আমার স্ত্রী, দুই কন্যা যখন কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত...

প্রকাশ | ২৪ জুলাই ২০২০, ১২:৪২ | আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২০, ১৯:৩৫

আরিফুর রহমান দোলন

আমায় নিয়ে সীমাহীন মিথ্যাচার করে চরিত্রহনন করে যে বা যারা তালি বাজাচ্ছেন অচিরেই তারা আত্মঘাতী গোলে সৃষ্টির নিয়মে পরাজিত হবেন। চরমভাবে হতাশ হবেন। এবং ডিজিটাল আইনে ক্রমাগত অপরাধ করার কারণে আইনের মুখোমুখি হবেন। ভাড়াটিয়া ওইসব চরিত্রহননকারীদের পৃষ্ঠপোষকতাকারী, প্ররোচনাদানকারীরাও অনেকেই চিহ্নিত হয়ে গেছেন। চরিত্র হনন চেষ্টার মাধ্যমে আমাকে বারংবার হেয় করার অপচেষ্টাকারী আপনি সম্পর্কে যা-ই হননা কেন, এখন থেকে আপনি, আপনারা আপনাদের কর্মের কারণে যে সম্মান, মর্যাদা আর পুরস্কার পাওয়ারযোগ্য ঠিক তাই পাবেন। কে কাকে ফোনে টেক্সট আর মেসেঞ্জারে উস্কানি দিয়ে আমার বিরুদ্ধে সামাজিক গণমাধ্যমে একের পর এক পোস্ট দিয়ে গুজব ছড়াচ্ছেন এবং এরপর মজা লুটছেন তা কিন্তু গোপন থাকছেনা। আপনাদেরকে কি বলবো? আপনারা মানুষ? না-কি মানুষের চেহারারূপী অন্য কিছু? আমার চরিত্রহনন চেষ্টাকারী আর তাদের পৃষ্ঠপোষকেরা, আপনারা এতটাই দেউলিয়া হয়ে গেছেন যে আমার সদ্য মৃত বাবা, চাচা, দাদা, প্রপিতামহকেও নির্লজ্জ মিথ্যাচার, গুজব রটনা প্রচার করে চলেছেন।

তবে দিনশেষে আপনাদের ষড়যন্ত্র, গুজব আর মিথ্যাচারের জবাব সৃষ্টিকর্তা থেকে পেয়ে যাবেন। অতীতের মতো।
আমার বাবা এএফএম ওবায়দুর রহমান রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ছিলেন। মৃত এই মানুষটিকে অসম্মানিত করতে তাকে পিওন পরিচয় দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েই ক্ষান্ত হননি, বিভিন্ন সংস্থায় চিঠি দিয়েছেন। হাস্যকর! দিনশেষে প্রমাণ হবে আপনারা কতটা নীচ! অতীতেও কিন্তু এসব করে সুবিধা করতে পারেননি অপপ্রচারকারী গংরা। ঈর্ষাপরায়ণ গংরা আপনাদের মুখোশ খসে পড়বে এই মিথ্যাচারের জন্যেই। যা সব প্রচার আর অপ্রচার করছেন এসব যেসব কম্পিউটারে কম্পোজ হয়ে তা বিভিন্ন জায়গায় যায়, যাচ্ছে তারা কিন্তু আপনাদেরই খুঁজছে-তাদের মূল্যবান সময় আর মনোযোগ বারবার নষ্ট করে দিচ্ছেন এই কারণে। নোংরা অপপ্রচার করে আমাকে হয়রানি করবেন ভেবে ক্রমাগত ষড়যন্ত্র যারা করে চলেছেন তাদের মুখোশ খসে পড়লো বলে।

তবে এসব নোংরা অপপ্রচার সহ্য করার নামই যদি সমাজকর্ম, রাজনীতি হয় তাহলে সেই সহ্য ক্ষমতা আমার হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠিত জাতীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্টজনদের হেয় করতে কুচক্রীমহল যেভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবে নানা পোস্ট দেয় ঠিক সেই কায়দা আমার ক্ষেত্রে বেছে নিয়ে যারা নিজেদের গাটের পয়সা খরচ করছেন তারা আয়নায় ভালো করে নিজেদের চেহারাটাও দেখে নেবেন। দিনশেষে আপনাদের চেহারা সাধারণ মানুষের সামনে উন্মোচিত হবে।

আমার প্রপিতামহ মরহুম কাঞ্চন মুন্সী অনেক প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে আলফাডাঙ্গা উপজেলার প্রথম মাধ্যমিক বিদ্যালয় কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৯৩৭ সালে। প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠায় পুরো জমি দান করেছিলেন। কবরস্থান, ঈদগাহ’র জন্য কোটি টাকার সম্পত্তি দান করেছিলেন। ব্রিটিশ আমলে অজপাড়াগাঁয়ে চ্যারিটেবল ডিসপেনসারি (পরবর্তীতে হাসপাতাল) প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের কলকাতায় নিয়ে গিয়ে শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। হাজার হাজা গরিব, দুঃখী, দুস্থ মানুষকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছেন, নানাভাবে সাবলম্বী করে তুলেছেন। গোটা অঞ্চলে মানবতার ফেরিওয়ালা ছিলেন কাঞ্চন মুন্সী। তাঁর বড় ছৈলে আমার দাদু মরহুম মুন্সী বজলুর রহমান উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্র। যিনি বাবার মতো মানুষের সেবায় নিয়োজিত থেকেছেন আমৃত্যু। দাদুভাই নিজের খুলনার বাড়িতে বসবাস করলেও নিয়মিত গ্রামে যাতায়াত করে মানুষের খোঁজখবর নিতেন। খুলনার বাড়িতে রেখে এলাকার কত শিক্ষার্থীকে যে উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বিএল কলেজসহ অন্যত্র সেটা তৎকালীন মুরব্বিরা খুব ভালোভাবেই অবগত। উপকারভোগীদের দু-একজন আত্মীয় সেইসব অবদান ভুলে গিয়ে অতিমাত্রায় ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার আর অপপ্রচারে লিপ্ত হলেও সৃষ্টিকর্তাই আপনাকে আপনার জায়গায় বসাবে।

প্রপিতামহ, দাদুভাইয়ের পথ অনুসরণ করে পারিবারিক সমাজকর্মকে আরও এগিয়ে নিতে ছাত্রজীবন থেকেই সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত করি। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী ছাত্রলীগের আলফাডাঙ্গা থানা কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ছিলাম দশম শ্রেণীতে পড়াকালীন। ঢাকা কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পড়াকালীন উত্তর ছাত্রাবাস ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হই। আওয়ামীলীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা সৈয়দ আবদুল আওয়াল শামীম তখন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি, আর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য গোলাম রাব্বানী চিনু সাধারণ সম্পাদক। এরপর কলকাতায় অধ্যয়নকালে আমরাই প্রথম গঠন করি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, প্রবাসী পশ্চিমবঙ্গ শাখা। বর্তমানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু ছিলেন প্রধান অতিথি। ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না ছিলেন উদ্বোধক। আবৃত্তিকার শাহাদাত হোসেন নিপুকে সভাপতি, দেবাশীষ হালদারকে সাধারণ সম্পাদক আর আমাকে প্রথম যুগ্ম সাধারণ করা হয়।

লেখাপড়া শেষ করে পুরোমাত্রায় সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়ে প্রথম আলো, বাংলাদেশ প্রতিদিন, আমাদের সময়, বাংলাভিশন টেলিভিশন এ বিভিন্ন পদে কাজ করেছি। পরবর্তীতে গত ৯ বছর ধরে ঢাকা টাইমস ও এই সময় পত্রিকার সম্পাদক। শায়খ আবদুর রহমানসহ বহু জঙ্গির মুখোশ উন্মোচন করেছি, অসংখ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছি বারবার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। অনেকবার বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের মাধ্যমে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার পেয়েছি। হুমকি-ধমকিও পেয়েছি। মামলাও মোকাবিলা করেছি।
নানামুখী চ্যালেঞ্জ নিতে ব্যবসা-বাণিজ্যেও যুক্ত আছি দীর্ঘ সময় ধরে।

পেশাগত, সামাজিক কর্মকাণ্ডে সমান সক্রিয় থাকার পাশাপাশি মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার আগে ও পরে নিজ জন্মভূমির উন্নয়নে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করে রাস্তাঘাট, অবকাঠামো, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা মন্দিরের উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি নিঃস্বার্থভাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অবদানে আজ আমাদের গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি)। এমন অনেক প্রতষ্ঠিানের স্বপ্ন আজ বাস্তবায়নে কাজ করছি নিরলসভাবে। সুবিধাবঞ্চিত মানুষেরা আস্থা রাখছে। আর তাই পেছন থেকে ছুরি মারতে, আমাকে দমিয়ে দিতে শুরু হয়েছে বহুমুখী ষড়যন্ত্র। মিথ্যার বেসাতি দিয়ে চরিত্রহনন করছে মুষ্টিমেয় কুচক্রিরা, আর এখানে ওখানে নোংরা সব অভিযোগ দিয়ে আমাকে হয়রানি করতে উঠেপড়ে লেগেছে। সর্বশেস সংসদ নির্বাচনের আগে এভাবে একতরফা করেছে। আমি পুরোপুরিভাবে রাজনীতিতে নামার পরপর করেছে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র অসফলই থেকেছে। তবু ঈর্ষাপরায়ণ মতলববাজরা সক্রিয়, তৎপর আমার এবং আমাদের ভালো কাজের বিরুদ্ধে। সময় এসেছে একে একে তাদের মুখোশ উন্মোচন করার। আর রুখে দাঁড়াবার। কদাকার, কুৎসিত মুখের আড়ালে কতিপয় ভদ্রবেশীদের মুখোশ খসে পড়লো বলে।

অনেক সুধীজন, বিশিষ্টজনকে নিয়ে অনবরত কুৎসিত, নোংরা অপপ্রচার আর চরিত্রহনন হয়। প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) থেকে শুরু করে আমাদের প্রিয় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ অনেক জাতীয় নেতাও বিভিন্ন সময় ষড়যন্ত্র, কুৎসা মোকাবিলা করেই পথ চলেছেন। চরিত্র হননকারী, কুচক্রীদের বলছি পারলে কিছু ভালো কাজ করে দেখান।
আর হ্যাঁ, আমি কিন্তু ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে এ পর্যন্ত টিকে আছি। তাই আমাকে নতুন করে মৃত্যুর ভয় দেখাবেন না।

পরিশেষে বলি, আমার স্ত্রী, দুই কন্যা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। তারা কোভিড-১৯ এর সাথে যুদ্ধ করছে। আমার এই সময়ে যারা আমাকে অতিমাত্রায় আঘাত করার চেষ্টা করে উল্লাসে মেতে উঠতে চাইছেন ভুলে যাবেন না, সৃষ্টিকর্তা ঠিকই প্রতিদান দেন।

লেখক: সম্পাদক, দৈনিক ঢাকা টাইমস, ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম এবং সাপ্তাহিক এই সময়।