কোরবানিতো দূরের কথা সেমাই নিয়েই সংশয়

রানা আহমেদ, সিরাজগঞ্জ
 | প্রকাশিত : ২৪ জুলাই ২০২০, ১৩:২২

বন্যায় সিরাজগঞ্জের পাঁচ উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। তাদের দিন কাটছে খেয়ে না খেয়ে। ভিজিএফ, ভিজিডি ও বয়স্ক ভাতার অনুদানই তাদের সম্বল। তাও আবার কখনো পান, কখনো পান না। এ অবস্থায় ঈদের আর কয়েকদিন বাকি থাকলেও তাদের মাঝে নেই কোনো আনন্দ।

বন্যার্তরা বলেন, ‘দু’বেলা দু’মুঠো পেটের ভাতই জোগাড় করতে পারি না। সেখানে ঈদের আনন্দ করার চিন্তা আনব কি করে। ঈদকে সামনে রেখে মানুষ যখন আনন্দ নিয়ে ব্যস্ত তখন আমরা ঘর-বাড়ি রক্ষা করা নিয়ে ব্যস্ত। সামনের দিনগুলা কেমনে চলমো সেই চিন্তায় আইতোত (রাতে) ঘুমেই আইসে না। এইবার বন্যায় আমাগো সর্বস্বান্ত করল। কোরবানি দেওয়া তো দূরের কথা ঈদের দিন পরিবারকে একটু সেমাই খাওয়াতে পারব কিনা জানি না।’

জানা গেছে, জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী ৩৩টি ইউনিয়নের ২১৬টি গ্রামের এক লাখ ৫৯ হাজার ১৫৩জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে তিন লক্ষাধিক মানুষ। চরে বসবাসকারী প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের সবাই বেঁচে আছে সরকারি-বেসরকারি কিংবা বিভিন্ন এনজিও’র দেওয়া ত্রাণের উপর নির্ভর করে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেঁচে থাকার তাগিদে যে যা পারছে তাই করে কোনোরকম জীবিকা নির্বাহ করছে। আবার কেউ কেউ অনাহারে-অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

শাহজাদপুরের কৈজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, কৈজুরি ইউনিয়নে বেশিরভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর। মৌসুমী খেতে ভালো ফসল হওয়ায় এলাকার মানুষ স্বচ্ছল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু এ বছর বন্যার পানি উঠায় মানুষের ঘরে রাখা ধান-চালও নষ্ট হয়ে গেছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রণজিৎ কুমার জানান, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, উঁচু স্থান ও স্কুল ঘরে আশ্রিত এবং বন্যা কবলিত এলাকার বসতবাড়িতে থাকা পানিবন্দী মানুষগুলোর শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন সমস্যা ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। পানি কিছুটা কমলেও ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে যমুনা পাড়ের এ মানুষগুলো।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, বন্যায় সিরাজগঞ্জে পাঁচ উপজেলার ৩০টি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ এবং পাঁচটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ২২০টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১ হাজার ৬০টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৬৮৪ পরিবার ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায় রয়েছে। এদিকে কোরবানি ঈদের আর বাকি মাত্র সপ্তাহ খানেক। এর মধ্যে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও দুভোর্গের কারণে ঈদের আনন্দ নেই বানভাসিদের মাঝে।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (ডিডি) হাবিবুল হক জানান, সিরাজগঞ্জে চরবাসীর বসবাসকারী মানুষের একমাত্র সম্বল চাষাবাদ। বন্যার কারণে তারা চাষাবাদ করতে পারছে না। এবার জেলার বন্যা কবলিত পাঁচটি উপজেলার ১১১৭ হেক্টর জমির পাট, তিল ও আখ পানিতে ডুবে ক্ষতি হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৪জুলাই/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সারাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :