আলোকিত জেলা- পর্ব ১

কেন আজ আলোকিত ফরিদপুর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২০, ১৩:৩৯ | প্রকাশিত : ২৩ জুলাই ২০২০, ১২:০৮

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। মাত্র এক যুগ আগে যদি ফিরে যাই, তাহলে দেশের প্রাচীনতম জেলা শহর ফরিদপুরের চিত্র ঠিক কেমন ছিল? এ জনপদ এতটাই অবহেলিত ছিল যে দেশের অন্য অঞ্চলের মানুষ এ জেলাকে ‘ফকিরপুর’ নামে উপহাস করত। সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবেও পরিচিত ছিল ফরিদপুর।

সেই দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকে ২০০৮ সালের পর। আজ ফরিদপুর জেলা দেশের এক উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে দেশের জেলাগুলোর মধ্যে শীর্ষ পাঁচে ফরিদপুর। সন্ত্রাস নির্মূলের মাধ্যমে এখন শান্তির জনপদ এটি।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও দেড় দশক আগের দৃশ্যপট আজকের মতো ছিল না ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের। পিছিয়ে ছিল বর্তমান ক্ষমতাসীন দল। ২০০৮ সালে আসনটি আওয়ামী লীগের ঝুড়িতে আসায় পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সেবার নির্বাচনের আগে ডিসেম্বর মাসে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় তার দলীয় প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে নির্বাচিত করলে ফরিদপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব তিনি নিজে নেবেন। শেখ হাসিনা ফরিদপুরবাসীকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। আর তাই ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের প্রচেষ্টায় বদলে গেছে সব। উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা এলাকা এখন আধুনিক নগর। ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে জনসমর্থনেও।

এর আগে বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত জিতে এমনকি মন্ত্রী হয়েও এলাকার উন্নয়নে কী করেছেন, সেটা বলতে পারেন না তার ভক্তরাও।

ফরিদপুরবাসীর দুর্ভাগ্য হয়তো, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে নিজ দলের অনেক নেতার চরম অসহযোগিতায় পরাজিত হয়েছিলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। কিন্তু ফরিদপুরকে নিয়ে দেখা তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি পিছু হটেননি। প্রতিটি গ্রামে গিয়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে মিশে গেছেন। তার সুফলও তিনি পেয়েছেন। ২০০৮ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের মধ্য দিয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

দিনবদলের যাত্রা হয়েছিল তখনই। নানা ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে বারবার সবাইকে শেখ হাসিনার দিনবদলের সনদ বাস্তবায়নে দেশসেবায় নিয়োজিত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন এই বর্ষীয়ান নেতা। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ যে দুর্ভেদ্য তা তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন। দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে তিনি নিরলস পরিশ্রম করছেন।

প্রথমবার সংসদ সদস্য হওয়ার পর স্থান পান মন্ত্রিসভাতেও। শুরুতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেকর্ড ভোটের ব্যবধানে পুনরায় নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে।

প্রমিথিউসের মতো আগুন এনে ফরিদপুরকে গড়ে তুললেন আধুনিক রূপকথার নগরীতে। বিগত ৪০ বছরে ফরিদপুরের যত গ্লানি ও জরা ছিল, তা দূর করে গড়ে তোলেন আধুনিক সভ্য ফরিদপুর। জ্ঞান-বিজ্ঞান, চিকিৎসা, খেলাধুলা, আইন-শৃঙ্খলা, সামাজিক সচেতনতাসহ আধুনিকতার সব কটি সূচকে এগিয়ে থেকে একদশকে তার নেতৃত্বে ফরিদপুর হয়ে উঠল এক বিস্ময়কর আধুনিক নগররূপে।

দেশাত্মবোধ, জনসেবার ধ্যানজ্ঞান আর মেধা-বুদ্ধির শুভ আলোর স্পর্শে ফরিদপুরকে স্বপ্নসংকল্পে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদকসহ সব অপরাধ পদদলিত করে তিনি গণমানুষের এক অমর স্লোগান হয়ে ওঠেন।

কিন্তু তার এই যুদ্ধসংগ্রামের সাহসী পথে তৈরি হয় ষড়যন্ত্র। নানা প্রতিকূলতাকে সততা আর ভালোবাসার সজল বরষায় নির্মল আর স্বাচ্ছন্দ্যের ধারায় সর্বজনীন করে তোলেন ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সবাইকে ভেদাভেদ ভুলে উদাত্ত আহ্বান জানান একসাথে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শরিক হতে।

ভালোবাসার অপার মহিমায় বিরোধীকেও তিনি আপন করে নেন। ফরিদপুরকে বদলে দেবার যে অনবদ্য প্রেরণা সেখানে, তিনি আপোষহীনভাবে কাজ করে যেতে থাকেন। এই যে তার ফরিদপুর গড়ার পণ সেই অবস্থান থেকে তাকে বিচ্যুত করতে পারেনি আজও কেউ। কেবল বৃহত্তর ফরিদপুরই নয়, গোটা বাংলাদেশে তার স্বাদৈশিক কর্মযজ্ঞ ছড়িয়ে পড়েছে আপন ধারায়।

ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ফরিদপুরের গণমানুষের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি একটি মাস্টারপ্লান তৈরি করে এই জেলাকে গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। ফরিদপুরের অর্থনীতি, কৃষি, সংস্কৃতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসা, কর্মসংস্থানসহ সব ক্ষেত্রে প্রকল্পভিত্তিক উন্নয়ন বাস্তবায়ন শুরু করেন। অনুন্নত ফরিদপুর ক্রমাগতভাবে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে যেতে থাকে। গ্রামীণ জনপথ আর শহরের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে সমানতালে তিনি মানুষের জীবনকে উন্নয়নের শীর্ষে আনতে শুরু করেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে এ জেলার মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন ঘটে। বদলে যাওয়া ফরিদপুর হয়ে ওঠে দেশের উন্নয়নের রোল মডেল।

রাজনৈতিক বৈষম্যে ফরিদপুর অঞ্চলকে বিগত দিনের রাজনৈতিক সরকারগুলো পদ্ধতিগতভাবে পেছনে ফেলে রেখেছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মভূমি ফরিদপুর হওয়ায় এ জেলার উন্নয়নে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রকল্প ছিল না। দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণতা ভেদ করে বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসায়। একের পর এক সব বিপর্যয় কাটিয়ে দেশ স্বনির্ভরতায় এগিয়ে যেতে থাকে। বিশ্বে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গৌরবের ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে। আর এরই মাঝে দেশের সমৃদ্ধ জেলার তালিকায় সামনের দিকে স্থান করে নেয় ফরিদপুর।

এ জেলার মানুষের প্রাণস্পন্দনে আসতে থাকে সাফল্য ও সমৃদ্ধি। ফরিদপুরকে একের পর এক উন্নয়নের নক্ষত্রলোকে উজ্জীবিত করতে থাকেন জেলার গণমানুষের নেতা তখনকার এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। নির্বাচনে জয়ী হবার পর ফরিদপুরবাসীর বিশেষ করে নদীপারের মানুষের দীর্ঘদিনের দুঃখ-দুর্দশা পদ্মা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেন। কয়েক শ কোটি টাকা ব্যয়ে ফরিদপুর শহরের সিঅ্যান্ডবি ঘাট এলাকা থেকে সুদূর চরভদ্রাসন হাজিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত পদ্মার তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ করান। কৃষি উন্নয়ন ও গ্রামীণ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে অসংখ্য সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ করেন।

তিনি দীর্ঘদিনের বন্ধ থাকা রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পুনরায় আধুনিকায়নের মাধ্যমে সচল করেন। কর্মসংস্থানের লক্ষে শহরতলীর লক্ষীপুর চুনাঘাটা এলাকায় গড়ে তোলেন মেরিন একাডেমি এবং বাইপাস সড়কে টেক্সটাইল কলেজ।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন ফরিদপুর শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নির্মাণ করেন রোড ডিভাইডার। শহরের বায়তুল আমানে গড়ে তোলেন টিচার্স ট্রেনিং কলেজ। চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে ৭০০ বেডে উন্নীত করেন। দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাজেন্দ্র কলেজকে শিক্ষা ও অবকাঠামোগতভাবে উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের আবাসিক সংকট দূরীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

পল্লীকবি জসীম উদদীনের সাতিহ্যকে সংরক্ষণের জন্য গোবিন্দপুরে একটি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা নির্মাণ করেন। শিশুদের মননশীলতা বিকাশে ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল করতে ফরিদপুর শিশু ও শিল্পকলা একাডেমিকে নতুন রূপে গড়ে তোলেন। বেকার সমস্যা নিরসনে কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। (আগামীকাল দ্বিতীয় পর্ব)

(ঢাকাটাইমস/২৩জুলাই/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :