শরীয়তপুরে ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি

শরীয়তপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২২ জুলাই ২০২০, ২২:২২

শরীয়তপুরে চারটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। শরীয়তপুর জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবিব বলেন, বুধবার বিকালে পদ্মা নদীর পানি নড়িয়ার সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, যে এলাকায় বসতবাড়ি পদ্মায় ভাঙনে পড়েছে সেই সব এলাকায় তিন প্যাকেজে ২০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে আরো প্রয়োজন হলে জিও ব্যাগ ফেলানো হবে। এ কারণে নদীর তীর উপচে উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানি শরীয়তপুর জেলার ৪টি উপজেলায় মধ্য শরীয়তপুর সদর, জাজিরা, নড়িয়া ও ভেদেরগঞ্জ উপজেলাসহ ৮০টি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে।

গ্রামগুলোতে বন্যার পানি প্রবেশ করে প্রায় ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ওই সকল মানুষ খাবার ও খাবার পানির এবং গো-খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

বন্যার পানিতে নড়িয়া ও জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে যাতায়াতের পাঁচটি পাকা সড়ক তলিয়ে গেছে। জেলার চারটি উপজেলার সড়ক তলিয়ে যাওয়া জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

এদিকে বৃষ্টি ও বন্যার পানি বাড়তে থাকলে তিনটি উপজেলার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়বে। গত সোমবার থেকে পদ্মার ভাঙন বন্যা এলাকা পরিদর্শনে আসেন শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম।

তিনি নড়িয়া বন্যার পানিবন্দি মানুষের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ করেন।

এ সময় পানিসম্পদ উপমন্ত্রী শামীম বলেন, বন্যা ও বর্ষাকে সামনে রেখে আগামী প্রস্তুতি লক্ষ্যে আমরা করোনা সঙ্কটেও কাজ অব্যাহত রেখেছি। বন্যা পানি প্রবেশ করার পর থেকে জেলা প্রশাসকসহ সকল কর্মকর্তার সাথে আমরা নিয়মিত কথা বলেছি। সকল উপজেলা প্রশাসন জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে মানুষের পাশে থেকে কাজ করছে। মানবতার নেত্রী প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদসহ সকল নেতাকর্মী পাশে থেকে কর্মীর মত কাজ করে যাচ্ছি। নদী ভাঙন-বন্যার্তদের পাশে আমরা ছিলাম, এখনো আছি। তারেক জিয়া বিদেশে বসে আছে, তারা মানুষের দুর্যোগে পাশে নেই।

এ দিকে পালং-জাজিরা সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপু রবিবার জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট ও জাজিরা ইউপিতে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

হঠাৎ করে পানিবন্দি মানুষ চরম বিপদে পড়েছে। ওই সকল গ্রামের মানুষ বন্যার পানির কারণে বাড়ি ঘরে আটকা পড়েছেন। অনেকের ঘরেই শুকনা খাবার নেই। পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্না করতে উঁচু মাচাং ও নৌকা ব্যবহার করতে হচ্ছে। গ্রামগুলোতে খাবার পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

শনিবার বিকাল থেকে নড়িয়া-জাজিরা সড়ক, নড়িয়া-পাঠানবাড়িও ইশ্বরকাঠি-জাজিরা সড়ক, নড়িয়া-আন্দারমানিক ও পোড়াগাছা-জাজিরা সড়ক, নড়িয়া ইশ্বরকাঠি সড়ক-বিলাশপুর-জাজিরা সড়ক ও নড়িয়া-মোক্তারেরচর-বিলাশপুর সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ার ফলে নড়িয়া উপজেলার সাথে জাজিরা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে যাতায়াত বন্ধ হয়ে গেছে। জরুরি প্রয়োজনে মানুষ নৌপথে ট্রলার ও নৌকায় যাতায়ত করছেন।

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশাফুজ্জামান ভুইয়া বলেন, জাজিরা নাওডোবা মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্টে হঠাৎ পদ্মার পাড়ে বসত ভিটে বাড়ি ভাঙন বন্যার পানি নেমে এসে বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পানিতে তলিয়ে বন্দি হয়ে পড়েছে।

নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়ন্তী রুপা রায় বলেন, পদ্মার তীরবর্তী গ্রামগুলোর সড়ক বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানিতে নড়িয়ার-জাজিরা যাতায়াতের বিভিন্ন সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ বিপাকে পড়েছেন। অনেক স্থানের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের আরও দুর্ভোগ বেড়েছে।

নাওডোবা ইউনিয়নের মাঝিকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আলতাফ হোসেন খান বলেন, এক সপ্তাহ যাবত ঘরে পানি। পরিবারের সদস্য ও গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছি। বাড়ির আঙ্গিনায় উঁচু করে গবাদি পশু রাখতে হয়েছে। আর টিনের ঘরের দোতালায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আশ্রয় নিতে হয়েছে।

জাজিরার আকনকান্দি গ্রামের বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন আকন বলেন, এলাকার সকল পানির নলকূপ তলিয়ে গেছে। অনেক দূরের থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে রান্না করতে। জ্বালানি কাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে, রান্নাঘর তলিয়ে গেছে। এখন নৌকায় বসে রান্নার কাজ করতে হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ত্রাণ সহায়তা বন্যা দুর্গতদের মাঝে বিতরণ শুরু করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুতির কাজ চলছে। পদ্মার ভাঙন এলাকায় জরুরিভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলীকে। পানিবন্দি প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ত্রাণের আওতায় আনা হবে। নড়িয়া ১৬০ মেট্রিক টন, জাজিরায় ২১০ মেট্রিক টন, শরীয়তপুর সদর ৭০ মেট্রিক টন ও ভেদেরগঞ্জ উপজেলায় ৩০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, এছাড়া শুকনা খাবার ২০০০ হাজার প্যাকেট যা ইতোমধ্যে বিতরণ কাজ শুরু হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :