সৈয়দপুরে চাল না পাওয়ায় দেড় হাজার পরিবারের বিক্ষোভ

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৯ জুলাই ২০২০, ২২:১৪

নীলফামারীর সৈয়দপুরে স্লিপ জমা দিয়ে পাঁচ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ভিজিএফ’র চাল না পাওয়ায় প্রায় দেড় হাজার দরিদ্র পরিবার বিক্ষোভ করেছে। বুধবার দুপুরে উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদ ঘেরাও করে এ বিক্ষোভ করেছেন তারা।

এসময় উপজেলা প্রশাসন পরিস্থিতি শান্ত করতে চারশ জনকে চাল দেওয়ার আশ্বাস দিলেও বিক্ষুব্ধ জনতা তা মানতে নারাজ। তারা স্লিপ জমা নিয়ে চাল না দিয়ে স্লিপ পুড়িয়ে ফেলা ও চাল বিক্রির অভিযোগ তুলে চেয়ারম্যানের শাস্তির দাবি জানান।

এদিকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করায় অবস্থা বেগতিক দেখে ইউপি চেয়ারম্যান ও সচিব সটকে পড়েছেন।

এলাকাবাসী জানায়, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত তিন দিন যাবৎ পরিষদে ৯ হাজার ৯৯৮ জন হতদরিদ্রের মাঝে ভিজিএফ’র চাল বিতরণ কার্যক্রম চলছে। তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার সকাল ৭টায় পরিষদ চত্বরে এসে উপস্থিত হয় চালের স্লিপপ্রাপ্ত প্রায় দেড় হাজার মানুষ। তাদের লাইনে দাঁড় করিয়ে ইউপি সচিবের নেতৃত্বে চেয়ারম্যানের লোকজন প্রত্যেকের কাছ থেকে স্লিপ তুলে নেন। কিন্তু এক ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও চাল দেয়া শুরু না করায় উপস্থিত লোকজনের মাঝে অস্থিরতার সৃষ্টি হলে তাদের জানানো হয়, যত লোক এসেছে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় চাল নেই। তাই নতুন করে চাল না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এরপর আরও প্রায় দুই ঘন্টা পার হলেও চাল দেওয়ার কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। এতে জনতার মাঝে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। তারা খোঁজ নিয়ে জানতে পারে নতুন করে কোনো চাল আনা হবেনা। বরং তাদের থেকে স্লিপ তুলে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে এবং চাল দেয়া হবেনা। এসময় জনগণ আবারও চাপ দেওয়ায় চাল এলে পরে দেওয়া হবে জানিয়ে তাদের বাড়ি চলে যেতে বলা হয়।

এরপর লোকজন তাদের স্লিপ ফেরত দেয়ার দাবি জানালে বলা হয়, আমাদের কাছে তালিকা আছে সে অনুযায়ী সবাই চাল পাবেন।

এ কথায় উত্তেজনা সৃষ্টি হলে ইউপি সচিব ও চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন, বরাদ্দ চাল শেষ হয়ে গেছে। চালের পরিবর্তে প্রত্যেককে ১৫০ টাকা করে দেওয়া হবে তা নিয়ে চলে যান।

এ ঘোষণায় পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। অবস্থা বিরূপ আঁচ করতে পেরে কৌশলে ইউপি সচিব রহিদুল ইসলাম ও চেয়ারম্যান এনামুল হক চৌধুরী সটকে পড়েন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চাল বিতরণে নিয়োজিত ট্যাগ অফিসার উপজেলা সমবায় কর্র্মকর্তাকে আটকে ফেলে বিক্ষুব্ধ জনতা।

এরপর তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবু হাসনাত সরকার ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাতেও পরিস্থিতি শান্ত করা সম্ভব হয়নি।

চাল না পাওয়া পরিবারগুলোর অভিযোগ, স্লিপ প্রতি ১০ কেজির পরিবর্তে আট কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। তারপরও সবাই কেন চাল পাচ্ছেনা। চেয়ারম্যান মেম্বাররা চাল গোপনে বিক্রি করে দিয়েছে। এছাড়া নিজস্ব লোকদের স্লিপ দিয়ে চাল উত্তোলন করেও পাচার করা হয়েছে। এ কারণে এখন স্লিপধারীরা চাল পাচ্ছেনা। ট্যাগ অফিসার যোগসাজশ করে এমন পরিস্থিতি দাঁড় করিয়েছে বলে অভিযোগ তাদের। ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতেই কার্ড প্রতি দুই কেজি চাল কম দেওয়া হলেও তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ওই পরিবারগুলো।

এ বিষয়ে সচিব রহিদুল ইসলাম জানান, ‘চাল পায়নি এমন প্রায় চারশ পরিবারের তালিকা আমরা করেছি।’

এদিকে ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বলেন, ‘আমরা কয়েকটি ইয়াতিমখানায় চাল দিয়েছি। তাই হিসেবটা একটু এদিক ওদিক হতে পারে। মাত্র এক থেকে দেড়শ মানুষ চাল পায়নি। তাদের আগামীকাল চাল দেওয়া হবে।’ স্লিপ নিয়ে পুড়িয়ে ফেলার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি জানান, এ ধরণের কিছুই করা হয়নি।

ট্যাগ অফিসার মশিউর রহমান জানান, মূলত বরাদ্দ অনুযায়ী চাল দেওয়া হয়েছে। হিসেব অনুযায়ী এখন চারশ জন চাল পাবে। কিন্তু উপস্থিত হয়েছেন প্রায় দেড় হাজার লোক। এত লোকের চাল তো মজুদ নেই।

বরাদ্দ অনুযায়ীই তো স্লিপ দেয়া হয়েছে, তাহলে কেন স্লিপধারীরা চাল পাচ্ছেনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি জানিনা। চাল কীভাবে শেষ হয়েছে তাও আমার জানা নেই।’

অন্যদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, এবার উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ভিজিএফ’র চাল এলএসডি গোডাউন থেকে একযোগে উত্তোলন করতে হবে এবং তা ২/৩ দিনে বিতরণ করবে ইউপি চেয়ারম্যানরা। সে অনুযায়ী ২৭ জুলাইয়েই চাল ইউপি ভবনে চলে গেছে। কিন্তু তারপরও ২৯ জুলাই এসেও মানুষ চাল পাচ্ছেনা। এটাই প্রমাণ করে যে, অসৎ উদ্দেশে চাল পাচার হয়ে থাকতে পারে। অবশ্যই তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

ইউএনও নাসিম আহমেদ বলেন, ‘কেন পরিবারগুলো চাল পায়নি এর জবাবে ট্যাগ অফিসার বলেছেন, চাল শেষ হয়ে গেছে। এ ব্যাপারে মৌখিক কোন মন্তব্য গ্রহণ করা হবেনা বলে ট্যাগ অফিসারের কাছে লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছি। প্রতিবেদন সন্তোষজনক না হলে চেয়ারম্যান ও ট্যাগ অফিসারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৯জুলাই/পিএল)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :