়ে অন্যায় ও জুলুমের বিচার যেন

আপোষহীনভাবে ঝড়ে ঝড়ে অদৃশ্যভাবে বাতাসে মিশে গেল।

শহরতলীয় জন-চঞ্চলতা স্তম্ভিত হওয়ার দরুন

কোলাহল মুখর রাজপথ নিঃসঙ্গ হয়ে গেল,

পৃথিবী গুটিয়ে দিল মানুষের সামর্থ্য সাম্রাজ্য।

 

.

 

ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সবাই আজ গৃহবন্দী,

কোনো শক্তি বলেই রেহাই দিচ্ছে না করোনা,

উঁচু বলে কুর্ণিশ জানাচ্ছে না,

টাকার লীলায় কলুষিত হচ্ছে না,

হচ্ছে না ক্ষেপনাস্ত্র হুংকারে বিনাশ।

যেন সাম্যবাদীতার এক শাশ্বত শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছে ;

বিবেকরহিতে মানুষ যে চেতনাকে ভুলতে বসেছিল,

যার জন্য আজকের দূর্ভোগ।

 

.

 

দীর্ঘকাল যাবৎ অসুস্থ ও নিস্তেজ হতে থাকা পৃথিবী

আস্তে ধীরে নিজেকে সারিয়ে তুলছে এখন।

কার্বন-ডাই-অক্সাইডের অপ্রতুলতা কমছে,

নির্বিচারে বৃক্ষ বিসর্জনের আতঙ্ক নেই,

প্রাণী বিলুপ্তের ভয় নেই।

.

 

কিন্তু পৃথিবীর প্রাচুর্যদায়িনী মানুষ আজ খাঁচাবন্দী,

পিচঢালা পথে তাদের প্রবেশাধিকার নেই,

চেষ্টা চরিত্র করেও প্রবেশদ্বারের সুদীর্ঘ শিকল ভাঙতে না পারায়;

অসহায়ভাবে দেখছে দরজার ওপারের লাশের মিছিল,

এপারে শ্বাসরুদ্ধ প্রতিক্ষা;

যার ব্যাপ্তিকাল অনির্ণেয়,নিষ্পত্তি অশূণ্য।

 

.

 

ভেনিস শহরের খালে গান্ডোলাগুলো নিশ্চল,

অক্সফোর্ড স্ট্রিটে আগের মতো প্রেমবিলাসী সন্ধ্যা নামে না,

ব্রিটিশ মিউজিয়াম ঘুরে ঘুরে বিশ্ব সংস্কৃতিকে;

মুষ্ঠিবদ্ধ করার মতো জ্ঞানপিপাসু মানুষ নেই,

নিউইয়ার্ক সেন্ট্রাল পার্কের বৃক্ষ সারির মাঝ দিয়ে

হেঁটে চলার মতো কারও সময় হয় না,

স্ট্যাচু অফ লিবার্টি আজ আক্ষরিক অর্থেই এক পাথর মূর্তি;

তার জলন্ত দীপশিখায় মুগ্ধতা নেই।

 

.

 

নায়াগ্রা ফলসের জলপ্রপাতটি আয়োজন ব্যতিরেখে

লোকচক্ষু অন্তরালে থেকেই আমেরিকার বর্ডার ছুঁয়ে দেয়,

কৌতুহলবসত সুউচ্চ আইফেল টাওয়ারটির দিকে

ভ্রুক্ষেপ করার ইচ্ছে কারও জাগে না,

ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মীরে কোন কোলাহল নেই,

তাজমহলের মনরঞ্জক উষ্ণতা নেওয়ার চাহিদা নেই,

তারাভরা রাতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের আঁচড়ে পড়া

ঢেউয়ের শীতল শিহরণ নিতে কেউ যায় না।

 

 

.

 

কাননের আয়োজক তার অভিমান ভাঙানোর সুযোগ না দিয়েই

তালাবদ্ধ করে দিয়েছে শুদ্ধতার প্রতীক মসজিদ,

মন্দির,গির্জা ও প্যাগোডার দরজা।

অঢেল অবসরে, স্বল্প জ্ঞানের অহমিকা ঘুচিয়ে

পরিপূর্ণ জ্ঞান সঞ্চারের ইঙ্গিত দিচ্ছে

কুরআন,গীতা,বাইবেল ও ত্রিপিটক।

 

 

.

 

ঈর্ষা,লোভ,দাম্ভিকতা ও সাম্প্রদায়িকতা ভুলে

মনুষ্যধর্ম লালন করে পৃথিবীর বুকে

প্রশান্তি পতাকা উড়ানোর মতো সভ্যতার উদয় ঘটলে,

তবেই বোধহয় মনঃক্ষুণ্ণ পৃথিবী হাস্যজ্জ্বল হয়ে উঠবে;

কথাকথিত প্রাণ খুঁজে পাবে।