অসহায় কৃষক আর প্রান্তিক খামারিদের বাঁচাতেই এবারের কোরবানি

প্রকাশ | ৩০ জুলাই ২০২০, ১৪:৩৬

আসিফ আকবর

বাংলাদেশে কারা বারবার মরে ? এককথায় উত্তর- কৃষক। বন্যা খরা অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টির সব চাপ গিয়ে পড়ে আমাদের কৃষকের উপর। আমি একটি  গৃহস্থ পরিবার থেকে বেড়ে উঠেছি। খুব কাছে থেকে দেখেছি তৃণমূল কৃষক কিভাবে ধীরে ধীরে নি:স্ব হয়ে যায়।

পরিবারের মুখের অন্ন যোগাতে ধানি জমি বসতভিটা হালের গরু বিক্রি করে একসময় হাত পাতে দাদন ব্যাবসায়ীর কাছে। তারপর আক্রান্ত হয় সুদের করাল থাবায়। আমি নিজে দেখেছি একটি একটি স্বচ্ছল গৃহস্থ পরিবার কিভাবে সব হারিয়ে কপর্দকশূন্য হয়েছে। কাছের মানুষকে যেন মুখ দেখাতে না হয় তাই দুরে গিয়ে রিক্সা চালায়। যে ঘরে আগে হতো মেহমানদারি সেই ঘরের মালিক আজ হতদরিদ্র।

আমরা ঢাকায় বসে হাজার হাজার কোটি টাকার উড়ে যাওয়ার গল্প শুনি। গরীব কৃষকের জন্য কুম্ভীরাশ্রু পতন চলছে নিরবধি। চকচকে কোট টাই পরিহিত তথাকথিত সমাজ চিন্তকরা আকন্ঠ দূর্নীতিতে ডুবে কৃষকের ভাগ্যন্নোয়নের গল্প বলে যাচ্ছে। অনর্গল মিথ্যায় খোদার আরশ কেঁপে ওঠে, তবুও তাদের প্রহসন বন্ধ হয়না।

ফসলের দাম পায় না, ঋণের আষ্টপৃষ্ঠ থেকে বেরুতে পারেনা। মুখে খাবার নেই শিক্ষাতো সুদুর পরাহুত ব্যাপার। কামার, কুমার, জেলে, তাঁতী পেশা পরিবর্তন করে কোথাও কিছু করবে সেটাও পারছেনা, কারন সে অন্যকিছু শিখেনি। শহরের মানুষের কাছে তারা অপাংক্তেয় চাষার দল। চাটার দলের মায়াবী যাদুর খপ্পরে আটক কৃষাণীর চোখে সীমাহীন শূন্যতা।

করোনার নতুন পরিস্থিতিতে অসহায় মানুষ মুখোমুখি হয়েছে সর্বনাশা বন্যার। আসন্ন কোরবানির ঈদ নিয়ে পড়েছে বিপাকে। পশু রাখা যাচ্ছেনা, হাটেও বিকোচ্ছে না। নীরব কান্নার রোল প্রতিটি খামারীর ঘরে। আমিও ভেবেছিলাম এবার কোরবানি দেব না, খরচটা বিতরণ করে দেব। একজন ইসলামিক স্কলারের বক্তব্য শুনে সিদ্ধান্ত বদলেছি।

অসহায় কৃষক আর প্রান্তিক খামারিদের বাঁচাতে হলে পশু কোরবানি দেওয়া প্রয়োজন। নইলে বানভাসী মানুষের খাদ্য আর পশুখাদ্যের সংকট কাটিয়ে ওঠা মুশকিল। একটা অনুরোধ থাকবে- হাটে গিয়ে তাদের প্রতি সদয় থাকুন আল্লাহর ওয়াস্তে। আসুন এই কোরবানির পশুর সাথে মনের পশু কোরবানি দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। এই চূড়ান্ত দুঃসময়ে আমরা সবাই মানবিক হয়ে উঠি। ভালবাসা অবিরাম।

লেখক: কণ্ঠশিল্পী

ঢাকাটাইমস/৩০জুলাই/এসকেএস