আম্পানের দুই মাস: এখনো প্রতাপনগরে বসতবাড়িতে পানি ওঠে

এম. বেলাল হোসাইন, সাতক্ষীরা
 | প্রকাশিত : ২২ জুলাই ২০২০, ২৩:৩০

সুপার সাইক্লোন আম্পানের দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখনো বসতবাড়িতে জোয়ার-ভাটায় পানি ওঠা নামা করে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের বাড়িতে। দুর্যোগের দু মাসেও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি তারা। জোয়ারের সময় পানিতে তলিয়ে যায় বসতবাড়ির এক তৃতীয়াংশ। ভাটায় আবার সরে যায়। ফলে কোনো উপায় না পেয়ে বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে ঘরের মধ্যে থাকা খাটের সঙ্গে রাস্তা-ভেড়ির সংযোগ করেছেন। এভাবে চরম দুর্বিসহ জীবন-যাপন করছেন সেখানকার মানুষ। বাড়ির উঠানে পানি, ঘরেও পানি। একইসঙ্গে আছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।

আশাশুনি উপজেলার প্রত্যন্ত ইউনিয়ন প্রতাপনগরের সুভদ্রাকাটি, কুড়িকাউনিয়া, শ্রীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গেলে এসব চিত্র চোখে পড়ে।

আম্পান তান্ডবে আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের নাকনা, কুড়িকাউনিয়া, দিঘলার আইট ও চাকলা, আশাশুনি সদর ইউনিয়নের বলাবাড়িয়া দয়ারঘাট ও জেলেখালী বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। দুই মাস অতিবাহিত হলেও এসব এলাকার অধিকাংশ স্থান এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। আম্পানের পর থেকে এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণে নামে। প্রতাপনগর ইউনিয়নের ভাঙন কবলিত চাকলা, কুড়িকাউনিয়া, হরিষখালী ও দিঘলাই আইটের মধ্যে হরিষখালীতে বড় ভাঙনের স্থানটি বাঁধা হলেও সেটি পুনরায় ভেঙে যায়। এছাড়া কুড়িকাউনিয়া ও চাকলায় এখনো বাধা হয়নি। একটি ছোট ভাঙন বাঁধা হলেও বড় ভাঙনের এলাকা দিয়ে জোয়ারের সময় পানি উঠে আবার ভাটায় সরে যায়। ফলে আম্পানের দুই মাস অতিবাহিত হলেও এখানকার ভেড়িবাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।

ভুক্তভোগীরা ভেড়িবাঁধ নির্মাণ না হওয়ার পেছনে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনকে দায়ী করে বলেন, স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভেড়িবাঁধ নির্মাণের প্রায় এক তৃতীয়াংশ কাজ সম্পন্ন করা হয়। বাকি অংশের কাজ করতে গেলে চেয়াম্যান বাধা দিয়ে বলেন এখানে কেউ কারো কাজ করার প্রয়োজন নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করবে। ওই রাতেই জোয়ারের ধাক্কায় পুরো ভেড়িবাঁধটা আবার ভেঙে যায়। এ কারণে এই এলাকার শত শত মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আর দুষিত পানির সঙ্গে বসবাসের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে সেখানকার মানুষ। বিশেষ করে যোগাযোগ অবস্থার চরম অবনতি হয়েছে সেখানে।

ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঠিকাদারের কারণেই ওই বাঁধটি ভেঙেছে। এছাড়া দুই মাসেও ওই ঠিকাদার ৩৬৪ মিটার ভাঙনে বাঁধ দিতে পারেনি।

ঠিকাদার কামরুজ্জামান সোহাগ বলেন, গত ২৪ জুন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্দেশে আমি বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করি। তাহলে দুই মাস হলো কিভাবে। তারপরও কাজ শুরুর পর মনে করেছিলাম ১৩ জুলাই চাপান দিতে পারবো। কিন্তু লোকবল এবং পরিবহন সংকট থাকায় পারিনি।

ঠিকাদার বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাঁধ পরিদর্শনে এলে চেয়ারম্যান জাকির হোসেন সেই দিনই চাপান দিতে বলেন। আমি দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে চেয়ারম্যান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বোঝাতে সক্ষম হন চাপান না দিলে চার-পাঁচটি ক্লোজার তৈরি হবে। এতে ক্ষতির পরিমান আরো বাড়বে। নেতারা চেয়ারম্যানের কথায় আমাকে চাপান দিতে বলেন। চাপান দেয়ার পর জোয়ারে পানি উঠে এবং ভাটার সময় আমাদের চেম্বার ভেঙে বেরিয়ে যায়। এতে আমার প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তারপরও আমরা নতুন করে কাজ শুরু করেছি। আশা করছি দ্রুতই বাঁধ নির্মাণ করে মানুষকে পানি বন্দি দশা থেকে মুক্ত করতে পারবো।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু সরকার বলেন, আমরা মানুষকে পানিবন্দি দশা থেকে মুক্ত করতে ১১টি পয়েন্টে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ভেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে সেনাবাহিনীও হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের মূল লক্ষ্য জনগণকে পানিবন্দি দশা থেকে মুক্ত করা।

(ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :