শেরপুরে ব্রহ্মপুত্রের পেটে যাচ্ছে অগণিত বাড়ি-ঘর

শেরপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ জুলাই ২০২০, ১৬:৪৮

শেরপুরে হুহু করে বন্যার পানি বাড়তে থাকায় অগণিত বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। বন্যার কড়াল গ্রাসে বাস্তুভিটা হারিয়ে ১০-১২ হাজার মানুষ পার্শ্ববর্তী জেলা জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। ওই মানুষগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে বাস করছে। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে অবস্থান নিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় দফায় পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই আরো অবনতির দিকে যাচ্ছে।

এছাড়া সোমবার সকাল থেকে অবিরাম বৃষ্টিতে জেলা শহরের সব রাস্তা-ঘাট পানিতে ডুবে যায়। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। অনেকের বাড়িতে হাঁটু সমান পানি হয়। এ অবস্থায় শহরবাসীরাও নিদারুণ কষ্টে পড়েছে।

সোমবার দুপুরে পাউবোর উপ-সহকারি প্রকৌশলী (এসএই) জিয়াসমিন খাতুন বলেন, সদর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর চেল্লাখালি, ভোগাই ও নাকুগাঁও নদীর পানি এখনও বিপদসীমার নিচে রয়েছে। এর আগে ১৯ জুলাই থেকে টানা দুই দিন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার তিন সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী ইউপি চেয়ারম্যান আকবর আলী বলেন, প্রথম দফার বন্যায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকার ২০-২৫টি বাড়ি বানের পানিতে বিলীন হয়ে যায়। আর সোমবার সকাল থেকে তুমুল বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় অগণিত বাড়ি নদীতে বিলীন হচ্ছে। এছাড়া তার ইউপির ১৭টি গ্রামই বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। এর মধ্যে ভাগলগড় এবং বেপারীপাড়া গ্রাম দুটি এখন পানির নিচে। ওই গ্রামের প্রায় ১২ হাজার মানুষ এখন জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।

প্রথম দিকে বানভাসীদের ত্রাণ সহায়তায় ছয় মেট্রিকটন চাল বিতরণ করেছেন। এবার জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে চার মেট্রিকটন চাল পাওয়ার কথা রয়েছে বলে তিনি জানান। এসব ত্রাণ সামগ্রী ৪০০ অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করা যাবে বলে তিনি জানান।

বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চরমোচারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে ওই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম শিপন জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বন্যার্তরা কষ্টে থাকলেও এখন পর্যন্ত তাদের হাতে পৌঁছায়নি ত্রাণ সামগ্রী।

ভাগলগড় গ্রামের সোবহান মিয়া বলেন, ব্রহ্মপুত্রের পেটে গেছে বাড়ি ঘর। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। প্রবল বৃষ্টি থেকে বাঁচতে পলিথিন দিয়ে ঘর বানিয়ে তারা অস্থায়ীভাবে থাকছেন।

তিনি আরো বলেন, আমরা দিন মজুরি করে খাই। নাই জমি, নাই টাকা পয়সা এ অবস্থায় আমরা সকলেই খুব কষ্টের মধ্যে আছি।

ষাটোর্ধ বৃদ্ধা নছিমন বলেন, নদীয়ে বাড়ি ঘর সব ভাইঙ্গা নিয়া গেছে। আমার এহন কিছুই নাই। বুড়া সোয়ামী (স্বামী) নিয়া পইড়া রইছি। ছেলে মেয়েও নাই, যে আমগরে দেখবো।

অন্যদিকে শেরপুর-জামালপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পোড়ারদোকান ও শিমুলতলীর দুটি কজওয়েতে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হওয়ায় শেরপুরের সাথে উত্তরাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। আর এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বন্যার পানি দেখতে এসে নাঈমুর রহমান নাঈম (২৪) নামে এক স্কুল শিক্ষক গত দুই যাবত নিখোঁজ রয়েছেন। শেরপুর ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এখনও তার সন্ধান পায়নি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ওয়ালিউল হাসান বলেন, মাঝখানে বন্যার পানি কমে যায়। কিন্তু আজ তা আবার বেড়েছে। তিনি বলেন, বন্যার্তদের সহায়তায় ১৫০ মেট্রিক টন চাল ও আড়াই লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮৫ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া আরো বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এ পর্যন্ত জেলায় ১৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

(ঢাকাটাইমস/২৭জুলাই/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :