ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে কে আসছে?

হাসান শান্তনু
| আপডেট : ২৮ জুলাই ২০২০, ১২:২৭ | প্রকাশিত : ২৮ জুলাই ২০২০, ১২:১৩

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। মন্ত্রিসভায় আসন্ন রদবদলের সময় তাঁকে সংস্কৃতি বা গুরুত্বপূর্ণ অন্য মন্ত্রণালয়ের পূর্ণমন্ত্রী হিসেবেও দেখা যেতে পারে। সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে এমন আলোচনা আছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে ওই মন্ত্রণালয়ের নতুন মন্ত্রী নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় আছে এক দশকের বেশি সময় ধরে। সময়ের বিচারে একটা দশক খুব গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে কোনো রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ ধারণ করে একটা প্রজন্ম গড়ে উঠার বেলায়। বিরোধীদলে থাকাকালেও দলটি একটা দশকের প্রজন্মকে যেভাবে ধর্মান্ধতা, উগ্রতা থেকে প্রগতিশীল আদর্শে দীক্ষিত করতে পেরেছে বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, গত এক দশকে তা সেভাবে পারেনি।

উগ্রবাদের সঙ্গে কখনো কখনো আপস, প্রগতিশীল আদর্শের পক্ষে দল ও সরকারের কারো কারো স্পষ্ট অবস্থান না থাকা, কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা সেজন্য দায়ি। ধর্মসহ অন্য কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে এখন সরকার কাজে লাগাতে চাচ্ছে। শ্রদ্ধেয় মোকতাদির চৌধুরীর মতো সৎ, সংস্কৃতিবান, ধর্ম বিষয়ে প্রাজ্ঞ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির রাজনীতিবিদকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়ার কথা সেজন্যই ভাবছে সরকার।

রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই মোকতাদির জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক। ধর্মীয় গবেষণা ও উন্নয়নকাজ এগিয়ে নিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মতো প্রত্যেকটি ধর্মের জন্য আলাদা ফাউন্ডেশন গঠনের যে দাবি দীর্ঘ বছর ধরে জানিয়ে আসছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ, মোকতাদির ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিলে তা পূরণ হবে, এ আস্থা রাখাই যায়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার পর মোকতাদিরের মতো প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নিয়ে ভয়ানক ঘুঁটিবাজি করেছিলো ‘কর্পোরেট জার্নালিজম’। আরেকজনের সংসদীয় আসনে সংঘটিত ওই বর্বর ঘটনায় তাকে জড়িয়ে একটি পত্রিকা ‘উদ্ভট সূত্রের’ উদ্ধৃতি দিয়ে ‘প্রতিবেদন’ প্রকাশ করে।

ঘটনার চারদিন পর ৩ নভেম্বর পত্রিকাটি লেখে, ঘটনার পর তখনকার স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী ছায়েদুল হকের (প্রয়াত) সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথা হয়েছে। অথচ ৫ নভেম্বর বিবিসি বাংলার শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ছায়েদুল হক জানান, ‘নাসিরনগরের ঘটনা নিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কোনো কথা হয়নি’ (সূত্র: বিবিসি বাংলা, ৫ নভেম্বর, ২০১৬ খ্রি.)।

ঘটনার পর মোকতাদির চৌধুরীকে কথিত অভিযুক্ত করার খেলার পরপর ফেসবুকে লিখেছিলাম, সাম্প্রদায়িক খেলায় তিনি হেরে গেলে হেরে যাবে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর ১৯৭২ সালে দুর্গাপূজায় টেকনাফ থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত রাত ৮ টায় একই সময়ে পূজামণ্ডপ আক্রান্ত হয়। এরপরের সব বর্বরতাসহ নাসিরনগরের ঘটনা ওই সবেরই ধারাবাহিকতা। আমার ওই লেখার সঙ্গে শ্রদ্ধেয় দুই সাংবাদিক বেলাল বেগ ও আহমেদ নূরে আলম সহমত পোষণ করেছিলেন।

হামলার পর নাসিরনগর এলাকার তখনকার সাংসদ ছায়েদুল হক বলেছিলেন- ‘মালাউনের বাচ্চারা বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে। আর এ ঘটনাকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে প্রচার করে অতিরঞ্জিত করেছে সাংবাদিকরা। অথচ ঘটনা কিছুই নয়’ (দৈনিক ভোরের কাগজ, ০৩.১১.'১৬ খ্রি.)। যদিও তিনি পরে তা অস্বীকার করেছিলেন। নাসিরনগরে সরেজমিনে গিয়ে ভোরের কাগজের জন্য সাংবাদিক অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য দাদা প্রতিবেদনটি লিখেছিলেন। তিনি যখন দৈনিক বাংলাদেশের খবরে ছিলেন, তখনও তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম প্রতিবেদনটির বিষয়ে। তিনি এর সত্যতা নিশ্চিত করেছিলেন।

লেখক: সাংবাদিক

ঢাকাটাইমস/২৮জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :