চার ব্যাংকের ২৬৪ কোটি মেরে পলাতক নাজমুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ জুলাই ২০২০, ১২:১৩ | প্রকাশিত : ২২ জুলাই ২০২০, ১১:৫৬

অনিয়মের অভিযোগে চাকরিচ্যুত হয়ে লন্ডন পাড়ি জমান নাজমুল আবেদিন। চার বছর আগে দেশে ফিরে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীর তালিকায় নাম লেখান। চট্টগ্রাম ইপিজেডে খোলেন তিনটি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক থেকে নেন বিপুল পরিমান ঋণ।

কাঁচামাল আমদানির এলসি ও পরিচালন মূলধন হিসেবে কোনো রকম জামানত ছাড়াই চারটি ব্যাংক থেকে নেওয়া সেই ঋণের অর্থ পরিশোধ না করেই তিনি পালিয়ে গেছেন বিদেশে।

নাজমুল আবেদিনের বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে চট্টগ্রামের অভিজাত আবাসিক এলাকা খুলশীর ৬ নম্বর রোডের বে গ্রিন ভ্যালি। আর লন্ডনের ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে সি/ও-২২ রাদারফ্রুড ক্লোজ, অক্সব্রিজ-ইউবি ৮৩ ডব্লিউজি, লন্ডন, ইউকে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নাজমুল আবেদিনের মালিকানাধীন তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ২৬৪ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে চারটি বাণিজ্যিক ব্যংক। এর মধ্যে একটি ব্যাংক অর্থঋণ মামলাও দায়ের করেছে। তবে নাজমুল দেশে না থাকায় আইনি পদক্ষেপ নিতে পারছে না ব্যংক কর্তৃপক্ষ।

নাজমুল আবেদিনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান তিনটি হচ্ছে চট্টগ্রাম ইপিজেডের পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এঅ্যান্ডবি আউটওয়্যার লিমিটেড, নর্ম আউটফিট লিমিটেড ও কোল্ড প্লে লিমিটেড। প্রতিষ্ঠান তিনটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল আবেদিন। এর মধ্যে নর্ম আউটফিট লিমিটেডের চেয়ারম্যান হিসেবে তার শ্বশুর জাহিদ হোসেন সিদ্দীকি ও পরিচালক হিসেবে তার স্ত্রীর নাম রয়েছে পাওনাদার ব্যাংকের নথিতে।

সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর তথ্যমতে, নাজমুল আবেদিনের তিন পোশাক কারখানার মধ্যে এঅ্যান্ডবি আউট ওয়্যারের কাছে ব্র্যাক ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ১০২ কোটি টাকা, একই প্রতিষ্ঠানের কাছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অফশোর ইউনিটের ৬০ কোটি, নর্ম আউটফিটের কাছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার প্রায় ৭০ কোটি ও ওয়ান ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ৩২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।

কিন্তু নাজমুল আবেদিন দেশে না ফেরায় এবং তার মালিকানাধীন তিন কারখানার উৎপাদন স্বাভাবিক না থাকায় ব্যাংকের বিনিয়োগ করা ঋণ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

জানা যায়, গত এক বছর ধরে তিনি বা তার প্রতিষ্ঠান ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেনি। এমনকি তিন ব্যাংকের সঙ্গে কোনো যোগাযোগও রক্ষা করেননি তারা। উপায় না দেখে ১০১ কোটি ৯৭ লাখ টাকা পাওনা আদায়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করেছে ব্যাংকটি।

এঅ্যান্ডবি আউটওয়্যারের কাছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অফশোর ইউনিটের পাওনার পরিমাণ ৬০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহক ছিল ইস্টার্ন ব্যাংকের। পরে সে ঋণটি অধিগ্রহণ করে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। মেয়াদি ঋণ হিসেবে ব্যাংকটির অফশোর ইউনিট থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণটি কিনে নেয়া হয়েছিল। অধিগ্রহণের পরবর্তী দুই বছর প্রতিষ্ঠানটির ঋণ নিয়মিতই ছিল। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে রপ্তানি আদেশ কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত পুরো ঋণটিই আটকে গেছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের।

নাজমুল আবেদিন প্রতারণা করেছেন এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের সঙ্গেও। তার প্রতিষ্ঠানের ব্যাক-টু-ব্যাক ঋণপত্র খুলেছিল ব্যাংকটি। সময়মতো দেশ থেকে পণ্য রফতানিও হয়েছিল। কিন্তু জাল কাগজপত্র তৈরি করে রপ্তানিপণ্য তিনি নিজেই ছাড়িয়ে নিয়েছেন। যদিও ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করেননি। এজন্য এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের পক্ষ থেকে নাজমুলের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে প্রতারণার মামলা করা হয়েছে।

নাজুমল আবেদিনের প্রতিষ্ঠান তিনটির বর্তমান অবস্থা এবং পোশাক খাতের ব্যবসায়ী হয়ে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ২৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

(ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/এনআই/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :