প্রিয়া সাহাকে স্যালুট...
প্রিয়া সাহাকে স্যালুট করবেন হয়তো যদি আপনি তার ৩৫ মিনিটের সাক্ষাৎকারটি শোনেন। তিনি বলেছেন: বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যান তথ্য বলছে ১৯৪৭ সালে এ ভুখন্ডে ২৯.৭% সংখ্যালঘু ছিল, ২০১৯ এ তা ৯.৭%। যদি সেদিন থেকে একটা লোকও তাদের জন্মভুমি না ছেড়ে যেত তবে হারিয়ে যাওয়া লোকের পরিমান ৩৭ মিলিয়ন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আমন্ত্রণে একটা সেমিনারে গেছেন যেখানে একটা পেপার প্রেজেন্ট করেছেন, সুতরাং সব তথ্য তার হাতে ছিল।
২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় এল বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলে হিন্দু সম্প্রদায় ও আওয়ামী লীগের ওপর হত্যা, নির্যাতন ব্যাপক ধর্ষণ, জ্বালাও পোড়াও হয়নি? ৯৪ দিনব্যাপী সে ঘটনা ঘটেনি? সে কথা তৎকালীন বিরোধী নেত্রী (বর্তমান প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ও ফোরামে বলেননি? (সে ভিডিও ও খবরের রেকর্ডসহ প্রফেসর মুনতাসির মামুন ও শাহরিয়ার কবিরকে সরকার ধরে নির্যাতন করেনি?) তিনি বলেন, যা সত্য তা অকপটে সবখানে বলা তো আমি শেখ হাসিনা থেকে শিখেছি।
* আমার বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা, জগদিশ বিশ্বাস, বরিশালে কমান্ডার ছিল। মুক্তিযুদ্ধের এ দেশ আমার দেশ। আমি লড়াই সংগ্রাম করে এখানেই থাকবো, কেন আমেরিকায় ইমিগ্রেন্ট হবো?
* ২০০৪ সালে আমার গ্রাম ফিরোজপুরে ৪০ ঘর সংখ্যালঘু ছিল, এখন ১৩ ঘর আছে। বাকীরা গেল কই খবর নেন। যান সেখানে। সেটা তৎকালীন এমপি দেলোয়ার হোসেন সাইদির এলাকা। ২০০৪ সালে জামাত নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবর রহমান শামীম এর নেতৃত্বে গ্রামের হিন্দুদের ৩০০ একর জমির ফসল তুলে নেয়, অন্তত একশ পুকুরের মাছ ধরে নিয়ে যায়। আমার ঘর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের ঘর, সে ঘর পুড়িয়ে দেয়। তখন অন্তত ৫০টা পত্রিকায় সে খবর হয়েছিল। সেটা ২০০৪ সালের ২ মার্চের ঘটনা। ২২ শে এপ্রিল ২০১৯ এ আবার আক্রমণ হয়েছে আমার গ্রামে। খবর তো সবাই কভার করেছে।
* কারা এসব আক্রমণ করে? যে সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে সে সরকারের লোকরা।
* আমি বলিনি এদেশের সব মুসলিমরা অত্যাচার করে বা সবাই সাম্প্রদায়িক। বরং ২০০৪ সালে আমার ঘর যখন পুড়িয়ে দেয় তখন একজন সুহৃদ মুসলিম টেলিফোনে আমাকে সে খবরটি দেয় এবং সে অন্তত ত্রিশ মিনিট কেঁদেছিল। অধিকাংশ মুসলিম সাম্প্রদায়িক না, অল্প কিছু এসব ঘটনা ঘটায়। তারা মৌলবাদী। সরকার মৌলবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতিও জিরো টলারেন্স। তাদের শুনতে সমস্যা কি? বরং দুই সরকার মৌলবাদের বিরুদ্ধে একসাথে কাজ করবে।
* সরকারের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে ২০১১ সালে প্রফেসর আবুল বারাকাত একটি গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেন জনাকীর্ণ অনুষ্ঠানে। সেখানে তিনি দেখান, বাংলাদেশে দৈনিক ৬৩২ জন লোক নাই হয়ে যাচ্ছে। তারা কোথায় হারাচ্ছে সব আপনারা জানেন। খোঁজ নেন।
* গত মাসেও সাতক্ষীরা থেকে অনেক পরিবার চলে গেছে, সেটা বিভিন্ন খবরে এসেছে, খবর নেন। নাসির নগর, রামু, শাওতাল পল্লি, অভয় নগর, ২০০১, ৮৯, ৯২, প্রতিটা নির্বাচনের আগে পরে অত্যাচার হয়েছে। কেবল শেখ হাসিনা সরকার সময়ে নির্বাচনের আগে পরের হামলা কমেছে।
* তিনি বলেন, ৯০ সাল থেকে তিনি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদে কাজ করছেন, এখন সাংগঠনিক সম্পাদক। যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর অনেক ব্যক্তিত্বকে একটি ট্রেনিং এর আমন্ত্রণ করে। বঙ্গবন্ধুও সে আমন্ত্রণে একবার গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, তিনি সে আমন্ত্রণেও ২০১১ সালে ট্রেনিংয়ে যান যুক্তরাষ্ট্রে। বহুবার গেছেন। এবার তারা একটা কর্মসুচীতে বার বার ইমেইল করে ডেকেছে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সংগঠন থেকে যাননি।
* তাহলে সরকার মামলা করার জন্য বলছেন বা আপনাকে নিয়ে এত বিরূপ সমালোচনা হচ্ছে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিয়া সাহা বলেন, প্রকৃত ঘটনা সরকার জানবে আশা করি, তখন তার বিরুদ্ধে কোনো একশন নিবে না বলে মনে করেন। তিনি বলেন, কতিপয় লোক সরকারকে ভুল বুঝিয়ে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে উদ্দেশ্যমুলকভাবে।
* এটা আমার দেশ, এদেশের কোনো অমঙ্গল হোক তা আমি চাইবো কেন? হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সাথে দেখা হবে এটা আমাদের কারো জানা ছিল না। হঠাৎ জানালো প্রেসিডেন্ট আসছে, আপনারা কথা বলতে পারেন। অনেকে কথা বলছে, আমিও তাৎক্ষণিক একটা সুযোগ নিয়েছি মাত্র।
* গ্রীণকার্ড পেতে ট্রাম্পের সাথে দেখা করতে হবে কেন? এটা হাস্যকর কথা।
* ৩০ লাখ শহীদের ও ২ লাখ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এদেশ গড়েছিলেন। ১৯৭৫ তাকে হত্যার পর দেশ পাকিস্তানী ধারায় ফিরে যায়। ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম করে দেশকে সাম্প্রদায়িক করা হয়। কিভাবে সে দেশকে অসাম্প্রদায়িক বলে! হিন্দু বৌদ্ধ খিষ্টান অসাম্প্রদায়িক সংগঠন। কর্মসুচীতে তার প্রমাণ।
* অবশ্যই দেশে ফিরবো। ফিরবো না কেন। আশা করি দেশবাসি ভুল বুঝাবুঝি থেকে বেরিয়ে আসবেন। ঐক্যবদ্ধভাবে
ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/এসকেএস