‘চাইল চাই ন্যা, আমাগেরে কাম দ্যান’

ফরিদপুর প্রতিনিধি
ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২০, ১৭:০৭ | প্রকাশিত : ২৩ জুলাই ২০২০, ১৭:০১

ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ধলার মোড় এলাকার বাসিন্দা কৃষক বাচ্চু শেখ (৫৫)। বন্যায় তার ঘরের মধ্যে কোমর সমান পানি উঠেছে। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় হলো তিনি পাশের বেরিবাঁধে উঁচু সড়কের উপর পলিথিন আর বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী ছাউনি বানিয়ে স্ত্রী ও তিন সন্তান এবং পালের গরু, ছাগল ও হাস-মুরগি নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘পানির ধারে মাচান বাঁধছি। তার উপরেত্যা সমানে পানি ঝড়তিছে। এদিকে চাইরদিকে পানি থাকায় কাজ পাইতেছিনা। পরিবার নিয়্যা কষ্টে দিন কাটাইতে হইতেছে। চাইল আর শুকন্যা খাবারে কয়দিন চলবে? এহন আমরা আর এই চাইল চাই ন্যা, আমাগেরে কাম দেন।’

বাচ্চু শেখ জানান, সড়কে আশ্রয় নেওয়ার পর এ পর্যন্ত একবার এলাকার চেয়ারম্যান কিছু চাল আর শুকনো খাবার দিয়ে গেছে। তাতে তো আর সকলের পেট বাঁচে না বলে তার আক্ষেপ।

শহরের আলিয়াবাদ ইউনিয়নের বর্দ্ধিত পৌরসভার ২৫ নং ওয়ার্ডের হরিসভার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব নারী নুরজাহান বেগম বলেন, ‘হঠাৎ কইর‌্যা বানের পানিতে ঘর-বাড়ি তলায় গেছে। ঘরের মাল-ছামানাও কিছু বাইর করতি পারি নাই। পাঁচজন ছাওয়াল-মাইয়ার সঙ্গে গরু-বাছুর নিয়্যা রাস্তার উপর পলিথিন আর বাঁশের বেড়া দিয়্যা ঘর তুইল্যা রইছি। এখন কয়ডা টিন পাইলে ঘরডা তুলতি পারতাম।’

শহরের টিবি হাসপাতাল মোড় হাসপাতাল মোড় থেকে পূবদিকে চলে গেছে গুচ্ছ গ্রামের সড়ক। যেখানে শুধুই হতদিরদ্র পরিবারের বাস। এই বন্যায় ঘর-বাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় এসব পরিবার এসে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু সড়কে। পানিতে ঘর-বাড়ি ডুবে যাওয়ায় সড়কে আশ্রয় নেয়া এক পরিবারের গৃহিনী আছিয়া বেগম বলেন, ‘গত পাঁচদিন হইলো এহেনে (রাস্তায়) উঠছি। একবার চিড়্যা আর মুড়ি দিছিলো। তারপর আর কেউর দেখা নাই। এহন কি কইর‌্যা দিন চলবি আমাগের।’

জানা গেছে, পদ্মার পানি বেড়ে ফরিদপুরের সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার চরাঞ্চলে প্রথমে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করে। এরপর গত চার পাঁচদিনে বিভিন্নস্থানে পানি বেড়ে বাঁধ ভেঙ্গে পড়ায় প্লাবিত হয়েছে এসব উপজেলার আরো বিস্তীর্ণ এলাকা। এছাড়া আড়িয়াল খাঁ ও কুমার নদের পানি বেড়ে বিভিন্ন খাল-নালা দিয়ে পানি প্রবেশ করেছে পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গা ও নগরকান্দা উপজেলাতেও।

জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী জেলার পাঁচটি উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের দেড় শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় এক লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি।

জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বন্যার্তদের মাঝে পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে। বানভাসীদের জন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৫৫০ মেট্রিক টন চাল,৭ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও নগদ ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে বরাদ্দ আরো বাড়ানো হবে ববলেও জানান তিনি।

এদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের ২৫ নং ওয়ার্ডে হরিসভার বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেওয়া প্রায় পাঁচ শতাধিক বন্যার্তদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ।

জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি শওকত আলী জাহিদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বন্যার্তদের মাঝে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। আমাদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

এছাড়া যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ফরিদপুর বিভাগীয় সহসভাপতি মাহবুবুল হাসান পিংকু আলিয়াবাদ ইউনিয়নের সাদিপুর এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।

(ঢাকাটাইমস/২৩জুলাই/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :