চাঁদপুরে মেঘনার ভাঙন অব্যাহত, হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি

চাঁদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ জুলাই ২০২০, ১৯:৩১

চাঁদপুরে মেঘনা নদীর ভাঙন ও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে নদীভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ। নদীর তীরবর্তী দুই পাড়ের চরাঞ্চলসহ হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।

সেখানে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে কষ্ট পাচ্ছে পানিবন্দি মানুষ। রয়েছে গবাদি পশুর খাবারের সঙ্কটও। সান্ধ্যকালীন জোয়ারে মেঘনার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে থাকলে এখানকার মানুষেরা আতঙ্কের মধ্যে থাকছে।

চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে ঘরবাড়ি, হাজার হাজার বিঘা আবাদি জমি হারিয়ে মানুষ হচ্ছে নিঃস্ব।

নদীপাড়ের প্রবীণ লোকদের অনেকেই জানান, তাদের এলাকায় এমন ভয়াবহ ভাঙন ইতিপূর্বে দেখেননি তারা। নদীর ভাঙনে গত এক সপ্তাহে হাইমচরে চর এলাকার পাঁচটি গ্রাম নদী ভাঙনের কবলে বিলীন হয়ে গেছে। চাঁদপুর সদরের হানারচর, ইব্রাহিমপুর, আলুবাজার বিস্তীর্ণ এলাকা নদীতে নিয়ে গেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ভাঙন পরিস্থিতি রাজরাজেশ্বরে। লক্ষ্মীরচর, জাহাজমারা গ্রাম নিশ্চিহ্ন। পদ্মার ভাঙনে অবশেষে বিলীন হয়ে গেছে নবনির্মিত তিনতলা বিশিষ্ট রাজরাজেশ্বর ওমর আলী হাইস্কুল ও সাইক্লোন শেল্টার। দৃষ্টিনন্দন এই ভবনটি নদীর ভাঙনের মুখে বেশ কিছুদিন দাঁড়িয়ে থাকার পর সেটি আর রক্ষা পায়নি। বৃহস্পতিবার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ভবনটি।

অন্যদিকে সন্ধ্যাকালীন জোয়ারে মেঘনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুর শহরের অনেক জায়গার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু সড়ক, কলেজ রোড, বেগম মসজিদ সিএসবি খালের রাস্তা, রহমতপুর কলোনী, বড় স্টেশন মাদ্রাসা রোড, পুরাণবাজার কলেজ, মৈশালবাড়ি রাস্তাসহ শহরের অনেক রাস্তায় জোয়ারের পানি উছে থৈ থৈ করায় শহরবাসী আতংকের মধ্যে থাকতে হচেছ।

ইউপি চেয়ারম্যান হাজী হযরত আলী বেপারী জানান, তার ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ডের সাত শতাধিক বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে। একমাত্র সাইক্লোন শেল্টারটিও বৃহস্পতিবার ভাঙন থেকে রক্ষা পেলো না।

হাইমচর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারী বলেন, তার উপজেলার হাইমচর, নীলকমল ও গাজীপুর এ তিনটি ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে ভাঙছে। মধ্য চরে নদী ভাঙনের ব্যাপকতায় অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্যে নির্দিষ্ট করা জায়গাটিও এখন হুমকির মুখে। ভাঙন রক্ষায় সেখানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা জরুরি হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, হাইমচর উপজেলা নদীবেষ্টিত। মেঘনার পানি জোয়ারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। শতাধিক বাড়ি উচুস্থানে হওয়ায় মানুষের বাড়ি ঘরে পানি উঠলেও ভাটায় আবার নেমে যায়।

চাঁদপুর সদরের ১২নং চান্দ্রা ইউপি চেয়ারম্যান খানজাহান আলী কালু পাটোয়ারী বলেন, তার ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী বাখরপুর ও দক্ষিণ বালিয়া গ্রামের প্রায় আট হাজার পরিবার পানিবন্দি। রাস্তাঘাটের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ফসলি জমি পানির নিচে। বিষয়টি তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড, চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী বাবুল আক্তার বলেন, গত কয়েক দিনের চেয়ে শুক্রবার সকালে জোয়ারে পানির পরিমাণ আগের চাইতে বেশি ছিল। জোয়ারে পানি বৃদ্ধি ৪ দশমিক ৫৫ সেন্টিমিটার এবং বিকালে জোয়ারে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৪ দশমিক ৬১ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়।

তিনি আরো জানান, শহর রক্ষা বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার জন্যে চার হাজার বালুভর্তি বস্তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঈদের আগে শহর রক্ষা বাঁধের মোলহেড ও পুরাণবাজার অংশে কিছু বালুর বস্তা ডাম্পিং করা হবে।

তিনি আরো জানান, চাঁদপুর সদরের হানারচর, রাজরাজেশ্বর, ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের আলুরবাজার, হাইমচরের মাঝের চর ও ঈশানবালা নদী ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে মেঘনা-ধনাগোদা পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানান, ধনাগোদা নদীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এখানে পানির ডেঞ্জার লেভেল অতিক্রম করেনি। গত পরশু আমরা পুরো এলাকা ঘুরে দেখেছি, কোথাও সমস্যা হয়নি। বেড়িবাঁধের বাইরে এবং চরাঞ্চলের অনেক গ্রামে পানি উঠেছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। অন্যদিকে সিলেট, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোণা, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরিয়তপুর ও ঢাকা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/২৪জুলাই/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :