শৌচাগারের অভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে জামালপুরের বানভাসি নারীরা

প্রকাশ | ২৭ জুলাই ২০২০, ১৬:০৮ | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২০, ১৬:২৯

সাইমুম সাব্বির শোভন, জামালপুর

বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে চাহিদার তুলনায় শৌচাগারের সংখ্যা কম থাকায় চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে জামালপুরের বানভাসি নারীরা। দীর্ঘ সময় মল-মূত্র ত্যাগ করতে না পারায় গ্যাস্ট্রিক, গোপনাঙ্গে সংক্রমণসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তারা। তবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে ও নারীদের সচেতন করতে মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

এদিকে জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বন্যাকবলিত এলাকায় ৪৯টি ভাসমান বা অস্থায়ী শৌচাগার স্থাপন করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। তাই শৌচাগারের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে বলে জানায় অধিদপ্তরটি।

জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় জামালপুরের ৫৯টি ইউনিয়নের  ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭০৭ জন মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার ১ হাজার ৩৫৮ বর্গকিলোমিটারের বাড়িঘর, রাস্তাঘাটসহ সবকিছুই। সেইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হযেছে ৬ হাজার ২৯৫টি ল্যাট্রিন। ১৬ হাজার ২৮৪ জন আশ্রয় নিয়েছে সাত উপজেলার ৯০টি আশ্রয় কেন্দ্রে। বাকি পানিবন্দি পৌনে ১০ লাখ বানভাসি আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন উঁচু সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে।

কিন্তু এসব উঁচু সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশিরভাগ জায়গায় অস্থায়ী শৌচাগার নেই। লোক লজ্জার কারণে দিন শেষে রাতের অন্ধকারে খোলা জায়গায় মল-মূত্র ত্যাগ করতে হয় ওইসব স্থানে আশ্রয় নেওয়া নারীদের। এতে পরিবেশ দূষণসহ দীর্ঘ সময় মল-মূত্র ত্যাগ করতে না পারায় চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা।

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে ইসলামপুর উপজেলায় ২১টি, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ২৪টি, বকশিগঞ্জ উপজেলায় তিনটি এবং সরিষাবাড়ি উপজেলায় একটি অস্থায়ী শৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি তিন উপজেলায় কোনো অস্থায়ী ল্যাট্রিন নির্মাণ করা হয়নি।

মাদারগঞ্জ উপজেলার বালিজুরি ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের বাতাসী বেগম জানান, তাদের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছেন। এখানের একটি জায়গায় প্রায় অর্ধশতাধিক নারী রাতের বেলা মল-মূত্র ত্যাগ করে। যা দিনের বেলা তাদের প্রয়োজন হলেও লোকলজ্জার কারণে করতে পারেন না। এতে অনেক কষ্ট পোহাতে হচ্ছে তাদের। তারা এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারি সহায়তার দাবি জানান।

ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নের একটি সড়কে আশ্রয় নিয়েছে অনেক বন্যাকবলিত মানুষ। সেখানকার বাসিন্দারা জানান, এতো লোকের জন্য মাত্র একটি ভাসমান ল্যাট্রিন দেওয়া হয়েছে। এতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে তাদের। তারা আরো ল্যাট্রিন স্থাপনের দাবি জানান।

এ বিষয়ে জামালপুরের সিভিল সার্জন প্রণয় কান্তি দাস জানান, বন্যাকবলিত নারীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে ৫৯টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। 

জেলা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক জানান, চাহিদার তুলনায় ল্যাট্রিনের সংখ্যা অনেক কম। তাই আরো ল্যাট্রিন স্থাপনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৭জুলাই/পিএল)