পশু থাকলেও ক্রেতা নেই গোবিন্দাসী হাটে

ফরমান শেখ, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল)
| আপডেট : ২১ জুলাই ২০২০, ১৫:৪০ | প্রকাশিত : ২১ জুলাই ২০২০, ১৫:১৯

গত বছর কোরবানির ঈদে পশুর ভাল দাম পেলেও করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্রেতাদের তেমন সাড়া না পেয়ে এবছর চরম দুশ্চিন্তায় আছেন খামারিরা। আশঙ্কা করছেন লোকসানের। শুধু খামারিরা নয়, পশু বেচা-কেনা না করতে পেরে হতাশায় আছেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী গরুর হাটের ব্যবসায়ীরাও।

দেশের অন্যতম দ্বিতীয় বৃহত্তম পশুর হাট হিসেবে পরিচিত এই হাটে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কোরবানির পশু সারি সারি বাঁধা রাখলেও কেনার জন্য ক্রেতা নেই। গেল বছর এই সময়টাতে গোবিন্দাসী হাটে ক্রেতাদের আনা-গোনায় মুখরিত ছিল। এবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। উপজেলার গোবিন্দাসী ছাড়াও নিকরাইল, শিয়ালকোল, নলিন ও চরশশুয়ার পশুর হাটগুলোতে একই চিত্র দেখা গেছে।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবছর উপজেলাতে স্থায়ী, মৌসুমি খামার ও পারিবারিকভাবে গরু, ছাগল, ভেড়াসহ ১৬৮৫৬টি গবাদিপশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা রয়েছে। এর মধ্যে ষাঁড় রয়েছে ১০৬০২টি, বলদ ১৭৫৪টি, ছাগল ৩৮৫০টি ও ভেড়া রয়েছে ৬৫০টি।

উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের পুংলিপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো লাভের আশায় গরু পালন করেছি। এগুলো ঈদের আগে বিক্রি করে বউ বাচ্চাদের নিয়ে খেয়ে পড়ে বাঁচি। কিন্তু এবার আমি দুইডা গরু নিয়া গুয়াদাইর আটে (গোবিন্দাসী) গেছিলাম কেউ দাম না কওয়ায় ফেরত নিয়া আইছি। লাভ তো হবোই না যে খাবার খাওয়াইছি সে দামও কেউ কয় নাই।’

উপজেলার সর্ববৃহৎ গরুর খামারি দুলাল হোসেন চকদার বলেন, ‘এবছর আমার খামারে ৫৫টি পশু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছি। প্রতিটি গরুকে দেশীয় পদ্ধতিতে গো-খাদ্য খাইয়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। খামারে সর্বনিম্ন ৩ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা দামের গরুও রয়েছে। ঈদের দু-সপ্তাহ বাকি। কিন্তু করোনাকালে পাইকার ও ক্রেতা তেমন না থাকায় চরম বিপাকে পড়ার আশঙ্কা করছি। ঈদে গরুগুলো বিক্রি করতে না পারলে ৪০ থেকে ৬০ লাখ টাকা লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

এদিকে খামারে থাকা শ্রমিকরা জানায়, ঈদকে কেন্দ্র করে গরু মোটাতাজা করতে তারা নির্ঘুম রাত পাড় করছেন। এখন পর্যন্ত কোনো পাইকারের দেখা মিলছে না। খামার মালিক গরুর ন্যায্য দাম না পেলে তাদের শ্রমের মজুরি নিয়ে শঙ্কায় পড়তে হবে।

গোবিন্দবাসী হাটের ইজারাদার লিটন মিয়া জানান, অন্যসময় ঈদে প্রতি হাটে প্রায় ৫ লাখ থেকে ১০ টাকা টাকা খাজনা উঠত। বর্তমানে সেখানে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খাজনা আদায় হচ্ছে। এতে করে হাট পরিচালনা কর্তৃপক্ষ ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ লোকসানে পড়বে। কারোনাকালে কোটি কোটি টাকা লোকসানের বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি দরখাস্ত পাঠিয়েছেন তারা।

উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন শরীফ বাছেদ জানান, ভারত থেকে গরু না আসলে দেশের খামারিরা কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।

উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা স্বপন চন্দ্র দেবনাথ জানান, এ বছর উপজেলায় ১৩ হাজারের মতো পশুর চাহিদা রয়েছে। আমরা সবসময় খামারিদের পরার্মশ দিয়ে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন পারভীন বলেন, ‘গোবিন্দাসী, নিকরাইল ও শিয়ালকোল হাট ইজারাদারদের আবেদন পেয়েছি, কিন্তু আমাদের বিবেচনার সুযোগ নেই। এটা হাট ইজারা কমিটির বিষয়। আবেদনটা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সরকার বিবেচনা করলে আমরা সেটা বাস্তবায়ন করব।’

(ঢাকাটাইমস/২১জুলাই/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :