করোনা-পরবর্তী বেকার সমস্যায় শেখ হাসিনাই ভরসা

এম মতিউর রহমান মামুন
| আপডেট : ২২ জুলাই ২০২০, ১১:৩২ | প্রকাশিত : ২২ জুলাই ২০২০, ১০:৫৩

আজ থেকে শত বছর পূর্বে রবীন্দ্রনাথ হয়তো এমন এক মানবিক বিপর্যয়ে লিখেছেন, “হে দেব, হে পিতা, তুমি বিশ্বপাপ মার্জনা করো, মানুষ মরছে তাকে বাঁচাও।... তোমার বোধের দ্বারা বাঁচাও”। বর্তমান করোনাভাইরাস কবলিত বিশ্বের ধনী-গরিব সব দেশেই চলছে এমন আরতি। একই সঙ্গে চলছে করোনার বিরুদ্ধে মানবের লড়াই। অসহায়ের দিকে বাড়াচ্ছে সহায়তার হাত।

বাংলাদেশ গত সাড়ে চার মাস ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা্র নেতৃত্বে করোনা যুদ্ধ লড়ে যাচ্ছে। আর দশটা দেষের মতো বাংলাদেশ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সামনে। জাতির এই মহাদুর্যোগকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা্ দেশে ও বাইরে যারা বিত্তবান বা বিত্তসম্পদের মালিক আছেন, তাঁদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে। প্রধানমন্ত্রীর এ পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়!

আমাদের দেশে বড় বড় উদ্যোক্তা, হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক নেহায়েত কম নয়, কিন্তু এই দুঃসময়ে প্রত্যাশানুযায়ী কতটা এগিয়ে আসেন তা দেখার বিষয়। দেশ ও জাতির কঠিন সময়ে বিত্তবান মানুষ এগিয়ে আসুক জাতি এমন প্রত্যাশাই করেন। এরই মধ্যে বসুন্ধরা, ব্র্যাক ব্যাংকসহ বেশ কিছু সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তারা নিশ্চয় আজীবন সমাদৃত হবে।

দেশের মানুষের কল্যাণে যারা নিজ থেকেই এগিয়ে আসতে পারেন তারাই সার্থক। সে প্রত্যাশা কতটা পূরণ হবে তা জানি না, জাতির দুঃসময়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ভরসা রাখা ছাড়া উপায় দেখি না।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে প্রভাবশালী বিশ্ব মোড়ল খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে সম্পূর্ণ অসহায় বলে মনে হচ্ছে। তার দেশে লাশের সারি অনেক দীর্ঘ, দাফন করবে কী করে তাই এখন বড় বিষয়। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের একই অবস্থা। ইউরোপের রাষ্ট্রনায়কদের করুণ আর্তনাদে আকাশ ভারী হয়েছে! নরেন্দ্র মোদির ভারতের অবস্থাও দিন দিন খারাপ হচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে ৮৫ হাজার গ্রামবাংলার অসচেতন বিপুল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অদম্য শক্তি, সুদৃঢ় মনোবল ও অক্লান্ত পরিশ্রমে করোনার বিপক্ষে যুদ্ধ করছেন। শুধু মানসিক শক্তি নিয়ে দেশের মানুষের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করতে সহজ শর্তে কৃষিঋণসহ করোনা-পরবর্তী তিন বছর মেয়াদি পদক্ষেপ নিয়েছেন।

তবে বলে রাখা দরকার গরিব কৃষক যাতে ঋণ গ্রহণে কোনো হয়রানি না হয় এবং বিনা জামানতে শুধু এনআইডি কার্ড দিয়েই ঋণ নিতে পারে বঙ্গবন্ধু কন্যার সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'দরিদ্র মানুষজনের হাতে এখন অর্থ নেই। সে জন্য তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা একেবারেই দুর্বল। এসব সাধারণ মানুষের হাতে অর্থ পৌঁছানো উচিত সরকারের। কারণ তারাই অর্থনীতি চালায়, ধনীরা নয়।'

লকডাউনে বিপাকে পড়া হতাশাগ্রস্ত গ্রামগঞ্জের নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্দশা লাঘবে শেখ হাসিনার সরকার দ্রুততম সময়ে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ তৎপরতা শুরু করেছে যা এখন অব্যাহত। ভর্তুকি দিয়ে ন্যায্যমূল্যের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রয়ও চলছে। ইতিমধ্যে ৫০ লাখ পরিবার পেল নগদ টাকা, যদিও দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু ত্রুটি ছিল। নতুন করে আরও ৫০ লাখ রেশন কার্ড প্রদানের যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা প্রশংসিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী গণমানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবের জন্য যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তেমনটি বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ= “আমার সমস্ত স্বদেশীদের সুখ-দুঃখময় চিত্ত যে আমারই চিত্তের বিস্তার, তাহারই উন্নতি যে আমারই চিত্তের উন্নতি, এই একান্ত সত্য যতদিন আমরা না উপলব্ধি করিয়াছি, ততদিন আমরা দুর্ভিক্ষ হইতে দুর্ভিক্ষে, দুর্গতি হইতে দুর্গতিতে অবতীর্ণ হইয়াছি- ততদিন কেবলই আমরা ভয়ে ভীত এবং অপমানে লাঞ্ছিত হইয়াছি।” একজন শেখ হাসিনা যখন জাতির বেঁচে থাকার জন্য অবলম্বন মনে করছেন সাধারণ মানুষ, তখন বাকিদের ভূমিকা কী সেদিকেই এখন দৃষ্টি।

আমাদের মনে রাখা দরকার, বিভিন্ন সময় দুর্যোগ এসেছে আবার তার সমাধানও হয়েছে। আমাদের উচিত হবে এই মুহূর্তে সহনশীল হওয়া, ধৈর্য ধারণ করা, তার চেয়ে বড় কাজ এখন কিছুই নেই। সরকারি নির্দেশনা যথাযথ পালনের মধ্য দিয়ে দেশ ও জাতিকে সহযোগিতা করা নাগরিক কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই বিষয় আমাদের মধ্যে সচেতনতা তেমন নেই বললেই চলে। সরকার তার কাজ করছে, আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব আমরা কতটুকু পালন বা অনুসরণ করছি তা দেখার বিষয়।

সারা পৃথিবীতে হানা দেওয়া করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করেই আমাদের জিততে হবে। এই মহাসংকটকালে বিপদগ্রস্ত মানুষকে নিয়ে রাজনীতির চর্চা থেকে বিশ্ববাসীকে বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে বিপদ বেড়েই চলবে। আমরা বিপন্ন হয়েছি, মানুষকে বিপন্ন করব- এই বর্বর মনোবৃত্তি আমাদের মধ্যে যেন উদয় না হয়।

যাহোক করোনা-পরবর্তী সময়ে বেকারত্ব মোকাবেলা দেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ হতে পারে, সেদিকে নজর দেওয়া এখন বেশি জরুরি। আইএলওর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে বেকারত্বের হারের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। সেদিক বিবেচনা করে সরকারি-বেসরকারি নিয়োগ ত্বরান্বিত করে এ সমস্যার কিছুটা সমাধান করা যেতে পারে। বছরের পর বছর কোনো নিয়োগ যেন আটকে না থাকে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সর্বশেষ জনবল কাঠামো অনুযায়ী তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণিসহ বেশ কিছু নিয়োগ ঝুলে আছে, তা দ্রততার সঙ্গে সম্পূর্ণ করে বঙ্গবন্ধু-কন্যার ঘোষিত 'ঘরে ঘরে চাকুরী' কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা দরকার। তাতে বেকার সমস্যা অনেকটা কমে আসবে। এ জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্যোগ নিয়ে এ খাতে চলতি বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করে গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির চিন্তা করতে হবে।

বিদেশে শ্রম রপ্তানির কথা আপাতত বেশি না ভাবাই ভালো। কেননা যেখানে ইউরোপ, আমেরিকা আছে সংকটে, এশিয়াতে অবশ্যই এই সংকট দেখা দেবে। মধ্যপ্রাচ্যে ইতিমধ্যে অনেক বাংলাদেশি কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। মালদ্বীপের পরিস্থিতি মোটেও ভালো না। ইতিমধ্যে ইউরোপে অনেক প্রবাসী কর্মহীন। বিধায় চলতি বাজেটে বেকার সমস্যার দিকটি সব সময় ভাবনায় ও নজরে রাখার বিকল্প নেই।

লেখক: রবীন্দ্রস্মৃতি সংগ্রাহক ও গবেষক

(ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :